ডিজিটাল আইনে শাকিব খানের করা মামলার সত্যতা পায়নি পুলিশ

2 months ago 24

ঢালিউড তারকা শাকিব খানের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার ও কুৎসা রটানোর অভিযোগে প্রযোজক রহমত উল্লাহর বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা করা হয়। ঢাকার সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনালে এ মামলা করেন শাকিব খান নিজেই। তদন্তে মিথ্যাচার ও কুৎসা রটানোর কোনো আলামত পাননি তদন্তকারী কর্মকর্তা।

মামলায় যে দুটি ইউআরএল থেকে মিথ্যাচার ও কুৎসা রটানোর অভিযোগ করা হয়েছে, সেটি বিশেষজ্ঞের মাধ্যমে পরীক্ষা করা হয়েছে। সেখানে কোনো মিথ্যাচার ও কুৎসা রটানোর প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এ কারণে মোহাম্মদ রহমত উল্লাহর (৬৩) বিরুদ্ধে শাকিব খানের করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮ এর ২৪/২৫/২৯ ধারার অপরাধের অভিযোগ প্রাথমিকভাবে সত্য প্রমাণিত হয়নি মর্মে আদালতে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। তবে ওই প্রতিবেদনে শাকিব খান সন্তুষ্ট নয় বলে আদালতে জানিয়েছেন তার আইনজীবী। ওই প্রতিবেদনের ওপর নারাজি দেবেন বলে আদালতে জানিয়েছেন তার আইনজীবী।

২০২৩ সালের ৩০ এপ্রিল ঢাকার সাইবার অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আদালতে রহমত উল্লাহর বিরুদ্ধে শাকিব খানের করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলাটি তদন্ত করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনে (পিবিআই) প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন আদালত। গত ২৪ এপ্রিল মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই পুলিশের পরিদর্শক গোলাম মুক্তার আশরাফ উদ্দিন ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়নি বলে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। সর্বশেষ গত ১০ জুলাই মামলার তারিখ ধার্য ছিল। এ দিন মামলার প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপন করা হয়। এ সময় শাকিব খানের আইনজীবী খাইরুল হাসান প্রতিবেদনের ওপর নারাজি দেওয়ার জন্য সময় চেয়ে নেন। আদালত সময়ের আবেদন মঞ্জুর করে ১৩ আগস্ট নারাজি দাখিলের দিন ধার্য করেন।

ডিজিটাল আইনে শাকিব খানের করা মামলার সত্যতা পায়নি পুলিশ

যা আছে মামলার নথিতে:

প্রতিবেদনে সন্তুষ্ট নয় শাকিব খান

নারাজির আবেদনে শাকিব খানের আইনজীবী খায়রুল হাসান উল্লেখ করেন, ‘মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ‍দিন ধার্য ছিল। এ দিন পুলিশ তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছে। প্রতিবেদনের ওপর বাদী (শাকিব খান) সন্তুষ্ট নয়। শাকিব খান আদালতে উপস্থিত না থাকায় নারাজি দাখিলের জন্য সময়ের প্রার্থনা করছি।’
ক্লাবে পান করে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন শাকিব খান

মামলার বাদী শাকিব খান রানা (৪৩) আদালতে অভিযোগ করেন যে, তিনি উপমহাদেশের একজন প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নায়ক হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ দেশ-বিদেশে অসংখ্যবার পুরস্কৃত হয়েছেন। অপর পক্ষে মামলার বিবাদী মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ একজন সাইবার অপরাধী, অর্থলোভী, অন্যায় কুৎসা রটনাকারী, অন্যের মানসম্মান ক্ষুন্নকারী এবং আইন অমান্যকারী ব্যক্তি। শাকিব খান ২০১৬ সালের ১৯ জানুয়ারি বাংলা ছায়াছবি ‘অপারেশন অগ্নিপথ’-এ অভিনয়ের জন্য প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ভারটেক্স মিডিয়ার স্বত্বাধিকারী মো. জানে আলমের সাথে চুক্তিবদ্ধ হন। উক্ত ছবির শুটিং করার জন্য শাকিব খান একই বছরের ৩০ আগস্ট অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে জানতে পারেন যে, ছবির মনোনীত নায়িকা মিস শিবা আলী ভিসা জটিলতার কারণে অস্ট্রেলিয়ায় যেতে পারেননি। তার স্থলে এ্যানি রেনেসা সাবরিন নামে বাংলাদেশী বংশদ্ভূত অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক এক মহিলাকে নায়িকা হিসেবে অভিনয় করার জন্য মামলার বিবাদী রহমত উল্লাহ অনুরোধ করলে, শাকিব খান সবিনয়ে তা নাকচ করে নিজ সিদ্ধান্তে অটল থাকেন। যার প্রেক্ষিতে বাদীকে ফাঁদে ফেলার জন্য বিবাদী, বাদীর সাথে সখ্যতা গড়ে তুলে বাদীকে বিভিন্ন নামীদামী ক্লাবে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দিতে থাকে। শাকিব খান সরল বিশ্বাসে একদিন শুটিং শেষ করে রহমত উল্লাহর সাথে ক্লাবে গিয়ে সেখানে এ্যানি রেনেসা সাবরিনসহ আরো অপরিচিত ২/৩ জনকে দেখতে পান এবং তাদের সাথে খাওয়া দাওয়াসহ পানীয় পান করলে শাকিব খান অসুস্থ হয়ে পড়েন।

ডিজিটাল আইনে শাকিব খানের করা মামলার সত্যতা পায়নি পুলিশ

আরও পড়ুন:

রাতের ঘটনার ভিডিও ক্লিপ নিয়ে শাকিব খানকে হুমকি

মামলার অভিযোগে শাকিব খান উল্লেখ করেন, বাদী তার হোটেলে ফেরত আসার সময় মামলার বিবাদীসহ অপরিচিত অপর কাউকে না পেয়ে এ্যানি রেনেসা সাবরিনের নিকট হতে বিদায় নিতে চাইলে এ্যানি রেনেসা সাবরিনের কথায় বাদী তার হোটেলরুমে আসার পথে অজ্ঞান হয়ে যায়। পরদিন সকাল বেলা বিবাদী ফোন করে বাদীকে ঐ মহিলার সাথে রাতে যা যা করেছ তার ভিডিও ক্লিপ আছে বলে জানান। শাকিব খান যদি এক লক্ষ অস্ট্রেলিয়ান ডলার চাঁদা বিবাদীকে না দেয় তাহলে এ্যানি রেনেসা সাবরিনকে নিয়ে পুলিশের কাছে কমপ্লেন করবে মর্মে শাকিব খানকে নানা রকম হুমকী প্রদান করেন। শাকিব খান যেহেতু অজ্ঞান ছিলেন, সেহেতু তার সাথে এমন কিছু হওয়ার সম্ভাবনা থাকায় তিনি ভয় পেয়ে রহমত উল্লাহকে এত টাকা কোথা থেকে দিব বললে, রহমত উল্লাহ নানা রকম ভয়ভীতি প্রদান করেন।

শাকিব খানের অপরাধ প্রমাণ করতে পারেনি অস্ট্রেলিয়া পুলিশ
মামলার অভিযোগে বলা হয়, তখন শাকিব খান নানাবিধ বিষয় চিন্তা করে ৫ হাজার ৫০০ অস্ট্রেলিয়ান ডলার রহমত উল্লাহকে প্রদান করেন। এর ধারাবাহিকতায় শাকিব খান বিভিন্ন সময়ে রহমত উল্লাহকে সর্বমোট বাংলাদেশী টাকায় ৪০ লক্ষ টাকা প্রদান করেন। রহমত উল্লাহ আরো টাকা চেয়ে শাকিব খানের বিরুদ্ধে অস্ট্রেলিয়ায় অভিযোগ করা হয়েছে বলে তাকে জানায়। পরবর্তীতে শাকিব খান ২০১৮ সালে উক্ত ছবির শুটিং করতে অস্ট্রেলিয়ায় গেলে একই বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি অস্ট্রেলিয়ান পুলিশ তদন্ত করে তার কোন অপরাধের প্রমাণ না পেয়ে তাকে জানান, ‘মিস্টার খান, ইটস আ হানি ট্র্যাপ, সো বিওয়্যার ইয়োরসেলফ ফ্রম দেম’। তখন শাকিব খান বুঝতে পারেন যে, রহমত উল্লাহ মিথ্যা ভয়ভীতি দেখিয়ে তার কাছ থেকে টাকা নিয়েছে। শাকিব খান, রহমত উল্লাহকে চাঁদা দেওয়া বন্ধ করলে ২০২৩ সালের ১৬ মার্চ একটি অনলাইন নিউজ পোটালে রহমত উল্লাহ প্রকাশ করেন যে, শাকিব খানের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা ও গ্রেফতার করা হয়েছে এবং সিডিউল না দেওয়ার বিষয় এবং একই তারিখ বিকালে একটি বেসরকারি টিভিতে রহমত উল্লাহ বিবাদী নিজেকে প্রযোজক হিসাবে উপস্থাপন করে শাকিব খানের অশ্লীল যৌনাচারের কথা বাংলাদেশের সবাই জানে বলে প্রতারণার উদ্দেশ্যে আক্রমনাত্মক, মিথ্যা ও বাদীর মানহানিকর তথ্য উপাত্ত প্রকাশ ও প্রচার করে বিবাদী ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮ এর ২৪/২৫/২৯ ধারার অপরাধ করেছে।

তদন্ত প্রতিবেদনে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, মামলায় তদন্তে চারজন সাক্ষীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তাদের জবাননবন্দী লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। এ ছাড়া মামলার ঘটনার বিষয়ে আরো সাক্ষীর জবানবন্দী গ্রহণ করার চেষ্টা করি। যেহেতু বাদীর আনিত অভিযোগে উল্লিখিত ইউআরএলসমূহে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি, সেহেতু বিশারদ দ্বারা পরীক্ষা করে কোনো তথ্য পাওয়া যাবে না মর্মে বিশারদ দ্বারা পরীক্ষা করার প্রয়োজন বোধ করিনি।’

এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গোলাম মুক্তার আশরাফ উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘মামলার বাদী শাকিব খানের আনিত অভিযোগ পর্যালোচনা করা হয়েছে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। মামলা সংক্রান্তে বাদী কর্তৃক পাঠানো পেনড্রাইভ আলামত হিসেবে জব্দ করা হয়েছে। দালিলিক সাক্ষ্য পর্যালোচনা করা হয়েছে। এসব যাচাই-বাছাই করে মামলার অভিযুক্ত মোহাম্মদ রহমত উল্লাহর বিরুদ্ধে বাদীর আনিত অভিযোগ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ এর ২৪/২৫/২৯ ধারার অপরাধ প্রাথমিকভাবে সত্য প্রমাণিত হয়নি।’

জেএ/আরএমডি/এমএস

Read Entire Article