ডন ব্র্যাডম্যানের ‘শূন্য’ করার সেই হতাশার দিন

1 month ago 10

ক্রিকেটের প্রায় দেড়শ বছরে অনেক হাসি-কান্না, পাওয়া না পাওয়ার ইতিহাস জড়িয়ে রয়েছে। অনেক দুর্দান্ত রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে এই বিশাল সময়টাতে। আবার অনেক হতাশার মুহূর্তও সৃষ্টি হয়েছিল। সেই হতাশার মুহূর্তগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত হতাশার জন্ম দিয়েছিলেন এক বিখ্যাত ক্রিকেটার।

স্যার ডোনাল্ড ব্র্যাডম্যান (ডন ব্র্যাডম্যান)। জীবনের শেষ টেস্টে মাত্র চারটি রান করতে পারলেই তার দুটি অর্জন হতো। ৭০০০ রান করার পাশাপাশি, গড় হয়ে যেতো ১০০। কিন্তু শেষ ম্যাচটিতে ডাক মেরে বসলেন তিনি।

১৯৪৮: ডন ব্র্যাডম্যানের হতাশাজন শূন্যের দিন

১৯৪৮ সালের ১৪ আগস্ট, ঐতিহাসিক একটি দিন। ওভালে ইংল্যান্ডের মুখোমুখি স্যার ডোনাল্ড ব্র্যাডম্যানের অস্ট্রেলিয়া। আগে থেকেই ঘোষণা দেয়া হলো, এই ম্যাচটিই হচ্ছে ব্র্যাডম্যানের শেষ ম্যাচ। আর মাত্র চারটি রান করতে পারলেই ৭০০০ রান হয়ে যাবে ডন ব্র্যাডম্যানের। সে সঙ্গে তার গড় হবে ১০০। টেস্ট ক্রিকেটে ১০০ গড় নিয়ে ক্যারিয়ার শেষ করতে পারার এক বিরল কৃতিত্বের অধিকারী হয়ে যাবেন ব্র্যাডম্যান।

টেস্ট ম্যাচটা ঐতিহাসিক। শুধু ব্র্যাডম্যানের শেষ টেস্ট নয় বলে। কারণ, ইংল্যান্ড এই ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার কাছে অলআউট হয়েছিল ৫২ রানে। জবাবে আর্থার মরিসের ১৯৬ রানের ওপর ভর করে ৩৮৯ রান করে অস্ট্রেলিয়া। জবাব দিতে নেমে ইংল্যান্ড এবার অলআউট হলো ১৮৮ রানে। যার ফলে এক ইনিংস ও ১৪৯ রানে হারে ইংলিশরা।

ইনিংস ব্যাবধানে জয়ের কারণে দ্বিতীয় ইনিংসে আর ব্যাট করতে হয়নি অস্ট্রেলিয়াকে। স্যার ডন ব্র্যাডম্যান ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট ম্যাচে আরেকটি ইনিংসে ব্যাট করারও সুযোগ পাননি।

ডন ব্র্যাডম্যান

স্যার ডন ব্র্যাডম্যাচের ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট দেখতে ১৯৪৮ সালেই ওভালের নামনে দর্শকদের বিশাল লাইন

ইংল্যান্ডের চরম হতাশার এই দিনে এরিক হলিস-এর দ্বিতীয় বলে বোল্ড হযে যান ব্র্যাডম্যান। সে সঙ্গে টেস্ট ক্রিকেট সৃষ্টি হলো একটি আফসোসের ইতিহাস। ৯৯.৯৪ গড় নিয়ে ক্যারিয়ার শেষ করলেন ব্র্যাডম্যান।

১৯৯০: শচিনের আগমনী বার্তা

ইংল্যান্ডের ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে আজকের দিনে দুর্দান্ত এক ইতিহাস সৃষ্টি করেন ভারতের কিংবদন্তি শচিন টেন্ডুলকার। মাত্র ১৭ বছর ১১২ দিন বয়সে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তার প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি (১১৯* রান) হাঁকান শচিন।

এই কীর্তি গড়ে তিনি টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে সেঞ্চুরি হাঁকানো তৃতীয় সর্বকনিষ্ঠ ব্যাটার হিসেবে নাম লিখেন। পাকিস্তানের মুশতাক মোহাম্মদ এবং বাংলাদেশের মোহাম্মদ আশরাফুলের পরে, যিনি ২০০১ সালের সেপ্টেম্বরে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সবচেয়ে কম বয়সে সেঞ্চুরির রেকর্ড ভাঙেন, শচিনের নাম ইতিহাসে লেখা রয়েছে।

শচিন টেন্ডুলকার

জয়ের জন্য ৪০৮ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ভারত ১৮৩ রানে ছয় উইকেট হারিয়ে পরাজয়ের দ্বারপ্রান্তে ছিল; কিন্তু শচিন এবং মনোজ প্রভাকর শেষ দুই ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে অবিচল ব্যাটিং করে ম্যাচটি ড্র-তে রূপ দেন। শচিন খেলেন অপরাজিত ১১৯ রানের ইনিংস।

শচিনের এই ইনিংস শুধু টেস্ট বাঁচায়নি, বরং তার অসাধারণ প্রতিভা এবং মানসিক দৃঢ়তার প্রমাণ দিয়েছে। এই তরুণ সেঞ্চুরি ক্রিকেট বিশ্বে শচিনের আগমনের এক ঐতিহাসিক সূচনা চিহ্নিত করে রেখেছিল।

১৯৮৪: ওভালে ইংল্যান্ডকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ‘ব্ল্যাকওয়াশ’

টেস্ট ক্রিকেটে ইংল্যান্ড ঘরের মাঠে কখনোই কোনো দলের কাছে ৫-০ ব্যবধানে হারেনি, শুধু একবার ছাড়া। ১৯৮৪ সালে ক্লাইভ লয়েডের ওয়েস্ট ইন্ডিজ একবারই ইংল্যান্ডকে ঘরের মাঠে ৫-০ ব্যবধানে ‘ব্ল্যাকওয়াশ’ উপহার দিয়েছিল, ঠিক আজকের এই দিনে।

ওভালে ক্লাইভ লয়েডের নেতৃত্বাধীন ওয়েস্ট ইন্ডিজ শেষ দিনের লাঞ্চ বিরতির আগেই ইংল্যান্ডকে মাত্র ২০২ রানে অলআউট করে দেয়। তাতে ১৭২ রানের বিশাল ব্যবধানে জয় ছিনিয়ে নেয় ক্যারিবীয়রা।

এ জয়ের মাধ্যমে তারা সিরিজটি ৫-০ ব্যবধানে জিতে নেয়, যা ইংল্যান্ডের ঘরের মাঠে প্রথম এবং একমাত্র ‘ব্ল্যাকওয়াশ’ হিসেবে ইতিহাসে চিহ্নিত হয়ে আছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের এই দাপুটে পারফরম্যান্স তাদের সেই সময়ের অপ্রতিরোধ্য আধিপত্যের প্রমাণ বহন করে। এই সিরিজে ইংল্যান্ড কোনো টেস্টে জয় বা ড্র করতে পারেনি, যা তাদের ক্রিকেট ইতিহাসে একটি লজ্জাজনক অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়।

 ১৯৮১: দক্ষিণ আফ্রিকার কিংবদন্তি ব্যাটার ডাডলি নোর্সের বিদায়

দক্ষিণ আফ্রিকার অন্যতম সেরা ব্যাটার আর্থার ডাডলি নোর্স এই দিনে ডারবানে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ৩৪ টেস্টে ৫৩.৮১ গড়ে ২,৯৬০ রান সংগ্রহ করেন তিনি। তাকে বলা হতো দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিংয়ের মেরুদণ্ড। ক্যারিয়ারে ৯টি সেঞ্চুরি ও ১৪টি হাফ সেঞ্চুরির ইনিংস খেলেন তিনি। যার মধ্যে ৭টি সেঞ্চুরি এসেছে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে।

১৯৩৫-৩৬ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজে তিনি একাই লড়াই করেন, ৫৭.৫৫ গড়ে ওল্ড ওয়ান্ডারার্সে ২৮৯ মিনিটে ৩৬টি চারের সাহায্যে ২৩১ রানের ঐতিহাসিক ইনিংস খেলেন। এটি ছিল টেস্টে প্রথম ইনিংসে শূন্য এবং দ্বিতীয় ইনিংসে ডাবল সেঞ্চুরি করা একমাত্র ব্যাটারের রেকর্ড।

১৯৪৭ সালে ইংল্যান্ড সফরে তিনি ৬২১ রান (গড় ৬৯) করেন, যার মধ্যে ট্রেন্ট ব্রিজে অ্যালান মেলভিলের সঙ্গে ৩১৯ রানের রেকর্ড জুটি ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার টেস্ট ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। তবে তার সবচেয়ে বীরত্বপূর্ণ ইনিংস এসেছিল ১৯৫১ সালে ট্রেন্ট ব্রিজে। ভাঙা বৃদ্ধাঙ্গুলি নিয়ে তিনি ৯ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে ব্যথা সহ্য করে ২০৮ রানের অসাধারণ ইনিংস খেলেন, যা দক্ষিণ আফ্রিকাকে ১৬ বছর পর প্রথম টেস্ট জয়ের স্বাদ এনে দেয়। এই ইনিংসটি ক্রিকইনফো তার ‘সবচেয়ে বিখ্যাত ইনিংস’ হিসেবে বর্ণনা করেছে।

১৯৪৮ সালে উইজডেন ক্রিকেটার অফ দ্য ইয়ার নির্বাচিত হন নোর্স। ১৯৫১ সালে টেস্ট ক্রিকেট থেকে তিনি অবসর নেন। তার ১২,৪৭২ রান (গড় ৫১.৫৩) এবং ৪১টি সেঞ্চুরির প্রথম শ্রেণির ক্যারিয়ার তাকে দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট ইতিহাসে একজন কিংবদন্তি করে রেখেছে।

২০০৬: লর্ডসে ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ রানের ইনিংস

ক্রিকেটের মক্কা খ্যাত লর্ডসে ইংল্যান্ডের নারী ক্রিকেটার ক্লেয়ার টেলর এক অসাধারণ ইনিংস খেলেন, যা ওয়ানডেতে (নারী/পুরুষ মিলিয়ে) লর্ডসে খেলা সর্বোচ্চ রানের ইনিংস হিসেবে ইতিহাসে ঠাঁই করে নিয়েছে।

ভারতের বিপক্ষে নারী ওয়ানডে ম্যাচে তিনি মাত্র ১৫১ বলে ১৫৬ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলেন, যা লর্ডসে ওয়ানডে ক্রিকেটে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত স্কোর হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। ক্লেয়ার টেলর পেছনে ফেলেন ১৯৭৯ সালে ভিভ রিচার্ডসের করা ১৩৮* রানের রেকর্ডকে।

টেলরের এই অসাধারণ পারফরম্যান্স তাকে লর্ডসের সম্মানজনক অনার্স বোর্ডে নাম লেখানোর গৌরব এনে দিয়েছে। তিনি একমাত্র নারী ক্রিকেটার হিসেবে এই কীর্তি অর্জন করেন।

আইএইচএস/

Read Entire Article