ডিগ্রি পেল ৮ হাজারের বেশি গ্রাজুয়েট

1 month ago 14

নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির (এনএসইউ) ২৫তম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে ৮ হাজার ১৯ জন শিক্ষার্থীকে গ্র্যাজুয়েশন ডিগ্রি প্রদান করা হয়েছে। দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিনের পক্ষে সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন শিক্ষা ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।

শনিবার (৭ ডিসেম্বর) বিকেলে ঢাকার পূর্বাচলে চীন-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে এ সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়।

সমাবর্তন অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী বক্তব্য প্রদান করেন সমাবর্তন মার্শাল এবং গণিত ও পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মো. মামুন মোল্লা। 

অনুষ্ঠানে শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফলের জন্য ২০ জন মেধাবী শিক্ষার্থীকে চ্যান্সেলর স্বর্ণপদক ও ভাইস চ্যান্সেলর স্বর্ণপদক প্রদান করেন। স্বর্ণপদক প্রাপ্তদের মধ্যে ২০২২ এবং ২০২৩ সালের স্নাতক ব্যাচের ভ্যালেডিক্টোরিয়ানদ্বয় তাদের অনুভূতি ব্যক্ত করেন। পরে শিক্ষা উপদেষ্টার অনুমোদনক্রমে উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল হান্নান চৌধুরী সমাবর্তন কার্যক্রম শুরু করেন।

অসাধারণ একাডেমিক পারফরম্যান্সের জন্য স্কুল অফ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ফিজিক্যাল সায়েন্সেসের একই প্রোগ্রাম থেকে ভ্যালেডিক্টোরিয়ান কাজী মোসাদ্দেকুর (২০২২), কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ব্যাচেলর অফ সায়েন্স এবং আলিফ এলহাম খান (২০২৩) কে চ্যান্সেলর স্বর্ণপদক প্রদান করা হয়। এ ছাড়া স্কুল অব বিজনেস অ্যান্ড ইকোনমিক্স থেকে ফাহিম আহমেদ (২০২২) এবং নামিরাহ আহমেদ বুশরা (২০২৩) মাস্টার অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন প্রোগ্রামে চ্যান্সেলর গোল্ড মেডেল পেয়েছেন।

উপাচার্যের স্বর্ণপদক বিজয়ীদের তালিকায় একাধিক শাখায় বেশ কয়েকজন ব্যতিক্রমী স্নাতককে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। ২০২২ সালের জন্য স্নাতক সম্মাননাপ্রাপ্তদের মধ্যে মাহির ফয়সাল (ইংরেজিতে ব্যাচেলর অফ আর্টস), আদিবা নওয়াজ (অর্থনীতিতে স্নাতক বিজ্ঞান), আফসানা বিনতে রাকিব (কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশলে স্নাতক বিজ্ঞান) এবং সামরিন নাওয়ার (বায়োকেমিস্ট্রি এবং বায়োটেকনোলজিতে স্নাতক বিজ্ঞান) অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।

স্নাতক পর্যায়ে ২০২২ সালের পদকপ্রাপ্তরা হলেন মোহাম্মদ তানভীর ইসলাম (মাস্টার অব আর্টস ইন ইংলিশ), রোজানা তাবাসসুম (মাস্টার অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন), মাজহারুল ইসলাম (মাস্টার অব সায়েন্স ইন কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং) এবং শ্রেষ্ঠ চৌধুরী (মাস্টার অব পাবলিক হেলথ)।

২০২৩ সালের স্নাতক উপাচার্য স্বর্ণপদক বিজয়ীরা হলেন- শাহাজাদী শারমিন (ইংরেজিতে ব্যাচেলর অব আর্টস), সাফরিনা কামাল (অর্থনীতিতে স্নাতক), সানজানা রহমান নিঝু (কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক) এবং জাওয়াতা আফনান শারারা (বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড বায়োটেকনোলজিতে স্নাতক)। স্নাতক পর্যায়ে স্রেজন দত্ত (মাস্টার অব আর্টস ইন ইংলিশ), সুরঞ্জিত দাস (মাস্টার অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন), সৌফিয়া নেলি রোশনি (মাস্টার অব সায়েন্স ইন কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং) এবং মিঠুন কুমার বিশ্বাস (মাস্টার অব সায়েন্স ইন এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট)।

অনুষ্ঠানে সমাবর্তন বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইস। গ্রাজুয়েটদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা ও ন্যায়বিচারের জন্য লড়াই চালিয়ে যাওয়া নির্ভর করছে আপনাদের ওপর। আগামী প্রজন্মকে আশা, সম্মান এবং সাম্যের আলোকবর্তিকা হিসাবে নেতৃত্ব দেওয়ার দায়িত্ব আপনাদের।

উদ্বোধনী বক্তব্যে এনএসইউ বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান আজিম উদ্দিন আহমেদ গ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থীদের কৃতিত্বের জন্য অভিনন্দন জানান এবং তাদের কঠোর পরিশ্রম, নিষ্ঠা এবং দৃঢ়তার প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, গ্রাজুয়েটদের জীবনে আজ অনেক দিনের স্বপ্ন সফল হওয়ার দিন। তাদের কঠোর পরিশ্রম ও অধ্যাবসায়ের ফসল এই দিনকে স্বরণীয় করে রাখতে আমরা সমবেত হয়েছি। আজ আমাদের সকলের জন্য গর্ব ও আনন্দের দিন।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন এনএসইউ উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল হান্নান চৌধুরী। উপাচার্য বলেন, একটি টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে আমাদের অভিন্ন দায়িত্বের কথা আমি স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি। এই ডিগ্রি নিয়ে, আপনারা কেবল স্নাতক নন, পরিবর্তনের এজেন্ট, শ্রেষ্ঠত্বের দূত এবং এনএসইউর মিশনের মশাল বহনকারী।

অনুষ্ঠানে স্কুল অব বিজনেস অ্যান্ড ইকোনমিক্সের ডিন অধ্যাপক এ কে এম ওয়ারেসুল করিম, স্কুল অব হিউম্যানিটিজ অ্যান্ড সোশ্যাল সায়েন্সেসের ডিন অধ্যাপক মো. রিজওয়ানুল ইসলাম, স্কুল অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ফিজিক্যাল সায়েন্সেসের ডিন অধ্যাপক সাজ্জাদ হোসেন এবং স্কুল অব হেলথ অ্যান্ড লাইফ সায়েন্সেসের ডিন অধ্যাপক দীপক কুমার মিত্র ডিগ্রি প্রার্থীদের তথ্য শিক্ষা উপদেষ্টার হাতে তুলে দেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাননীয় উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, সরকার দেশকে একটি গণতান্ত্রিক শাসনের শান্তিপূর্ণ রূপান্তর করার চেষ্টা করছে। আমরা মনে করি ছাত্রজনতার এই অভ্যুত্থান সফল হবে যদি আমরা একটি সুন্দর আদর্শ গণতান্ত্রিক দেশে রুপান্তরিত হতে পারি। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় এবং এ দেশের সমগ্র শাসন ব্যবস্থায় মেধাতন্ত্রকে বহু বছর ধরে সবচেয়ে অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। একই সময়ে আমরা আমাদের সাধারণ নৈতিকতার মানকেও অধঃপতিত করেছি। এই পরিস্থিতিতে আপনাদের বিশেষ অভিনন্দন প্রাপ্য, কারণ আপনারা সমস্ত প্রতিকূলতা অতিক্রম করে দেশের অন্যতম প্রধান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ডিগ্রি নেওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেছেন।

সমাবর্তন অনুষ্ঠানের সাফল্য কামনা করে উপদেষ্টা অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন। অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিদের পাশাপাশি এনএসইউ’র বোর্ড সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। তবে আইনি জটিলতায় এনএসইউ বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চার জ্যেষ্ঠ সদস্য সমাবর্তনে উপস্থিত ছিলেন না। তারা হলেন- জনাব এম এ কাশেম, রেহানা রহমান, বেনজীর আহমেদ ও মোহাম্মদ শাহজাহান।

Read Entire Article