মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আরোপিত শুল্কের কারণে ভারতের চাহিদা কমে যাওয়ায় রাশিয়ার তেলের নতুন চালানগুলো কিনে নিচ্ছে চীন। আগামী অক্টোবর ও নভেম্বরে সরবরাহের জন্য অন্তত ১৫টি চালান নিশ্চিত করেছে চীনা রিফাইনারিগুলো। এসব চালান যেসব বন্দর ব্যবহার করে পাঠানো হবে, সেগুলো সাধারণত ভারতে তেল সরবরাহে ব্যবহৃত হতো।
২০২২ সালে ইউক্রেনে রাশিয়ার পূর্ণমাত্রার আগ্রাসন শুরুর পর পশ্চিমা দেশগুলো মস্কোর জ্বালানি আমদানি কমিয়ে দেয়। সেই সময় থেকে ভারত ও চীন রাশিয়ার তেলের সবচেয়ে বড় ক্রেতায় পরিণত হয়।
কিন্তু ট্রাম্প গত জুলাইয়ে হুঁশিয়ারি দেন, যেসব দেশ রাশিয়ার তেল কিনছে তাদের রপ্তানি পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্র অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করবে। চলতি মাসের শুরুতে তিনি ভারতীয় রপ্তানি পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক বসান, যা আগের ২৫ শতাংশের সঙ্গে যোগ হয়। এরপর ভারত হঠাৎ করেই রাশিয়ার তেল কেনা কমিয়ে দেয়।
আরও পড়ুন>>
- রাশিয়া থেকে ‘তেল আমদানির’ কারণেই ভারতের ওপর ‘রুষ্ট’ ট্রাম্প?
- রাশিয়ান তেলের বিকল্প কি ভারতের আছে?
- তেল কিনলে কী সুবিধা দিচ্ছে রাশিয়া?
কমোডিটি ও শিপিং ডেটা ট্র্যাককারী প্রতিষ্ঠান কেপলারের জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক মুইউ জু জানিয়েছেন, চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত ও বড় বেসরকারি রিফাইনারিগুলো এরই মধ্যে অক্টোবর মাসের জন্য পশ্চিম রাশিয়ার ১৩টি চালান ও নভেম্বরে অন্তত দুটি চালান কিনেছে। প্রতিটি চালানে ৭ থেকে ১০ লাখ ব্যারেল পর্যন্ত তেল থাকে।
এসব তেল রাশিয়ার আর্কটিক ও কৃষ্ণসাগরীয় বন্দর থেকে পাঠানো হবে—যেখান থেকে সাধারণত ভারত তেল সংগ্রহ করে। এখন সেই অংশ চীনের দিকে যাচ্ছে।
বিশ্লেষকদের বরাত দিয়ে রয়টার্সও জানিয়েছে, একই সময়ে চীন ১৫টি চালান নিশ্চিত করেছে।
বিশ্লেষক জু বলেন, চীনের এই কেনাকাটা একধরনের ‘সুযোগ কাজে লাগানো’। কারণ রাশিয়ার তেলের দাম এখনো মধ্যপ্রাচ্যের বিকল্প তেলের চেয়ে ব্যারেলপ্রতি অন্তত তিন ডলার কম। তিনি আরও বলেন, ভারতের ওপর ট্রাম্প এখনো চাপ দিচ্ছেন, তাই চীনের জন্য কেনার এটাই ভালো সময়।
শুক্রবার রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের পর ট্রাম্প ফক্স নিউজকে বলেন, আপাতত চীনের ওপর কোনো প্রতিশোধমূলক শুল্ক আরোপের চিন্তা করছেন না। তবে ‘দুই-তিন সপ্তাহের মধ্যে’ সেই সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর ভারত রাশিয়া থেকে ৫৩ বিলিয়ন ডলারের তেল আমদানি করেছিল। ওই সময় ভারতের তেলের মোট আমদানির ৩৬ শতাংশ এসেছিল রাশিয়া থেকে, যার ফলে দেশটি নয়াদিল্লির সবচেয়ে বড় সরবরাহকারী হয়ে ওঠে।
অন্যদিকে, চীন একই সময়ে ৬২ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলারের রুশ তেল কিনেছে, যা তাদের মোট আমদানির ১৩ দশমিক ৫ শতাংশ।
তবে বিশ্লেষকদের মতে, ভারত রাশিয়া থেকে দৈনিক প্রায় ১৭ লাখ ব্যারেল তেল কিনে থাকে, আর চীন সমুদ্রপথে দৈনিক প্রায় ১২ লাখ ব্যারেল কেনে। জু সতর্ক করে বলেন, ভারত যদি কেনা কমাতে থাকে, রাশিয়ার জন্য সেটা বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে। কারণ চীন একা ভারতের পুরো ঘাটতি পূরণ করতে পারবে না।
সূত্র: সিএনএন
কেএএ/