ভারতীয় পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ৫০ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হতে চলেছে বুধবার (২৭ আগস্ট)। এর ফলে অ্যাপারেল (পোশাক), বস্ত্র, সোনা, চিংড়ি, কার্পেট এবং আসবাবপত্রের মতো পণ্যের রপ্তানি মার্কিন বাজারে তুলনামূলকভাবে অলাভজনক হয়ে পড়বে। এতে ভারতে বহু কম দক্ষ কর্মীর চাকরি ঝুঁকিতে পড়তে পারে।
ভিয়েতনাম, বাংলাদেশ, কম্বোডিয়া এমনকি চীন ও পাকিস্তানের মতো দেশগুলো এখন ভারতের সম্ভাব্য ক্ষতির সুযোগ নিতে পারে। কারণ এসব দেশের ওপর আরোপ করা শুল্কের হার ভারতের তুলনায় কম হবে।
বাণিজ্য বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ট্রাম্পের নতুন শুল্ক কার্যকর হলে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের পণ্য রপ্তানির মূল্য আগের অর্থবছরের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাবে। গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ-এর বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ভারতের পণ্য রপ্তানি গত অর্থবছরের প্রায় ৮৭ বিলিয়ন ডলার থেকে কমে ২০২৬ অর্থবছরে ৪৯.৬ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসতে পারে।
ভারতের মার্কিন রপ্তানির প্রায় ৩০ শতাংশ (২০২৫ অর্থবছরে যার মূল্য ছিল ২৭.৬ বিলিয়ন ডলার) শুল্ক থেকে মুক্ত থাকবে। কারণ ফার্মাসিউটিক্যালস, ইলেকট্রনিকস এবং পেট্রোলিয়াম পণ্যের মতো কিছু সামগ্রীকে ট্রাম্পের শুল্ক থেকে ছাড় দেওয়া হয়েছে।
ভারতীয় পণ্যের ওপর আরোপিত এই ৫০ শতাংশ শুল্কের মধ্যে দুটি অংশ রয়েছে। এর প্রথম ২৫ শতাংশ শুল্ক ট্রাম্প জুলাই মাসের শেষের দিকে ঘোষণা করেছিলেন এবং বাকি ২৫ শতাংশ শুল্ক আগস্টের শুরুতে ঘোষণা করা হয়। মস্কো থেকে তেল ও প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম কেনার জন্য ভারতকে শাস্তি হিসেবে অতিরিক্ত এই ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়, যা বুধবার থেকে কার্যকর হচ্ছে।
আরও পড়ুন>
- ভারতের আয়ে হতাশার পূর্বাভাস, মার্কিন শুল্ক বৃদ্ধির শঙ্কা
- যুক্তরাষ্ট্রের ‘দাদাগিরির’ সামনে বন্ধু হয়ে উঠতে পারবে ভারত-চীন?
এই আকাশছোঁয়া শুল্কের কারণে মার্কিন বাজারে ভারতের পণ্য রপ্তানিকারকরা প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়বেন। হাতে গোনা কয়েকটি দেশের সঙ্গেই ভারতের বাণিজ্য উদ্বৃত্ত রয়েছে, যার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র অন্যতম। অন্যদিকে, চীন, রাশিয়া এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো শীর্ষ বাণিজ্য অংশীদারদের সঙ্গে ভারতের তীব্র বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে।
এই শুল্কের প্রভাব ব্যাপক হতে পারে, কারণ যুক্তরাষ্ট্র ভারতের মোট পণ্য রপ্তানির ২০ শতাংশ এবং সামগ্রিক জিডিপির ২ শতাংশ অংশীদার। অর্ধ-দক্ষ কর্মীদের জন্য বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের আশঙ্কা করে বস্ত্র, রত্ন এবং গহনা খাতের শিল্পগুলো কোভিড-১৯ সময়ের মতো সরকারি সহায়তা চেয়েছে যাতে কর্মসংস্থান কমে না যায়। কারণ, এই খাতগুলোর প্রায় ৩০ শতাংশ রপ্তানি শুধু মার্কিন বাজারেই হয়ে থাকে।
মার্কিন উচ্চ শুল্কের কারণে যেসব পণ্য সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে পোশাক ও বস্ত্র, রত্ন ও গহনা, চিংড়ি, যন্ত্রাংশ, কিছু ধাতু (যেমন- ইস্পাত, অ্যালুমিনিয়াম, তামা), জৈব রাসায়নিক, কৃষি ও প্রক্রিয়াজাত খাবার, চামড়া ও জুতো, হস্তশিল্প, আসবাবপত্র এবং কার্পেট।
মার্কিন বাজারের ওপর নির্ভরশীলতা বেশি হওয়ায় চিংড়ি রপ্তানিকারকদের আয়ের ৪৮ শতাংশ আসে মার্কিন বাজার থেকে। যার ফলে সামুদ্রিক খাদ্য রপ্তানি খাতেও বিক্রি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যেতে পারে।
জিটিআরআই-এর সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের মার্কিন রপ্তানির ৩০ শতাংশ শুল্কমুক্ত থাকবে এবং ৪ শতাংশ পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপিত হবে। তবে বেশিরভাগ পণ্য যেমন- পোশাক, বস্ত্র, রত্ন ও গহনা, চিংড়ি, কার্পেট এবং আসবাবপত্রের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হওয়ায় সেগুলো প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারবে না। এই খাতগুলোর রপ্তানি ৭০ শতাংশ পর্যন্ত কমে গিয়ে ১৮.৬ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসতে পারে। এতে যুক্তরাষ্ট্রে সামগ্রিক রপ্তানি ৪৩ শতাংশ হ্রাস পাবে এবং লাখ লাখ চাকরি ঝুঁকির মুখে পড়বে।
সূত্র: দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস
এমএসএম