অনেকে সকালে ঘুম থেকে উঠেই দাঁত ব্রাশ করেন। তবে এমন অনেকেই আছেন, যারা বিছানায় বসেই বাসি মুখে চা-কফি পান করেন। এই অভ্যাস কিন্তু একেবারেই স্বাস্থ্যকর নয়। চিকিৎসকরা বলছেন, দিনের কোন সময়ে, কতবার দাঁত মাজছেন,তার উপরেও নির্ভর করে শরীরের সার্বিক সুস্থতা।
২০২০ সালে প্রকাশিত ডায়াবেটোলজিয়া জার্নালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যারা দিনে অন্তত তিনবার বা তার বেশি দাঁত ব্রাশ করেন, তাদের ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি যারা দিনে মাত্র একবার বা একবারও ব্রাশ করেন না, তাদের তুলনায় প্রায় ৮ শতাংশ কম।
অন্যদিকে, যদি কারো মুখে ১৫টি বা তার বেশি দাঁত না থাকে, তাহলে সেই ঝুঁকি প্রায় ২১ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে।
ডায়াবেটিসের সঙ্গে দাঁতের সম্পর্ক
পিরিওডোন্টাইটিস বা মাড়ির রোগ শুধু দাঁতের সমস্যা নয়, এটি পুরো শরীরের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। সংক্রামিত মাড়ি থেকে ব্যাকটেরিয়া রক্তপ্রবাহে প্রবেশ করে ধমনীর দেয়ালে প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে।
ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তুলনামূলকভাবে দুর্বল থাকে। ফলে মুখে সংক্রমণ হলে তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং ইনসুলিন হরমোনের কার্যকারিতায় প্রভাব ফেলতে পারে। ইনসুলিনই রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। তাই দাঁতের যত্ন না নিলে ডায়াবেটিস আরও জটিল হতে পারে।
আসুন জেনে নেওয়া যাক কখন দাঁত মাজবেন-
১. সকালে ঘুম থেকে উঠেই ব্রাশ করতে হবে
চিকিৎসকরা বলছেন, সকালে ঘুম থেকে উঠেই ব্রাশ করা সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। সারারাত মুখে ব্যাকটেরিয়া বেড়ে ওঠে, তাই ব্রাশ না করে পানি বা চা-কফি খেলে সেই ব্যাকটেরিয়া শরীরে প্রবেশ করে। ফলে প্রদাহ সৃষ্টি হয়ে ডায়াবেটিস ও হার্টের রোগের ঝুঁকি বাড়ে।
২. রাতে শোবার আগে
রাতে শোবার আগে ব্রাশ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সারাদিন খাবারের কণা মুখে জমে থাকে, যা ব্যাকটেরিয়ার খাদ্য হিসেবে কাজ করে। রাতে ব্রাশ করলে এই ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি রোধ হয় এবং দাঁত ও মাড়ি সুরক্ষিত থাকে। সম্ভব হলে দুপুরে বা বিকেলে একবার দাঁত মেজে নেওয়াও ভালো অভ্যাস।
নিয়মিত টুথব্রাশ পরিবর্তন
টুথব্রাশের সঠিক ব্যবহারও গুরুত্বপূর্ণ। প্রতি ৩ থেকে ৪ মাস অন্তর টুথব্রাশ বদলে ফেলা উচিত, কারণ পুরোনো ব্রাশে ব্যাকটেরিয়া জমে মুখে সংক্রমণ ঘটাতে পারে। এটি ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতেও সাহায্য করে।
ব্রাশের যত্নে বাড়তি সতর্কতা
অনেকেই একই ব্রাশ দীর্ঘদিন ব্যবহার করেন, এমন কি খোলা জায়গায় রেখে দেন। এতে জীবাণু ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে। পুরোনো ব্রাশের ব্রিসল নষ্ট হয়ে গেলে দাঁতের ফাঁকে ঠিকমতো পৌঁছাতে পারে না, ফলে মুখ পুরোপুরি পরিষ্কার হয় না। চিকিৎসকদের পরামর্শ- হলো তিন মাস অন্তর ব্রাশ পরিবর্তন করতে হবে।
নিয়মিত ও সঠিক সময়ে দাঁত মাজা শুধু মুখের নয়, পুরো শরীরের স্বাস্থ্যের জন্য জরুরি। ছোট এই অভ্যাসটাই ডায়াবেটিস, হৃদরোগসহ নানা জটিলতা থেকে আপনাকে সুরক্ষা দিতে পারে।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া, দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড, ডায়াবেটোলজিয়া জার্নাল
আরও পড়ুন:
খালি পেটে থাকলে রক্তে শর্করা বেড়ে যায় কেন
আপনার সুখের পেছনে দায়ী যে রাসায়নিক
এসএকেওয়াই/এএসএম

3 hours ago
5








English (US) ·