ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন শেষ হয়েছে। বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) নির্বাচনের পরের দিন সকাল সাড়ে আটটার দিকে দেওয়া হয় চূড়ান্ত ফলাফল। ফলাফল ঘোষণার পর ক্যাম্পাসজুড়ে এখন এক ধরনের স্বস্তি ও আলোচনার পরিবেশ বিরাজ করছে।
নির্বাচনী প্রচারণা আর ভোটের উচ্ছ্বাস শেষ হলেও শিক্ষার্থীদের মধ্যে নতুন প্রত্যাশা জন্ম নিয়েছে। শিক্ষার্থীদের মন্তব্য, নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাজের মাধ্যমে বোঝা যাবে এই নির্বাচনের আসল সাফল্য কতটা।
ডাকসুর ভিপি পদে নির্বাচিত হয়েছেন ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের আবু সাদিক কায়েম এবং জিএস পদে এস এম ফরহাদ। নতুন নেতৃত্বকে ঘিরে শিক্ষার্থীদের আশা, হল ও ক্যাম্পাসের নানা সমস্যার দ্রুত সমাধান করা।
শিক্ষার্থীরা মনে করছেন, ডাকসু শুধু প্রতীকী প্রতিষ্ঠান নয়। বরং শিক্ষার্থীর অধিকার ও দাবি তুলে ধরার একটি বড় প্ল্যাটফর্ম। তবে অনেকের মনে সংশয়ও রয়ে গেছে, প্রতিনিধিরা কি সত্যিই প্রতিশ্রুতি পূরণ করবেন, নাকি আগের মতো আনুষ্ঠানিকতা পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকবেন?
অর্থনীতি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ফাহিমা হক জাগো নিউজকে বলেন, আমরা চাই নেতৃত্ব যে বা যারা পেয়েছে তারা যেন সত্যিই সাধারণ শিক্ষার্থীর পাশে দাঁড়ায়। দলের পরিচয় বা পদ নয়, কাজ দিয়েই তাদের বিচার করবো আমরা। আমরা তাদের ইশতেহারের পূর্ণ বাস্তবায়ন দেখতে চাই।
একই বিভাগের শিক্ষার্থী হাসিবুল হাসান বলেন, গত কয়েক বছরে যতটা বিশৃঙ্খলা দেখেছি, এখন পরিস্থিতি কিছুটা ভালো মনে হচ্ছে। ডাকসু নির্বাচনের পর মূলত ক্যাম্পাসে একধরনের ইতিবাচক পরিবেশ লক্ষ্য করছি। ডাকসু যেন প্রতিবছর হয় সে বিষয়ে এখনকার ডাকসু নেতারা লক্ষ্য রাখবেন বলে আশা করি।
আইন বিভাগের শিক্ষার্থী পাভেল আহমেদ বলেন, আমরা চাই ক্যাম্পাসে সহনশীল ছাত্ররাজনীতি। ভিন্ন মতকে জায়গা দিতে হবে। এক পক্ষের আধিপত্য বা ভয়ভীতি যদি আবার শুরু হয়, তাহলে নির্বাচনের অর্থ থাকবে না। এক্ষেত্রে ডাকসুর নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দায়িত্ব নিতে হবে।
উর্দু বিভাগের শিক্ষার্থী মো. ইউসূফ বলেন, এখন নির্বাচিত প্রতিনিধিদের প্রথম কাজ হওয়া উচিত খাবারের মান, পরিবহন ও নিরাপত্তার মতো বিষয়গুলোতে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ। পাশাপাশি হলে সিট বণ্টনে স্বচ্ছতা ও দখলদারি রাজনীতি বন্ধে তাদের ইশতেহার বাস্তবায়ন দেখতে চাই।
ফিলোসফির আলী হোসেন বলেন, অনেক বছর পর সুষ্ঠু নির্বাচনের অভিজ্ঞতা ক্যাম্পাসে আশা জাগিয়েছে। তবে সেই আশার বাস্তবায়ন নির্ভর করছে নির্বাচিত নেতাদের ওপর। ডাকসুর কাজ শুধু দাবিনামা শোনা নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক পরিবেশ উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা রাখা।শিক্ষার্থীদের অভিযোগ-আকাঙ্ক্ষার প্রতি দ্রুত সাড়া দিলে এই প্রতিষ্ঠান আবার আস্থা অর্জন করতে পারবে। অন্যথায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে হতাশা তৈরি হবে এবং অতীতের মতো ডাকসু আবারও শুধু নামমাত্র প্রতিষ্ঠান হয়ে পড়বে।
এফএআর/এমএমকে/এমএস