ড. শামসুজ্জোহার মৃত্যুর দিন ‘জাতীয় শিক্ষক দিবস’ ঘোষণার দাবিতে স্মারকলিপি
১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে দেশের প্রথম শহীদ বুদ্ধিজীবী ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. সৈয়দ মুহম্মদ শামসুজ্জোহার মৃত্যুর দিনকে ‘জাতীয় শিক্ষক দিবস’ হিসেবে ঘোষণার দাবিতে শিক্ষা উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে।
বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) স্মারকলিপি জমা দেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রাবি সমন্বয়ক সালাহউদ্দিন আম্মার।
স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাসে ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এ আন্দোলনে যেসব সাহসী ব্যক্তিত্ব তাদের জীবন উৎসর্গ করেছেন, তাদের মধ্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের শিক্ষক ড. শামসুজ্জোহা প্রথম শহীদ বুদ্ধিজীবী ছিলেন। ছাত্রদের জীবন রক্ষায় তিনি নিজের জীবন উৎসর্গ করে বাংলাদেশে শিক্ষক নেতৃত্বের এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তার এ আত্মত্যাগ পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন মুক্তিসংগ্রামে বিপ্লবীদের অনুপ্রাণিত করেছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রথম শহীদ আবু সাঈদও ‘জোহা স্যার’ হতে চেয়েছিলেন উল্লেখ করে স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়েছে, সর্বশেষ ’২৪-এর জুলাই অভ্যুত্থানে যখন শিক্ষার্থীরা গুলির সম্মুখীন হয়েছিল, তখন শিক্ষকরা নির্লিপ্ত ছিলেন। এ সময় শহীদ শামসুজ্জোহা স্যারের অনুপস্থিতি আমরা গভীরভাবে অনুভব করেছি। শহীদ আবু সাঈদও লিখেছিলেন, আমি জোহা স্যার হতে চাই।
শহীদ শামসুজ্জোহা মৃত্যুর দিনটি জাতীয় শিক্ষক দিবস হিসেবে ঘোষণার দাবি জানিয়ে স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, আমরা বিশ্বাস করি, জাতি হিসেবে আমাদের নৈতিক দায়িত্ব হল শহীদ জোহা স্যারের আত্মত্যাগকে যথাযথ সম্মান দেওয়া। তার আদর্শ ও ত্যাগ নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের জন্য চিরন্তন প্রেরণা হয়ে থাকবে। অতএব শহীদ শামসুজ্জোহাকে যথাযোগ্য জাতীয় মর্যাদায় ভূষিত করা এবং তার আত্মত্যাগকে স্মরণীয় রাখতে প্রতি বছর ১৮ ফেব্রুয়ারিকে জাতীয় শিক্ষক দিবস হিসেবে ঘোষণা করার দাবি জানাচ্ছি।
সেই সঙ্গে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ জোহার স্মরণে বিশেষ আলোচনা সভা ও শ্রদ্ধাঞ্জলি অনুষ্ঠান আয়োজন করার দাবি জানানো হয়েছে স্মারকলিপিতে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রাবির সমন্বয়ক সালাহউদ্দিন আম্মার বলেন, স্বাধীনতা আন্দোলন থেকে চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান, যে কোনো আন্দোলনে শহীদ শামসুজ্জোহা আমাদের উদ্দীপনা ও সাহস হিসেবে কাজ করেছেন। চব্বিশের আন্দোলনের প্রথম শহীদ আবু সাঈদও জোহা স্যার হতে চেয়েছিলেন। আবু সাঈদকে নিয়ে দিবস হতে পারলে, জোহা স্যার কেন নয়। তিনি যদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতেন, তাহলে ঠিকই এতদিনে শিক্ষক দিবস ঘোষণা করা হয়ে যেত।
তিনি আরও বলেন, উত্তরবঙ্গের মানুষ বলেই কি এত অবহেলা? এটি আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি। আজ শিক্ষা উপদেষ্টা এবং গত সোমবার স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি জমা দিয়েছি। তারা আমাদেরকে দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, ১৯৬৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি শিক্ষার্থীদের বাঁচাতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রক্টর ড. সৈয়দ মুহম্মদ শামসুজ্জোহা পাকিস্তানি সৈন্যদের গুলির নিশানা হন। পরে বেয়নেটের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত করে তাকে হত্যা করা হয়। ১৮ ফেব্রুয়ারি শামসুজ্জোহার মৃত্যুর পর থেকেই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দিনটিকে ‘শিক্ষক দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের দাবি, দিনটি যেন ‘জাতীয় শিক্ষক দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।