ড. ইউনূসের পক্ষে-বিপক্ষে সংবাদ সম্মেলন, যে যা বললেন

3 months ago 52

নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও গ্রামীণ ব্যাংকের পক্ষে-বিপক্ষে পাল্টাপাল্টি প্রেস ব্রিফিং হয়েছে। প্রথমে গ্রামীণ ব্যাংকের পক্ষে ব্রিফিং করেন তাদের আইনজীবী। সেখানে ‘বিভ্রান্তিকর তথ্য ছাড়ানো’র অভিযোগ তোলা হয় ড. ইউনূসের আইনজীবীর বিরুদ্ধে। পরে ড. ইউনূসের আইনজীবী পাল্টা বক্তব্য তুলে ধরেন।

গ্রামীণ ব্যাংকের আইনজীবী বলেছেন, ড. ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংকে থাকাকালে তার পারিবারিক প্রতিষ্ঠান প্যাকেজেস করপোরেশন লিমিটেডকে ব্যাংক থেকে বেআইনিভাবে সাড়ে ৯ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছেন।

এর জবাবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আইনজীবী বলেন, গ্রামীণ ব্যাংককে স্থায়ী রূপ দিয়ে ব্যাংকে পরিণত করতে সরকার বলে, ‘এই গ্রামীণ ব্যাংক প্রকল্পে যত অর্থ আছে, যত বিনিয়োগ আছে, সব এখানে দিয়ে দিতে হবে।’ তিনি গ্রামীণ ব্যাংককে সব দিয়ে দিলেন।

সুপ্রিম কোর্টের অ্যানেক্স ভবনের সামনে সোমবার (৩ জুন) দুপুরে পাল্টাপাল্টি এই প্রেস ব্রিফিং হয়।

গ্রামীণ ব্যাংকের বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ গত ২৬ মে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) লিখিত অভিযোগ দেয়। অভিযোগে বলা হয়, ড. ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংকে থাকাকালে তার পারিবারিক প্রতিষ্ঠান প্যাকেজেস করপোরেশন লিমিটেডকে ব্যাংক থেকে বেআইনিভাবে সাড়ে ৯ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছেন।

আরও পড়ুন

সোমবার প্রেস ব্রিফিংয়ে গ্রামীণ ব্যাংকের প্রধান আইন উপদেষ্টা মাসুদ আখতার অভিযোগ করেন, ড. ইউনূস তার আইনজীবীর মাধ্যমে গ্রামীণ ব্যাংকের সৃষ্টি নিয়ে একটি বিভ্রান্তিকর তথ্য জনগণের সামনে তুলে ধরেছেন।

তিনি বলেন, প্যাকেজেস করপোরেশন একটি রুগ্ন প্রতিষ্ঠান ছিল। এই প্রতিষ্ঠানের মালিক কে? ড. মুহাম্মদ ইউনূস, তার বাবা ও তার ভাইয়েরা। এই প্রতিষ্ঠানকে দেউলিয়া হওয়ার হাত থেকে বাঁচানোর জন্য গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশ ভঙ্গ করে ড. ইউনূস ঋণ দেন। …ব্যাংক কোম্পানি আইনেও স্পষ্টভাবে বলা আছে যে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তার কোনো নিজস্ব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করতে পারেন না এবং ঋণ ও সুদ মওকুফ করতে পারেন না। ড. ইউনূস এর সব কিছুই করেন।

এতদিন পরে দুদকে অভিযোগ কেন দেওয়া হলো? এমন প্রশ্নের জবাবে মাসুদ আখতার বলেন, ড. ইউনূস ২০১১ সালে আদালতের আদেশে এখান (গ্রামীণ ব্যাংক) থেকে চলে যান। তখন দুর্নীতির যেসব অভিযোগ এসেছিল, একটিরও তদন্ত করার সুযোগ দেননি, ম্যানেজ করেছেন। পরে ২০২০ সাল পর্যন্ত যে কয়জন এমডি (ব্যবস্থাপনা পরিচালক) হয়েছেন, তাদের একজন মারা গেছেন, বাকিরা ড. ইউনূসের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। অর্থাৎ তার প্রহরীরাই প্রতিষ্ঠানে ছিলেন।

মাসুদ আখতার বলেন, …২০২০ সালের পর বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ দায়িত্বে আসার পর তারা একটা বিস্তারিত নিরীক্ষা (কমপ্রিহেনসিভ অডিট) করে। ১৯৮৩ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত নিরীক্ষা করলো। ... এসব তথ্য ২০২৩ সালে সামনে আসে। যে কারণে আমাদের পক্ষ থেকে কোনো দেরি হয়নি। বর্তমান পর্ষদ যদি এগুলো যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে না নিয়ে আসত, আগের মতো দেরি করত, তাহলে তারাও অপরাধের ভাগীদার হতো।

এর কিছুক্ষণ পরে পাল্টা ব্রিফিংয়ে মাসুদ আখতারের বক্তব্যের সূত্র টেনে ড. ইউনূসের আইনজীবী ব্যারিস্টার মো. আবদুল্লাহ-আল-মামুন বলেন, উনি (মাসুদ আখতার) বললেন, বাবার আগে ছেলের জন্ম হয়েছে! অর্থাৎ গ্রামীণ ব্যাংক ইউনূসকে জন্ম দিয়েছে! ইউনূস কিছু না! অথচ গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশের ৩৭ ধারায় আছে, ড. ইউনূস যে প্রকল্প দিয়ে ক্ষুদ্র ঋণ প্রকল্প সৃষ্টি করেছেন, ওই প্রকল্পের নামই ছিল গ্রামীণ ব্যাংক প্রকল্প।

তাই তিনি সরকারের কাছে আবেদন করলেন, এটিকে একটি স্থায়ী রূপ দেওয়ার জন্য ব্যাংকে পরিণত করতে। সরকার বলল, ‘এই গ্রামীণ ব্যাংক প্রকল্পে তোমার যত অর্থ আছে, যত বিনিয়োগ আছে, সব এখানে দিয়ে দিতে হবে।’ ড. ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংককে দিয়ে দিলেন।

এক প্রশ্নের জবাবে আবদুল্লাহ-আল-মামুন বলেন, একটি বিশেষ গোষ্ঠী বাংলাদেশের বিশেষ করে সরকারের ওপর ভর করেছে, সঙ্গে আন্তর্জাতিকভাবেও একটি গোষ্ঠী জড়িত আছে। কারণ, সারা পৃথিবীর নোবেল বিজয়ীদের নেতৃত্বে থাকবে বাংলাদেশের একজন নোবেল বিজয়ী, তারা এটি সহ্য করতে পারছে না।

এফএইচ/এমএইচআর/এএসএম

Read Entire Article