ট্রাইব্যুনালে রাজসাক্ষীকে নিয়ে আইনজীবীদের উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় ঢাকার আশুলিয়ায় ছয়জনকে গুলি করে ও পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় করা মামলায় রাজসাক্ষীকে নিয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী প্রসিকিউটরের সঙ্গে আসামিপক্ষের আইনজীবীর উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ২-এর নেতৃত্ব দেন বিচারক মো. মঞ্জুরুল বাছিদ। তার সঙ্গে ছিলেন এই ট্রাইব্যুনালের অপর সদস্য বিচারক নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর। মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলায় ‘অ্যাপ্রুভার’ বা রাজসাক্ষী হিসেবে পুলিশের সাবেক উপপরিদর্শক (এসআই) শেখ আবজালুল হককে দ্বিতীয় দিনের মতো জেরা করেন আসামিপক্ষের আইনজীবী। জেরায় এক প্রশ্নের জবাবে আবজালুল বলেন, গত বছরের ৫ আগস্ট তিনি অনুমতি ছাড়া আশুলিয়া থানা ত্যাগ করেন। থানায় ফিরে আসেন গত বছরের ১৫ আগস্ট। গণ-অভ্যুত্থানের সময় ঢাকার আশুলিয়া থানায় কর্মরত ছিলেন আবজালুল। পরে তাঁকে আশুলিয়ায় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেফতার করা হয়। জেরায় আবজালুলকে আসামিপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ মিজানুর রহমান প্রশ্ন করেন, থানায় এসে এএসআই (সহকারী উপপরিদর্শক) রাজু আহমেদের মারা যাওয়ার কথা তিনি শুনেছিলেন কি না। মূলত এই প্রশ্নকে কেন্দ্র করেই এজলাসকক্ষে উ
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় ঢাকার আশুলিয়ায় ছয়জনকে গুলি করে ও পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় করা মামলায় রাজসাক্ষীকে নিয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী প্রসিকিউটরের সঙ্গে আসামিপক্ষের আইনজীবীর উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ২-এর নেতৃত্ব দেন বিচারক মো. মঞ্জুরুল বাছিদ। তার সঙ্গে ছিলেন এই ট্রাইব্যুনালের অপর সদস্য বিচারক নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলায় ‘অ্যাপ্রুভার’ বা রাজসাক্ষী হিসেবে পুলিশের সাবেক উপপরিদর্শক (এসআই) শেখ আবজালুল হককে দ্বিতীয় দিনের মতো জেরা করেন আসামিপক্ষের আইনজীবী। জেরায় এক প্রশ্নের জবাবে আবজালুল বলেন, গত বছরের ৫ আগস্ট তিনি অনুমতি ছাড়া আশুলিয়া থানা ত্যাগ করেন। থানায় ফিরে আসেন গত বছরের ১৫ আগস্ট। গণ-অভ্যুত্থানের সময় ঢাকার আশুলিয়া থানায় কর্মরত ছিলেন আবজালুল। পরে তাঁকে আশুলিয়ায় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেফতার করা হয়।
জেরায় আবজালুলকে আসামিপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ মিজানুর রহমান প্রশ্ন করেন, থানায় এসে এএসআই (সহকারী উপপরিদর্শক) রাজু আহমেদের মারা যাওয়ার কথা তিনি শুনেছিলেন কি না। মূলত এই প্রশ্নকে কেন্দ্র করেই এজলাসকক্ষে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় শুরু হয়।
আসামিপক্ষের আইনজীবীর করা ওই প্রশ্নের বিরোধিতা করেন প্রসিকিউটর মো. মিজানুল ইসলাম। তিনি বলেন, রাজসাক্ষীর বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন করা যাবে, তবে তাঁকে এ ধরনের প্রশ্ন করা যাবে না। তখন আসামিপক্ষের আইনজীবী মিজানুর রহমান বলেন, ‘একজন দারোগাকে মেরে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে, এই প্রশ্ন করা যাবে না? এ রকম বিচার করতে কোর্ট এখানে আসেন নাই।’
প্রসিকিউশন যেমন একজন মায়ের আবেদনের বিচারের জন্য এখানে এসেছে, তেমনি এটাও আরেক স্ত্রীর (নিহত পুলিশ সদস্য রাজুর স্ত্রী) আবেদন বলে উল্লেখ করেন আইনজীবী মিজানুর রহমান। তখন তাঁর হাতে ছিল এএসআই রাজুর স্ত্রীর করা মামলার নথি। এ পর্যায়ে প্রসিকিউটর বলেন, আসামিপক্ষের আইনজীবী মিজানুর যে ডকুমেন্টস (নথি) এনেছেন, এটা দেখানোর অনুমতি আছে কি না। ট্রাইব্যুনালে সাফাই সাক্ষীর (আসামিপক্ষ) তালিকা ও ডকুমেন্টস কি দেওয়া হয়েছে?
তখন আসামিপক্ষের আইনজীবী মিজানুর রহমান বলেন, আরেকটা সুখরঞ্জন বালি (মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আমৃত্যু কারাদণ্ড পাওয়া দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলায় সাক্ষ্য দিতে এসে গুম হন সুখরঞ্জন বালি) তৈরি করতে চান? সাফাই সাক্ষীর নাম দিলে শুরু হয়ে যায় থ্রেট (হুমকি দেওয়া) করা। এর জবাবে প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম বলেন, তাঁদের (আসামিপক্ষের আইনজীবীদের) কোর্টে আসাই উচিত হয়নি। তাঁরা বলতে পারেন, এটা হাইড (সাফাই সাক্ষীর পরিচয় গোপন রাখা) রাখুন। তাঁরা এটা বলেছেন?
এ সময় ট্রাইব্যুনাল অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে বলেন, ‘সাক্ষ্য নিতে গেলেই এত কাহিনি’। পরে ট্রাইব্যুনাল বলেন, আইনকে আইনের মতো করে প্রয়োগ করলে কাজ হয়। তখন আসামিপক্ষের আইনজীবী মিজানুর রহমান বলেন, আইনে বলা আছে অ্যাপ্রুভার (রাজসাক্ষী) তার জ্ঞানে থাকা ঘটনা সম্পর্কে সত্য ও পূর্ণ প্রকাশ করবেন। এটা (পুলিশ হত্যা) তাঁর জানার মধ্যেই আছে। তিনি (আবজালুল) ছিলেন রাজুর স্ত্রীর করা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। এর জবাবে প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি এই (আশুলিয়ায় ছয় হত্যাকাণ্ড) অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে হবে।
রাজসাক্ষী আবজালুলকে সাবেক এএসআই রাজুর স্ত্রীর করা মামলা প্রসঙ্গে আবার প্রশ্ন করেন আসামিপক্ষের আইনজীবী মিজানুর রহমান। সঙ্গে সঙ্গে আবার আপত্তি জানিয়ে প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম বলেন, আবজালুলের বিশ্বাসযোগ্যতা সম্পর্কে প্রশ্ন করা যাবে, এই বিষয়ে নয়। তখন আসামিপক্ষের আইনজীবী মিজানুর রহমান বলেন, গায়ের জোরের কাছে তিনি পেরে উঠছেন না।
এরপর প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম উচ্চ স্বরে বারবার বলতে থাকেন, ‘হোয়াট ইজ দিস’। তখন বিচারকেরা দুই পক্ষকেই ট্রাইব্যুনালের পরিবেশ বজায় রাখার অনুরোধ করেন।
একপর্যায়ে প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম কথা বলার অনুমতি চান ট্রাইব্যুনালের কাছে। তখন ট্রাইব্যুনাল বলেন, একটু আস্তে কথা বলবেন। তখন প্রসিকিউটর বলেন, আসামিপক্ষের আইনজীবী মিজানুর শুরু থেকেই প্রত্যেক সাক্ষীকে আশুলিয়ায় পুলিশ হত্যার বিষয়ে জেরা করছেন। তাঁকে ট্রাইব্যুনালে এসব ডকুমেন্টস দিতে কে বাধা দিয়েছে? আসামিপক্ষের আইনজীবী মিজানুর রহমান এর জবাব দিতে গেলে ট্রাইব্যুনাল পরের প্রশ্নে যাওয়ার অনুরোধ করেন।
আশুলিয়ায় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আসামি ১৬ জন। এর মধ্যে সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, আশুলিয়া থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ এফ এম সায়েদ, এএসআই বিশ্বজিৎ সাহাসহ আট আসামি পলাতক। গ্রেফতার হওয়া বাকি আসামিরা হলেন ঢাকা জেলার সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহিল কাফী ও মো. শহিদুল ইসলাম (সাভার সার্কেল); ঢাকা জেলা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) সাবেক পরিদর্শক মো. আরাফাত হোসেন, আশুলিয়া থানার এসআই আবদুল মালেক, আরাফাত উদ্দীন, কামরুল হাসান ও শেখ আবজালুল হক এবং সাবেক কনস্টেবল মুকুল চৌকদার।
এফএইচ/কেএএ/
What's Your Reaction?