ডায়াবেটিস বর্তমানে শুধু একটি রোগ নয়, বরং একটি বৈশ্বিক স্বাস্থ্য সমস্যা। বাংলাদেশসহ সারা পৃথিবীতে প্রতিদিনই বাড়ছে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা। কিন্তু অনেকেই জানেন না -ডায়াবেটিস আসলে কেন হয়?
এর মূল কারণগুলো জানলে প্রতিরোধ করাও অনেক সহজ হয়ে যায়।
ডায়াবেটিস কী?
ডায়াবেটিস হলো এমন একটি অবস্থা, যখন শরীরের অগ্ন্যাশয় বা প্যানক্রিয়াস গ্রন্থি ঠিকমতো ইনসুলিন তৈরি করতে পারে না বা তৈরি হওয়া ইনসুলিন শরীরে সঠিকভাবে কাজ করে না। ইনসুলিন হলো এমন একটি হরমোন, যা আমাদের খাবারের শর্করা (গ্লুকোজ) শরীরে শক্তি হিসেবে ব্যবহার করতে সাহায্য করে। ইনসুলিনে সমস্যা হলে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে যায় এবং সেটিই ডায়াবেটিস নামে পরিচিত।
ডায়াবেটিস দুই ধরনের হতে পারে-
টাইপ–১ ডায়াবেটিস: শরীরের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা অগ্ন্যাশয়ের ইনসুলিন উৎপাদনকারী কোষ নষ্ট করে দেয়, ফলে ইনসুলিন একেবারেই তৈরি হয় না।
টাইপ–২ ডায়াবেটিস: শরীর যথেষ্ট ইনসুলিন তৈরি করতে পারে না বা ইনসুলিন রেজিসটেন্স-এর কারণে তা ঠিকমতো কাজ করে না, ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায়।
যেসব কারণে ডায়াবেটিস হতে পারে
১. বংশগত কারণ
আমেরিকান ডায়াবেটিস অ্যাসোসিয়েশনের ২০২৩ সালের তথ্যমতে, যাদের পরিবারে বাবা-মা বা কাছের আত্মীয়ের ডায়াবেটিস আছে, তাদের ঝুঁকি অনেক বেশি। গবেষণায় দেখা গেছে, পরিবারে ডায়াবেটিসের ইতিহাস থাকলে টাইপ–২ ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি কয়েকগুণ বেড়ে যায়।
২. জীবনযাত্রার সমস্যা
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, দীর্ঘ সময় বসে কাজ করা, নিয়মিত ব্যায়াম না করা, পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব—এসব কারণে শরীরে ইনসুলিনের কার্যকারিতা কমে যায়।
৩. খাদ্যাভ্যাস
হার্ভার্ড টিএইচ চ্যান স্কুল অব পাবলিক হেলথ ২০২১ সালে প্রকাশিত এক প্রবন্ধে জানায় যে, অতিরিক্ত ভাজাপোড়া, মিষ্টি, ফাস্টফুড, কোমল পানীয় ও প্রক্রিয়াজাত খাবার খেলে শরীরে চিনি ও চর্বি জমে যায়, যা ইনসুলিন প্রতিরোধ বাড়ায়।
৪. অতিরিক্ত ওজন ও স্থূলতা
স্থূলতা হলো টাইপ–২ ডায়াবেটিসের প্রধান ঝুঁকির কারণ। বিশেষ করে পেটের মেদ ইনসুলিন প্রতিরোধ বা রেজিসটেন্স বাড়িয়ে দেয়, জানিয়েছে সেন্টার ফর ডিজিস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন।
৫. মানসিক চাপ ও স্ট্রেস
মায়ো ক্লিনিকের তথ্য অনুযায়ী, অতিরিক্ত মানসিক চাপ হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে। কর্টিসল নামের হরমোন বেড়ে গেলে শরীরে গ্লুকোজের মাত্রা বাড়তে পারে।
৬. বয়স ও অন্যান্য শারীরিক অবস্থা
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ডায়াবেটিস অ্যান্ড ডাইজেস্টিভ অ্যান্ড কিডনি ডিজিজেস বলছে, ৪০ বছরের পর ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি বাড়তে থাকে। আবার গর্ভাবস্থায় অনেক নারীর গর্ভকালীন ডায়াবেটিসও দেখা দেয়।
ঝুঁকি কমাতে করণীয়
ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে চাইলে জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনা জরুরি। প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটা বা ব্যায়াম করা, সুষম খাবার খাওয়া, পর্যাপ্ত ঘুমানো এবং মানসিক চাপ কমানো ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সাহায্য করে। যাদের পরিবারে ডায়াবেটিসের ইতিহাস আছে, তাদের নিয়মিত রক্তে গ্লুকোজ পরীক্ষা করানো উচিত।
ডায়াবেটিস একবার হলে সম্পূর্ণ নিরাময় সম্ভব না হলেও নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। তাই সচেতন জীবনযাত্রাই হলো ডায়াবেটিস প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের প্রধান উপায়।
সূত্র: আমেরিকান ডায়াবেটিস অ্যাসোসিয়েশন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, হার্ভার্ড টিএইচ চ্যান স্কুল অব পাবলিক হেলথ, সেন্টার ফর ডিজিস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন, মায়ো ক্লিনিক
এএমপি/এএসএম