ট্রেনযাত্রায় আগ্রহ হারাচ্ছে উত্তরাঞ্চলের মানুষ

1 month ago 9

যাত্রীসেবার মান দিন দিন নিম্নমুখী হওয়ায় ট্রেন ভ্রমণে আগ্রহ হারাচ্ছে উত্তরাঞ্চলের মানুষ। ভাড়া প্রায় দ্বিগুণ বৃদ্ধি, বিলম্বে ট্রেন চলাচল করায় যাত্রীরা আগ্রহ হারাচ্ছেন। এসব কারণে যাত্রী কমছে। ফলে আয় কমেছে ট্রেনের। দেশের সর্ববৃহৎ রেলওয়ে জংশন দিনাজপুরের পার্বতীপুর রেলস্টেশনের ২০২৪-২৫ অর্থবছরে অর্জিত হয়নি বার্ষিক আয়ের লক্ষ্যমাত্রা।

তবে স্টেশন কর্তৃপক্ষের ভাষ্য, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বিভিন্ন সময় দেশে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা বিরাজমান ছিল। এ কারণে ট্রেনের যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের পরিমাণ কমে গেছে। এজন্য কমেছে রাজস্ব।

সূত্র বলছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে পার্বতীপুর রেলস্টেশনের বার্ষিক আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল দুই কোটি ৬৫ লাখ ৭৪ হাজার ৬১৯ টাকা। কিন্তু আয় হয়েছে দুই কোটি ৩৯ লাখ ৯২ হাজার ৩৯২ টাকা। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৫ লাখ ৮২ হাজার ২২৮ টাকা কম।

‘ট্রেনগুলোর আসন ঠিকমতো পরিষ্কার করা হয় না। বেশিরভাগ সময় ধুলাবালিতে ভরে থাকে। একই অবস্থা টয়লেটগুলোর। নিয়মিত পরিষ্কার না করায় টয়লেটগুলো ব্যবহারের উপযোগিতা হারিয়েছে।’

এবার যাত্রী ও পণ্য পরিবহন উভয় খাতে নিম্নমুখী প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। পার্বতীপুর রেলস্টেশন থেকে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে প্রতিদিন ব্রডগেজ ও মিটারগেজ মিলে ১৪টি আন্তঃনগর ট্রেনসহ মোট ২৪টি ট্রেন চলাচল করে। অথচ ৯ বছর আগেও এই জংশন থেকে ৪২টি আন্তঃনগর ও মেইল ট্রেন চলাচল করতো।

পার্বতীপুর রেলওয়ে স্টেশনের হেড বুকিং নাজমুল বাসার মো. আহসানুল আশীষ সোহাগের দেওয়া তথ্যমতে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে যাত্রী টার্গেট ছিল ১০ লাখ ১৫ হাজার ৮৪৩ জন। সেখানে পার্বতীপুর রেলস্টেশন থেকে ভ্রমণ করে ছয় লাখ ৮১ হাজার ১৭৩ জন। অর্থাৎ যাত্রী কমেছে তিন লাখ ৩৪ হাজার ৬৭০ জন।

ট্রেনযাত্রায় আগ্রহ হারাচ্ছে উত্তরাঞ্চলের মানুষ

একই অর্থবছরে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল দুই কোটি ৩৯ লাখ ৯২ হাজার ৩৯২। কিন্তু যাত্রী পরিবহনের পরিমাণ কমে যাওয়ায় এ খাতে আয় দাঁড়ায় এক কোটি ৮৬ লাখ ২০ হাজার ১৮৪ টাকা। পণ্য পরিবহন খাতে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১৩ লাখ ৩৪ হাজার ৫০৩ টাকা। কিন্তু আয় হয়েছে ১৮ লাখ ৬৭ হাজার ৪০৪ টাকা।

‘লোকবল কম থাকায় যাত্রীদের সঠিক সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে কিছুটা অসুবিধা তৈরি হয়। তবে সময়মতো ট্রেন ছাড়ার ক্ষেত্রে আগের চেয়ে পরিস্থিতি এখন অনেক ভালো। খাবারের বিষয়ে যাত্রীদের কাছ থেকে এখনো কোনো অভিযোগ পাইনি।’

পার্সেল খাতে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১৯ লাখ ৩৬ হাজার ৫৭৮ টাকা। আয় হয়েছে ৪৪ লাখ ১০ হাজার ৭৩৫ টাকা। স্টেশনে ভেন্ডার ও বিদ্যুৎ খাতে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ২৯ লাখ ৮৯ হাজার ২০৫ টাকা। কিন্তু আয় হয়েছে সাত লাখ ৮৪ হাজার ৭২ টাকা।

ঢাকা রুটে আন্তঃনগর ট্রেনে যাতায়াত করেন গৃহিণী আফরোজা তুহিন। ট্রেনযাত্রায় নিজের অস্বস্তির কথা জানিয়ে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‌‘ট্রেনগুলোর আসন ঠিকমতো পরিষ্কার করা হয় না। বেশিরভাগ সময় ধুলাবালিতে ভরে থাকে। একই অবস্থা টয়লেটগুলোর। নিয়মিত পরিষ্কার না করায় টয়লেটগুলো ব্যবহারের উপযোগিতা হারিয়েছে।’

আফরোজা তুহিন বলেন, ‘মাঝে মধ্যে টয়লেটে পানি থাকে না। খাবারের মান ভালো না হলেও দাম চড়া। হিজড়াদের উৎপাত। যাত্রীদের বিভিন্ন মালামাল ছিনতাইয়ের কবলে পড়তে হয়।’

নীলসাগর ট্রেনের নিয়মিত যাত্রী প্রদীব কুমার রায় বলেন, ‘ট্রেনে পার্বতীপুর থেকে ঢাকায় পৌঁছাতে আট ঘণ্টা লাগে। অথচ ১০ ঘণ্টার আগে পৌঁছানো যায় না। কমলাপুর থেকে কোনো দিন নির্ধারিত সময় ট্রেন ছাড়া হয় না। এ কারণে যাত্রীরা বিরক্ত।’

এ বিষয়ে পার্বতীপুর রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার মো. রেজাউল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, লোকবল কম থাকায় যাত্রীদের সঠিক সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে কিছুটা অসুবিধা তৈরি হয়। তবে সময়মতো ট্রেন ছাড়ার ক্ষেত্রে আগের চেয়ে পরিস্থিতি এখন অনেক ভালো। খাবারের বিষয়ে যাত্রীদের কাছ থেকে এখনো কোনো অভিযোগ পাইনি।

তবে আগামীতে আয় বাড়াতে সব ব্যবস্থাই করা হবে বলে জানান স্টেশন মাস্টার।

এসআর/জেআইএম

Read Entire Article