ঠাকুরগাঁওয়ে ভুয়া বিল প্রকল্পে টাকা আত্মসাৎ

13 hours ago 4
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রহিমানপুর ইউনিয়নের মথুরাপুর ক্লাব ও লাইব্রেরি। প্রায় ৯০ বছর আগে যাত্রা শুরু হয় ক্লাবটির। দীর্ঘ সময়ের পদযাত্রায় ছিল উত্থান-পতন। তবে থেমে যায়নি। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ২ লাখ টাকা অনুদান দিয়েছে উপজেলা পরিষদ। কিনতে হবে ক্রীড়া সামগ্রী, তবে বিধিবাম। ৫ মাস পেরিয়ে গেলেও অনুদানের টাকা সম্পর্কে কিছুই জানেন না ক্লাবটির সদস্যরা। পাননি কোনো আর্থিক সহযোগিতা। জানা যায়, একইভাবে জুন মাসে উপজেলার বালিয়া ইউনিয়নের একতা যুব ক্লাব ও কুমারপুর স্পোর্টিং ক্লাবের আসবাবপত্র ও খেলার সামগ্রী কেনার জন্য ২ লাখ টাকার অনুদান দেওয়া হয়। এ দুই নামেও ক্লাবের সন্ধান মিলেনি। নামই শোনেননি স্থানীয় খেলোয়াড় ও বাসিন্দারা। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন। ছয় মাসে এমন ভুতুড়ে বিলের রাজ্যে পরিণত হয়েছে সদর উপজেলা পরিষদ। মার্চ মাসে রহিমানপুর ইউনিয়নের ইউপি সদস্য আনারুল ইসলাম ও সালান্দর ইউনিয়নের ইউপি সদস্য পুলক চন্দ্র সেনকে প্রকল্প চেয়ারম্যান বানিয়ে ৩ লাখ ৪২ হাজার টাকার চূড়ান্ত বিল দেওয়া হয়। দুটি ইউনিয়নের খেলোয়াড়দের মাঝে ক্রীড়া সামগ্রী বিতরণের কথা থাকলেও প্রকল্প সম্পর্কেই জানেন না সভাপতিরা। এদিকে জুলাই আন্দোলন চলাকালে উপজেলা চেয়ারম্যানের গাড়িটি পুড়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। গ্যারেজে মেরামতে রেখে দেখানো হয়েছে ১ লাখ ৩ হাজার ৮১৮ টাকার ভুয়া জ্বালানি বিল। অপরদিকে জানুয়ারি মাসে একই স্থানের ভিআইপি পর্দা কেনা হয়েছে ২ বার। জুন মাসে একটি মারছেবল পাম্প কেনা হয়েছে ৩ বার। এ ছাড়া একই ধরনের স্যানেটারি মালামাল ক্রয় হয়েছে ৩ বার। এছাড়াও ইলেটক্ট্রিক ও সিসিটিভি মেরামত-মালামাল ক্রয় দেখানো হয়েছে একাধিকবার। তবে এসব বিলের সাথে সম্পর্ক নেই বলে জানান বিল গ্রহণকারীরা। আরও জানা যায়, ভুয়া প্রকল্প দেখিয়ে এসব বিল বানানোর কারিগর সদর উপজেলার জারীকারক নুরুল ইসলাম নুরু। পরে অবস্থা বেগতিক দেখে তাড়াহুড়ো করে বদলি করা হয় তাকে।  মুথরাপুর ক্লাব ও লাইব্রেরির সাবেক সভাপতি আব্দুল জলিল জেলি ও বর্তমান সভাপতি মোহাম্মদ সোহাগ বলেন, আমাদের ক্লাবের নামে বরাদ্দ হয়েছে আমরা জানি না। আমরা আবেদন দেইনি অথচ বরাদ্দ নাকি ৪ মাস আগে পেয়েছি। আমাদের কোনো সদস্যের এ বরাদ্দের সাথে সম্পর্ক নেই। আমাদের দাবি, বরাদ্দগুলো দেওয়া হোক এবং ক্লাবের কাজে আসুক। বালিয়া ইউনিয়নের স্থানীয় খেলোয়াড়রা বলেন, কুমারপুর স্পোটিং ক্লাব নামে কোনোকিছু নেই আমাদের এখানে। আমরা এইপ্রথম বিষয়টি সম্পর্কে জানলাম।  প্রকল্প সভাপতি সালান্দর ও রহিমানপুর ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য আনারুল ইসলাম ও পুলক সেন বলেন, আমরা প্রকল্প সম্পর্কে জানি না। আর কোনো ক্রীড়াসামগ্রী কেনাকাটা করিনি। এসব প্রকল্প সম্পর্কে আমাদের জানানো হয়নি। রুপসী বাংলা অয়েল পাম্পের ম্যানেজার শরিফুল ইসলাম বলেন, আমাদের কাছে চেয়ারম্যানের গাড়ি তেল নেওয়া হয়নি। এই বিলের সাথে রুপসী বাংলা অয়েলের কোনো সম্পর্ক নেই। এসব ভুতুড়ে বিল সম্পর্কে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খাইরুল ইসলাম কোনো কথা বলতে রাজি হয়নি। এমনকি গণমাধ্যমকর্মীদের রুম থেকে বের হয়ে যেতে বলেন। ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক ইশরাত ফারজানা বলেন, অভিযোগগুলো তদন্ত করে দেখার পাশাপাশি সত্যতা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Read Entire Article