টয়লেটের ঢাকনা খোলা রাখবেন, নাকি সবসময় বন্ধ? বিতর্কের উত্তর মিললো

বাথরুমের আচরণবিধি নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই। কিন্তু সবচেয়ে বেশি তর্ক হয় টয়লেটের ঢাকনা নিয়ে। বিশেষ করে একটি প্রশ্নে — ফ্লাশ করার সময় বা ব্যবহার না থাকলে কমোডের ঢাকনা খোলা রাখা উচিত নাকি বন্ধ? অনেকেই শুনেছেন, ফ্লাশ করার সময় ঢাকনা খোলা রাখলে ব্যাকটেরিয়া–ভাইরাস পুরো ঘরে ছড়িয়ে পড়ে। সত্যি কি তাই? আর অন্য সময় ঢাকনা খোলা থাকা কি কোনো স্বাস্থ্যঝুঁকি? বৈজ্ঞানিক তথ্যের ওপর ভর করে এসব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন ‘জার্ম গাই’ নামে পরিচিত মাইক্রোবায়োলজিস্ট জেসন টেট্রো। তার ব্যাখ্যা বিষয়টিকে আরও স্পষ্ট করে। ফ্লাশ করার সময় ঢাকনা বন্ধ করা কেন জরুরি? বিষয়টি যতই অস্বস্তিকর হোক, সত্যিটা খুব সরল — ঢাকনা খোলা রেখে ফ্লাশ করলে মল-মূত্রের অণু চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে।     ফ্লাশের সময় তৈরি হয় ‘টয়লেট প্লুম’ — অর্থাৎ বাতাসে ছড়িয়ে যাওয়া ক্ষুদ্র জলকণা, যেগুলোতে থাকে বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস। টেট্রোর বলেছেন, ঢাকনা খোলা থাকলে এসব কণা ৬ ফুট দূর পর্যন্ত ছড়িয়ে যেতে পারে। ঢাকনা বন্ধ করলে পুরোপুরি রোধ করা না গেলেও ঝুঁকি অর্ধেকে নেমে আসে। ২০২০ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ঢাকনা বন্ধ রেখে ফ্লাশ করলে ব্যাকটেরিয়া-সমৃদ্ধ অ্যারোসোল ৫০ শতাংশ

টয়লেটের ঢাকনা খোলা রাখবেন, নাকি সবসময় বন্ধ? বিতর্কের উত্তর মিললো

বাথরুমের আচরণবিধি নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই। কিন্তু সবচেয়ে বেশি তর্ক হয় টয়লেটের ঢাকনা নিয়ে। বিশেষ করে একটি প্রশ্নে — ফ্লাশ করার সময় বা ব্যবহার না থাকলে কমোডের ঢাকনা খোলা রাখা উচিত নাকি বন্ধ?

অনেকেই শুনেছেন, ফ্লাশ করার সময় ঢাকনা খোলা রাখলে ব্যাকটেরিয়া–ভাইরাস পুরো ঘরে ছড়িয়ে পড়ে। সত্যি কি তাই? আর অন্য সময় ঢাকনা খোলা থাকা কি কোনো স্বাস্থ্যঝুঁকি?

বৈজ্ঞানিক তথ্যের ওপর ভর করে এসব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন ‘জার্ম গাই’ নামে পরিচিত মাইক্রোবায়োলজিস্ট জেসন টেট্রো। তার ব্যাখ্যা বিষয়টিকে আরও স্পষ্ট করে।

ফ্লাশ করার সময় ঢাকনা বন্ধ করা কেন জরুরি?

বিষয়টি যতই অস্বস্তিকর হোক, সত্যিটা খুব সরল — ঢাকনা খোলা রেখে ফ্লাশ করলে মল-মূত্রের অণু চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে।

 

 

ফ্লাশের সময় তৈরি হয় ‘টয়লেট প্লুম’ — অর্থাৎ বাতাসে ছড়িয়ে যাওয়া ক্ষুদ্র জলকণা, যেগুলোতে থাকে বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস। টেট্রোর বলেছেন, ঢাকনা খোলা থাকলে এসব কণা ৬ ফুট দূর পর্যন্ত ছড়িয়ে যেতে পারে।

ঢাকনা বন্ধ করলে পুরোপুরি রোধ করা না গেলেও ঝুঁকি অর্ধেকে নেমে আসে। ২০২০ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ঢাকনা বন্ধ রেখে ফ্লাশ করলে ব্যাকটেরিয়া-সমৃদ্ধ অ্যারোসোল ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমে।

ব্যবহার না থাকলেও ঢাকনা বন্ধ রাখবেন?

হ্যাঁ, বন্ধ রাখাই ভালো। কারণ কমোড ও টয়লেট সিটে সবসময়ই জীবাণুর উপস্থিতি থাকে, তা আপনি যতই পরিষ্কার রাখুন না কেন। সেখানে থাকে নোরোভাইরাস, ই-কলাই, সি. ডিফিসিলসহ নানান ব্যাকটেরিয়া–ভাইরাস।

টেট্রোর ভাষায়, ঢাকনা বন্ধ রাখা মানে জীবাণু ছড়ানোর একটি সম্ভাব্য পথ বন্ধ রাখা।

এত জীবাণু বাতাসে ভাসে কীভাবে?

আপনার পোষা প্রাণী হতে পারে এর একটি মূল বাহক। অনেক কুকুর–বিড়াল টয়লেটের পানিকে ‘ফ্যান্সি ওয়াটার স্টেশন’ মনে করে পান করতে যায়। সেই দূষিত পানি তাদের শরীরে সংক্রমণ ঘটাতে পারে এবং পরবর্তীতে আপনার মুখে–হাতে জীবাণু পৌঁছে দিতে পারে।

অসুস্থ কেউ থাকলে ঝুঁকি কি বাড়ে?

অবশ্যই, নোরোভাইরাস (যা ডায়রিয়া–বমি করায়) খুব দ্রুত ছড়ায় দূষিত টয়লেট থেকে। তাই বাড়িতে কেউ অসুস্থ থাকলে ফ্লাশের সময় ঢাকনা বন্ধ রাখা বাধ্যতামূলক। একই সঙ্গে নিয়মিত ডিসইনফেকশনও জরুরি।

ঢাকনা বন্ধ রাখার আরেকটি বড় কারণ—বাথরুমের আর্দ্রতা। ঢাকনা খোলা থাকলে বাথরুমের আর্দ্রতা সামান্য বেড়ে যেতে পারে। অতিরিক্ত আর্দ্রতা মোল্ড ও ছত্রাকের কারণ হতে পারে। সুতরাং ঢাকনা বন্ধ রাখা ঘরের পরিবেশ নিয়ন্ত্রণেও সহায়ক।

 

 

বাথরুমের জীবাণু নিয়ন্ত্রণে আরও কিছু কার্যকর অভ্যাস –

১. মলত্যাগের পর ‘ডাবল ফ্লাশ’ করুন

একটি গবেষণায় দেখা গেছে, দুইবার ফ্লাশ করলে কমোডের ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ আরও কমে।

২. নিয়মিত বাথরুমের সব সারফেস মুছে ফেলুন

গরম পানি ও সাবান বা সাধারণ ক্লিনার দিয়ে বাথরুমের কাউন্টার, হ্যান্ডেল, সিট — সব জায়গা পরিস্কার করুন।

৩. সাপ্তাহিক ডিসইনফেকশন করুন

ব্লিচ-যুক্ত ক্লিনার সবচেয়ে কার্যকর। কারও পেটের সমস্যা থাকলে সিডিসি-র নিয়ম অনুসরণ করে এক গ্যালন পানিতে পাঁচ টেবিলচামচ ব্লিচ মেশান। এই মিশ্রণ টয়লেটের সব পৃষ্ঠে ব্যবহার করুন, তারপর পাঁচ মিনিট রেখে গরম পানিতে ধুয়ে ফেলুন

৪. টুথব্রাশ সুরক্ষিত রাখুন

আপনার টুথব্রাশ টয়লেট প্লুমের নাগাল থেকে দূরে রাখুন। কমোড থেকে অন্তত ৬ ফুট দূরে বা ক্যাবিনেটে রাখা ভালো।

৫. স্যানিটাইজার নয়, নিয়মিত হাত ধোয়া

নোরোভাইরাস স্যানিটাইজারে ধ্বংস হয় না। তাই সাবান ও হালকা গরম পানি দিয়ে হাত ধোয়া উচিত।

টয়লেটের ঢাকনা সবসময় বন্ধ রাখার অভ্যাস ছোট মনে হলেও আপনার স্বাস্থ্য–হাইজিন ইকোসিস্টেমে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

সূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট

এএমপি

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow