ঠিকাদারের অবহেলার মাশুল দিচ্ছে কয়েকশ পরিবার

3 months ago 45

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) ঠিকাদারের অবহেলার মাশুল দিচ্ছেন কক্সবাজারের ঈদগাঁওয়ের পূর্ব ফরাজীপাড়ার কয়েকশ পরিবার। খালের ভঙ্গুর পাড়ে গাইডওয়াল নির্মাণের কাজ শুরু করে অবহেলায় ফেলে রাখায় মৌসুমের প্রথম পাহাড়ি ঢলের পানিই লোকালয়ে প্রবেশ করেছে। এতে পানির স্রোতে প্রায় ২০টি বাড়ি মালামালসহ ভেসে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্লাবিত হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আরও শতাধিক বসতবাড়ি।

ইউনিয়নের একমাত্র পাকা সড়কটি পানির স্রোতে বেশ কয়েক জায়গায় ভয়াবহভাবে ভেঙে গেছে। ফলে উপজেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন সড়কটি ব্যবহার করা জালালাবাদ ও পোকখালী ইউনিয়নের কয়েক লাখ মানুষ।

ভাঙন ও ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনের দুর্দশা পর্যবেক্ষণে গিয়ে ঈদগাঁও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিমল চাকমা উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের প্রাথমিক সহযোগিতা দিয়েছেন। এসময় জালালাবাদ ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান আলমগীর তাজ জনিসহ সংশ্লিষ্টরা সঙ্গে ছিলেন। তবে দ্রুত গাইডওয়ালটি নির্মাণ ও ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা মেরামত করার উদ্যোগ চলছে বলে দাবি করেছেন এলজিইডি কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ মামুন খান।

ঠিকাদারের অবহেলার মাশুল দিচ্ছে কয়েকশ পরিবার

স্থানীয়রা জানান, ঈদগাঁও ফুলেশ্বরী নদীর জালালাবাদের মনজুর মৌলভীর দোকান ও পোকখালী ইউনিয়নের পূর্ব সিকদারপাড়া এলাকার সংযোগ ব্রিজটি বছর পাঁচেক আগে ঢলের পানিতে দুটি গার্ডারসহ তলিয়ে যায়। জালালাবাদের তৎকালীন চেয়ারম্যান ইমরুল রাশেদ ও তার দুই ভাই প্রতিযোগিতা দিয়ে বালি তুলতে গিয়ে ব্রিজের গার্ডারের কিনারা থেকে বালি নেওয়ায় বর্ষার প্রথম ঢলে ব্রিজটির মাঝের অংশ তলিয়ে যায়। এসময় মনজুর মৌলভীর দোকানের সাইডের বাঁধ ভেঙে এলাকার বেশ কয়েকটি বাড়ি তলিয়ে কয়েকশ বাড়ি প্লাবিত হয়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় সড়কও। তখন বাঁধে বস্তা ফেলে মাটি দিয়ে উঁচু করে ভেতর অংশে একটি ওয়াল দেওয়া হয়। এরপর ঢল নামলেও বাঁধটি এলাকাকে রক্ষা করেছে।

ক্ষতিগ্রস্তরা আরও জানান, সম্প্রতি সেই ভঙ্গুর অংশটি টেকসইভাবে গাইডওয়াল দিতে দরপত্র হয় এবং ফরিদপুর এলাকার এক ঠিকাদার কাজটি পান। অর্থবছর শেষ হওয়ার আগে টাকা তুলে নিতে তড়িঘড়ি করে আগের ওয়ালটি ভেঙে মাটির বস্তা সরিয়ে পাইলিং শুরু করে। এলজিইডিকে কাজ দেখিয়ে বিল হাতানোর প্রক্রিয়া সম্পন্নের পর কাজটি আর এগুইনি। ফলে গত বুধবার রাতে নদীতে মৌসুমের প্রথম ঢল নামলে খোলা ভঙ্গুর অংশ দিয়ে অনায়াসে পানি ঢুকে যায় এলাকায়। এসময় ঢলের স্রোতের মুখে পড়া প্রায় ২০টির মতো বসতি সমস্ত মালামাল ও আসবাবসহ তলিয়ে যায়। প্লাবিত হয় শতাধিক বসতি। এসময় অনেকের ধান, আসবাবপত্র, পশুপাখি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তলিয়ে গেছে পুকুরের মাছ। বুক সমান পানির স্রোতে ভেঙে গেছে পাকা সড়কটি। বৃহস্পতিবার সারাদিন এবং শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত বৃষ্টি অব্যাহত থাকাকালীন ঢলও অব্যাহত থাকায় পানিতে প্লাবিত হয়েই সময় কেটেছে দুর্গতদের।

ঠিকাদারের অবহেলার মাশুল দিচ্ছে কয়েকশ পরিবার

ভাঙনের এক কিলোমিটার পশ্চিমে ফরাজি পাড়ায় জালালাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের ভবন। সড়কটি দিয়ে ইউনিয়নের অধিবাসীসহ পার্শ্ববতী পোকখালী ইউনিয়নের বাসিন্দারা ঈদগাঁও উপজেলা সদর ও বাজারে যাতায়াত করে থাকেন। ভাঙনের কারণে সড়ক যোগাযোগ সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে।

ঈদগাঁও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিমল চাকমা বলেন, পাহাড়ি ঢলের কারণে পাড় ভেঙে যাওয়ায় মূলত এ দুর্যোগে পড়েছেন অধিবাসীরা। খবর পেয়ে চেয়ারম্যানসহ ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করা হয়। কোনো ধরনের প্রাণহানি হয়নি। প্রাথমিক খবরে ১৪টি বাড়ি পূর্ণাঙ্গ এবং ৭৪টি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত। পানি নেমে যাওয়ায় বর্তমানে তলিয়ে যাওয়া অবস্থায় নেই। পরিপূর্ণ ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে আরও কয়েকদিন সময় লাগবে। আপাতত উপজেলা প্রশাসন থেকে জরুরি সাহায্য দেওয়া হচ্ছে। বৃষ্টি না হলে ক্ষতিগ্রস্তরা আপাতত ঝুঁকিমুক্ত।

ঠিকাদারের অবহেলার মাশুল দিচ্ছে কয়েকশ পরিবার

এলজিইডি কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ মামুন খান বলেন, এটা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। সবেমাত্র কাজ শুরু করেছিলেন ঠিকাদার। বাঁধের দু’হাজার ২০০ মিটার অংশ মেরামতের জন্য এক কোটি ১৯ লাখ টাকা বরাদ্দ হয়েছে। কিন্তু প্রোপারলি কাজ শুরুর আগেই প্রকৃতির কারণে এমন দুর্ঘটনা সত্যি কষ্টদায়ক। শনিবার জেলা অফিসের সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী ইউএনওকে নিয়ে ঘটনাস্থলে গেছেন। কীভাবে দ্রুত টেকসইভাবে কাজ শেষ করা যায় তা নির্ধারণ করা হচ্ছে। পাকা সড়কের কিনার অংশটি আরসিসি ঢালাই দিয়ে টেকসইভাবে রাত-দিন কাজ করে গাইডওয়াল তৈরি হবে। ক্ষতিগ্রস্ত সড়কটিও আমাদের (এলজিইডির)। পানি প্রবেশ বন্ধ করা গেলে দ্রুত সড়ক যোগাযোগ মেরামত করা হবে।

সায়ীদ আলমগীর/এফএ/এমএস

Read Entire Article