ট্রাম্পের মন্তব্যের পর ‘ফিলিস্তিনি ম্যান্ডেলা’ বারঘুতির মুক্তির আশা

15 hours ago 6

ট্রাম্পের মন্তব্যের পর ‘ফিলিস্তিনি ম্যান্ডেলা’ বলে পরিচিতত বারঘুতির মুক্তির আশা আরও জোরদার হয়েছে। পশ্চিম তীরের রামাল্লা শহর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত কোবার গ্রাম এই মুহূর্তে উদযাপনের পরিকল্পনা নিয়ে ব্যস্ত। কারণ, দীর্ঘদিন ধরে ইসরায়েলি কারাগারে বন্দি মারওয়ান বারঘুতির মুক্তির ব্যাপারে আশাবাদী হয়ে উঠেছেন তারা। প্রিয় নেতা ফিরলে কীভাবে কী করবেন, সেই চিন্তায় বিভোর গ্রামবাসী।

ফিলিস্তিনিদের ঐক্যবদ্ধ করায় নিজের ভূমিকার জন্য পরিচিত মারওয়ান বারঘুতি। তাকে ‘ফিলিস্তিনের নেলসন ম্যান্ডেলা’ও বলা হয়।

জুমার নামাজের পর গ্রামের মসজিদের বাইরে কথা বলতে গিয়ে তার দুঃসম্পর্কের ভাই মোহাম্মদ আল-বারঘুতি জানান, তিনি ‘৮০ শতাংশ নিশ্চিত’ যে মারওয়ান বারঘুতিকে শিগগির মুক্তি দেওয়া হবে। আশপাশে দাঁড়িয়ে থাকা যুবকরাও এ বিষয়ে একমত।

আরও পড়ুন>>
ইসরায়েল কেন বারঘুতিকে ছাড়তে ভয় পায়?
বারঘুতির মুক্তির জন্য ইসরায়েলের সঙ্গে আলোচনা করবেন ট্রাম্প
ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী যে ৬ নেতাকে মুক্তি দেবে না ইসরায়েল

গাজা শান্তি নিয়ে চলমান শান্তি প্রচেষ্টা এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক বিবৃতির দ্বৈত প্রভাবেই এই আশাব্যঞ্জক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে মনে করে বারঘুতির পরিবার এবং কোবার গ্রামের বাসিন্দারা।

গত সপ্তাহে টাইম ম্যাগাজিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন, ইসরায়েলকে তিনি মারওয়ান বারঘুতিকে মুক্তি দেওয়ার বিষয়ে বলতে পারেন, যাতে তিনি (বারঘুতি) গাজায় প্রশাসনিক নেতৃত্ব দিতে পারেন।

এই প্রসঙ্গে মনে রাখা দরকার, ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তির বদলে (ইসরায়েলের কাছে) হামাস যে ২০জন বন্দির মুক্তি দাবি করেছে, সেই তালিকায় মারওয়ান বারঘুতিও রয়েছেন। যদিও ইসরায়েলের এতে সম্মতি ছিল না।

‘ঐক্যের প্রতীক’

প্রথমবার ১৯৭৮ সালে কারাগারে বন্দি হওয়ার আগে পর্যন্ত একটি দোতলা বাড়িতে থাকতেন মারওয়ান বারঘুতি। ঘরে টানানো রয়েছে তার বড় রঙিন একটা ছবি। কারাগারে নিয়ে যাওয়ার আগের মুহূর্তে তোলা এই ছবি তার অনুভূতি এবং যে পরিস্থিতিতে তাকে সেখানে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল, তা ফুটিয়ে তোলে।

ছবিতে দেখা যায়, হাতকড়া পড়া অবস্থায় হাত তুলে রেখেছেন বারঘুতি। তার চোখে মুখে দৃঢ় সংকল্পের ছাপ স্পষ্ট।

ঘরে বসে কথা বলার মাঝে চা খাচ্ছিলেন আর সিগারেটে টান দিচ্ছিলেন তার ভাই মোকবেল বারঘুতি। তিনি মনে করেন, ফিলিস্তিনি এবং ইসরায়েলিদের যদি কেউ একসঙ্গে আনার কাজ করতে পারেন, সেটা তার ভাই মারওয়ান বারঘুতি।

‘ওর মতো করে কেউ ফিলিস্তিনিদের ঐক্যবদ্ধ করতে পারবে না,’ বলেন মোকবেল বারঘুতি। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তার নিজেরও সক্রিয় যোগ রয়েছে। গ্রামে রাজনৈতিকভাবেও সক্রিয় মারওয়ান বারঘুতির ভাই মোকবেল। পাশাপাশি, কারাবন্দিদের জন্য তৈরি কমিটির সদস্যও তিনি।

সব স্তরে জনপ্রিয়তা

জনমত জরিপ বলছে, ৬৬ বছর বয়সী মারওয়ান বারঘুতি সবচেয়ে জনপ্রিয় ফিলিস্তিনি রাজনীতিবিদ। যে সময় রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের সূচনা হয়েছিল, তখন তার বয়স মাত্র ১৫ বছর।

ফিলিস্তিনি নেতা ইয়াসির আরাফাতের নেতৃত্বাধীন ফাতাহ আন্দোলনের মাধ্যমে তার রাজনৈতিক জীবন শুরু করেছিলেন মারওয়ান বারঘুতি।

পরবর্তীকালে তার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ‘ফিলিস্তিনিদের স্বার্থ এবং দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের’ জন্য নিজের সমর্থনকে অব্যাহত রেখেছিলেন।

ইসরায়েলের ‘অপারেশন ডিফেন্স শিল্ড’ চলাকালে ২০০২ সালে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তার বিরুদ্ধে আল-আকসা শহীদ ব্রিগেড তৈরির অভিযোগ তুলেছিল ইসরায়েল। যদিও সেই অভিযোগ অস্বীকার করেন বারঘুতি।

প্রসঙ্গত, ২০০৭ সাল থেকে ফাতাহ আন্দোলনের সঙ্গে কিন্তু আল-আকসা ব্রিগেডের কোনো যোগ নেই। দ্বিতীয় ইন্তিফাদার সময়, আল-আকসা ব্রিগেড ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এবং ইহুদি বসতি স্থাপনকারীদের বিরুদ্ধে ধারাবাহিকভাবে অভিযান শুরু করে।

মারওয়ান বারঘুতির বিরুদ্ধে ইসরায়েলের অভ্যন্তরে বেসামরিক লোকজনকে লক্ষ্য করে হামলা চালানোর অভিযোগও তোলা হয়েছে। এর জন্য তাকে ৪০ বছরের কারাদণ্ড এবং পাঁচটা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।

বিচার চলাকালীন, এই ফিলিস্তিনি নেতা ইসরায়েলি আদালতের কর্তৃত্ব অস্বীকার করার পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে তোলা সমস্ত অভিযোগও অস্বীকার করেছিলেন।

মারওয়ান বারঘুতির স্ত্রী ফাদওয়া বারঘুতি একজন ফিলিস্তিনি আইনজীবী। বিবিসির সঙ্গে গত বছর কথোপকথনের সময় তিনি বলেছিলেন, ওর (মারওয়ান বারঘুতির) বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো এই কারণে আনা হয়নি যে, ও এই কাজগুলোর সঙ্গে যুক্ত। বরং এই জন্য তোলা হয়েছিল কারণ ও একজন ফিলিস্তিনি নেতা।

ফাদওয়া বারঘুতি বলেছেন, জিজ্ঞাসাবাদের সময় মারওয়ান বারঘুতি তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং আল-আকসা শহীদ ব্রিগেড প্রতিষ্ঠার অভিযোগও খারিজ করেছেন।

রাজনীতিবিদরা মনে করেন, যদি শান্তি চুক্তি পৌঁছানো সম্ভব হয়, তাহলে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব গ্রহণ এবং ভবিষ্যতের রাষ্ট্রের জন্য প্রস্তুত হওয়ার ক্ষেত্রে একটা ‘বিকল্প’ হতে পারেন মারওয়ান বারঘুতি। ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সম্ভাব্য উত্তরসূরি হিসেবে তাকেই দেখা হয়।

মারওয়ান বারঘুতি বরাবরই জানিয়ে এসেছেন, তিনি ইসরায়েলের সঙ্গে শান্তি স্থাপনের পক্ষে এবং একইসঙ্গে ১৯৬৭ সালের পূর্ববর্তী সীমানার ওপর ভিত্তি করে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের সমর্থনও করেন।

ইসরায়েলিদের অনেকেই তার মুক্তির বিপক্ষে। তাদের অভিযোগ, পাঁচজনকে হত্যার সঙ্গে তিনি জড়িত ছিলেন এবং তার হাতে রক্ত লেগে আছে’।

আবার অনেকে মনে করেন, তার মুক্তি ফিলিস্তিনিদের মধ্যে ঐকমত্য তৈরি করা, প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলোকে একত্রিত করা এবং শান্তি আনার সর্বোত্তম সম্ভাবনা তৈরি করার একটা উপায় হতে পারে।

সূত্র: বিবিসি বাংলা
কেএএ/

Read Entire Article