সিরাজগঞ্জ সদর ও কামারখন্দ উপজেলা নিয়ে গঠিত সিরাজগঞ্জ-২ আসন। এটি জেলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আসন। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সম্ভাব্য প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়েছে। এ আসনে বরাবরই এগিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। অন্যদিকে মাঠে ছুটছেন জামায়াতের প্রার্থী মুহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম। আগামী নির্বাচনে এ আসনে দীর্ঘদিনের জোটসঙ্গী বিএনপি ও জামায়াত যে ভোটের লড়াইয়ে মুখোমুখি হচ্ছে তার আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
অতীত ইতিহাস থেকে জানা যায়, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ১৯৮৬ ও ২০০১ সালে এ আসন থেকেই সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। পরে ২০০৮ সালে আইনি জটিলতায় তিনি নির্বাচন করতে পারেননি। ওই সময় তার স্ত্রী জেলা বিএনপির বর্তমান সভাপতি রুমানা মাহমুদ নির্বাচিত হন। এরপর ২০১৪ ও ২০১৮ সালের বিতর্কিত একতরফা নির্বাচনে ডা. হাবিবে মিল্লাত ও সর্বশেষ ২০২৪ সালের ডামি ভোটেও আওয়ামী লীগের জান্নাত আরা হেনরী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এর আগে ১৯৯১ সালে বিএনপি থেকে মির্জা মুরাদুজ্জামান ও ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের মোহাম্মদ নাসিম এ আসনে নির্বাচন করে জয়ী হন।
গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বদলে গেছে ভোটের মাঠের সমীকরণ। নয়া সমীকরণে আলোচিত হচ্ছে আগামী নির্বাচনে এ আসনে মুখোমুখি হচ্ছে বিএনপি-জামায়াত। উভয় দল নিজ নিজ ভোটব্যাংকের বাইরে সাধারণ ভোটারদের কাছে টানার চেষ্টা করছে। সেই হিসেবে দলের পাশাপাশি প্রার্থীর ব্যক্তি ইমেজও ফ্যাক্টর। ফলে প্রার্থী মনোনয়নে দূরদর্শিতার ওপর জয়-পরাজয় নির্ভর করবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বদলে গেছে ভোটের মাঠের সমীকরণ। নয়া সমীকরণে আলোচিত হচ্ছে আগামী নির্বাচনে এ আসনে মুখোমুখি হচ্ছে বিএনপি-জামায়াত। উভয় দল নিজ নিজ ভোটব্যাংকের বাইরে সাধারণ ভোটারদের কাছে টানার চেষ্টা করছে। সে হিসেবে দলের পাশাপাশি প্রার্থীর ব্যক্তি ইমেজও ফ্যাক্টর। ফলে প্রার্থী মনোনয়নে দূরদর্শিতার ওপর জয়-পরাজয় নির্ভর করবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কেন্দ্র করে ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ছাড়াও আসনটিতে বিএনপির একাধিক প্রার্থী রয়েছে। তারা হলেন- বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির তাঁতী বিষয়ক সম্পাদক ও জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন ইসলাম খান, স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল হাসান এবং জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ও সাবেক পৌর মেয়র মোকাদ্দেস আলী।
- আরও পড়ুন
- বিএনপিতে গ্রুপিং-কোন্দল, মাঠে ছুটছেন জামায়াতের বুলবুল
- বিএনপির ঘাঁটিতেও প্রভাব বেড়েছে জামায়াতের
- বিএনপির চ্যালেঞ্জ জামায়াত-ইসলামী আন্দোলন
তবে এরা নিজেকে প্রার্থী দাবি করলেও নির্বাচনী এলাকায় তেমন তৎপরতা নেই। বিএনপিতে একাধিক প্রার্থী ও নিজেদের মধ্যে অন্তঃকোন্দলের কারণে তারা কিছুটা বেকায়দায়। পতিত স্বৈরাচারের দোসর হওয়ায় জাপার প্রার্থীও প্রকাশ্যে আসতে পারছেন না। আসনটিতে এনসিপি প্রার্থীরও কোনো আনাগোনা নেই। তবে বিএনপির অঘোষিত একক প্রার্থী ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। দলীয় নেতাকর্মী ছাড়াও সাধারণ মানুষ আগামীতে টুকুকেই এমপি হিসেবে দেখতে চান।
অন্যদিকে এ আসনে জামায়াত মনোনীত প্রার্থী জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মুহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম। তিনি পৌর জামায়াতের সেক্রেটারি ও জেলা ছাত্রশিবিরের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। গত ১৭ বছরে তিনি একাধিক মামলার আসামি ও একাধিকবার কারাবরণ করেন। তবে স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর নিয়মিতভাবে সভা ও সমাবেশ করছেন। তার ছবি সংবলিত ফেস্টুন ও ব্যানারে ছেয়ে গেছে পুরো নির্বাচনী এলাকা।
- আরও পড়ুন
- ১৮ বছর পর ফেরা তুহিনের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী জামায়াত
- লাখের বেশি হিন্দু ভোটারের মন জয়ে তৎপর বিএনপি-জামায়াত
- প্রার্থী নিয়ে কোন্দল মিটেছে বিএনপির, সুযোগ খুঁজছে জামায়াত
গুরুত্বপূর্ণ এ আসনটি দখলে নিতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন জামায়াতের একক প্রার্থী মুহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, এতদিন দলের নেতাকর্মীরা গায়েবি মামলার আসামি ছিল। কিন্তু অভ্যুত্থানের পর সবার মনোবল চাঙা হয়েছে। আমাদের সাংগঠনিক অবস্থা এখন অত্যন্ত দৃঢ়। তারা প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় মহিলা কর্মীসহ দলের কর্মীরা মানুষের কাছে শান্তির বার্তা পৌঁছে দিচ্ছেন। যারা হিংসা-হানাহানি ও চাঁদাবাজি করছে জনগণ তাদের বর্জন করবে। তাছাড়া মানুষ দুর্নীতিগ্রস্ত নেতাদের কারণে বরাবরই উন্নয়নবঞ্চিত। এবার জনগণ দুর্নীতি ও সন্ত্রাসমুক্ত স্বচ্ছ ইমেজের প্রার্থীই বিজয়ী করবে।
বিএনপিতে একাধিক প্রার্থী ও নিজেদের মধ্যে অন্তঃকোন্দলের কারণে তারা কিছুটা বেকায়দায়। পতিত স্বৈরাচারের দোসর হওয়ায় জাপার প্রার্থীও প্রকাশ্যে আসতে পারছেন না। আসনটিতে এনসিপি প্রার্থীরও কোনো আনাগোনা নেই। তবে বিএনপির অঘোষিত একক প্রার্থী ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। দলীয় নেতাকর্মী ছাড়াও সাধারণ মানুষ আগামীতে টুকুকেই এমপি হিসেবে দেখতে চান।
জেলা বিএনপির একাধিক নেতা বলেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ৩১ দফা ঘোষণা করেছেন। ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর নির্দেশে তারেক রহমানের বার্তা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে আমরা কাজ করছি। তাছাড়া সিরাজগঞ্জ সদর ও কামারখন্দ এলাকার মানুষের সঙ্গে তার নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। বিগত আন্দোলন-সংগ্রামে তিনিই পথ দেখিয়েছেন। এ আসনে তার বিকল্প কেউ।
স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল হাসান বলেন, বিগত সময়ে জাতীয় নির্বাচনে মানুষ ভোট দিতে পারেনি। তাই ভোটারদের মধ্যেও আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ। বিএনপি এবার ত্যাগী নেতাদের প্রার্থী দেবে। আমি নিজেকে দলের জন্য ত্যাগী মনে করে প্রার্থী হয়েছি। তারপর দল অধিকতর যাচাই-বাছাই করে যাকে চূড়ান্ত করবে তার হয়েই কাজ করবো।
- আরও পড়ুন
- নিজামীর ছেলে দাঁড়িপাল্লার প্রার্থী, ধানের শীষ চান অনেকেই
- বিভক্ত বিএনপি, সুযোগ নিতে চায় জামায়াত
- সাবেক চেয়ারম্যান জামায়াতের এমপি প্রার্থী, বিএনপিতে সম্ভাব্য তিন
এ আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ৪ হাজার ৫০৭। যার মধ্যে ২ লাখ ১ হাজার ৭৮৪ নারী, ২ লাখ ২ হাজার ৭২১ পুরুষ ও দুজন তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন।
এমএএম/এসএইচএস/এমএফএ/জেআইএম