বর্তমানে সারাদেশে নির্বাচন কমিশনের ৮৬০ জন প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা রয়েছেন। সারাবছর তারা ভোটার তালিকা হালনাগাদ ও নির্বাচনি কার্যক্রমে যুক্ত থাকেন। কিন্তু জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় তাদের কাউকে রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব দেওয়া হয় না। গুরুত্বপূর্ণ এ দায়িত্ব দেওয়া হয় প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা জেলা প্রশাসকদের (ডিসি)। আর সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা করা হয় একই ক্যাডারের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও)।
২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতেই হচ্ছে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। অন্তর্বর্তী সরকারের এমন বক্তব্য ধরেই এগোচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এবার সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করতে কেউ কেউ ইসির কর্মকর্তাদের রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগের কথা বললেও বরাবরের মতো ডিসিদের রিটার্নিং কর্মকর্তা এবং ইউএনওদের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার বিষয়টি সামনে আসছে। যদিও এ ব্যাপারে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পন্ন করতে যোগ্য ও দক্ষ লোক খুঁজছে ইসি।
বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি বড় রাজনৈতিক দল অতীতের নির্বাচনি সংলাপে ইসির নিজস্ব কর্মকর্তাদের রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু এসব প্রস্তাব আমলে না নিয়ে তৎকালীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের একক সিদ্ধান্তে ডিসিদের রিটার্নিং কর্মকর্তা এবং ইউএনওদের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেয় ইসি। ফলে সারাবছর নির্বাচনি কার্যক্রমে যুক্ত থাকলেও ভোটের দিন কোনো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেননি ইসি কর্মকর্তারা।
আরও পড়ুন:
সংসদ নির্বাচন: রিটার্নিং অফিসার-সহকারী রিটার্নিং অফিসার এবার কারা
রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব ইসি কর্মকর্তাদের দেওয়ার দাবি
ইসি থেকেও রিটার্নিং কর্মকর্তা চায় জামায়াত
বিশেষ করে ২০০৮ সাল থেকে ইসি কর্মকর্তারা ধারাবাহিকভাবে রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা হওয়ার দাবি জানিয়ে এলেও কোনো রাজনৈতিক সরকার তাতে সাড়া দেয়নি। বরং প্রশাসনের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ উঠলেও দায় চাপানো হয় ইসি কর্মকর্তাদের ওপরই। অথচ জেলা পরিষদ নির্বাচন, উপজেলা পরিষদ নির্বাচন, পৌরসভা নির্বাচন, সিটি করপোরেশন নির্বাচন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনসহ স্থানীয় সরকার নির্বাচন ও জাতীয় সংসদের উপ-নির্বাচন নিজস্ব কর্মকর্তা দিয়ে আয়োজন করে আসছে ইসি। কিন্তু জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন করতে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি এখনো প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ওপরই নির্ভর করছে।

সাধারণত ইসি কর্মকর্তারা ভোটার তালিকা তৈরি করেন। এছাড়া ভোটকেন্দ্র তৈরি, নির্বাচন সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ, নির্বাচনি মালামাল গ্রহণ ও বিতরণ করেন। শুধু তাই নয়, ভোট পরবর্তী নানান কাজও ইসি কর্মকর্তারাই করেন। মনোনয়ন যাচাই-বাছাই থেকে শুরু করে সব কাজ করেন ইসি কর্মকর্তারা।
অন্যদিকে, সব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেন রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা। এমনকি রিটার্নিং কর্মকর্তারা কোনো প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল করলে সেই রায়ও লিখে দেন ইসি কর্মকর্তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসির ঊর্ধ্বতনএক কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, ‘ভোটের আগে ও পরে সব কাজ ইসি কর্মকর্তারা করেন। অথচ ভোটের দিন আমাদের হাত-পা বেঁধে দিয়ে বসিয়ে রাখা হয়। ভোটের দিন ইসি কর্মকর্তাদের কোনো কাজ থাকে না। আমরা এই বৈষম্য থেকে বের হতে চাই। ইসি নিজস্ব কর্মকর্তাদের দিয়ে ভোট পরিচালনা করে। অনেক সময় মাঠ প্রশাসন ডিসি-ইউএনও নির্বাচন কমিশনের কথা অমান্য করে। কিন্তু আমরা সব সময় ইসির অনুগত। কারণ আমাদের অভিভাবক কমিশন। তাদের কথার বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। জাতীয় নির্বাচনে নির্বাচন কর্মকর্তাদের রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব দিলে নির্বাচন আরও স্বচ্ছ ও অবাধ হবে। সেই সঙ্গে জনগণের ভোটাধিকার যথাযথভাবে নিশ্চিত হবে।’
কারা হতে পারবেন রিটার্নিং-সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা
বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তীসময় সংবিধান তৈরির পর নির্বাচন পরিচালনার জন্য প্রথমবারের মতো আরপিও বা গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২ প্রণয়ন করা হয়। এরপর বিভিন্ন সময়ে নানান পরিবর্তন আনা হয়েছে এ আইনটিতে। সবশেষ ২০২৩ সালে জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে গণপ্রতিনিধিত্ব (সংশোধন) আইন-২০২৩। আরপিওতে ৭(১) এ ধারায় বলা হয়েছে, কমিশন প্রত্যেক নির্বাচনি এলাকা থেকে কোনো সদস্য নির্বাচনের উদ্দেশ্যে উক্ত এলাকার জন্য একজন রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ করবে এবং কোনো ব্যক্তিকে দুই বা ততধিক নির্বাচনি এলাকার জন্য রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ করা যাবে।
আরও পড়ুন:
সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে কতটা প্রস্তুত প্রশাসন
নির্বাচনে ডিসি নয়, ইসি কর্মকর্তাদের রিটার্নিং কর্মকর্তা করুন
রিটার্নিং-প্রিসাইডিং অফিসার নিয়োগে পরিবর্তন আসছে
এছাড়া সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে আরওপি ৭(২) এ ধারায় বলা হয়েছে, কমিশন প্রয়োজনীয় সংখ্যক সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ করতে পারবে। তবে শর্ত থাকে যে কোনো সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাকে একাধিক নির্বাচনি এলাকার জন্য নিয়োগ করা যাবে না।

সুতরাং আইন অনুযায়ী, নির্বাচন কমিশন চাইলে যে কাউকে রিটার্নিং-সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দিতে পারবে। শুধু তাই নয়, কমিশন চাইলে সরকারি চাকরি করে না এমন ব্যক্তিকেও রিটার্নিং-সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দিতে পারবে।
ইসির রয়েছে প্রথম শ্রেণির ৮৬০ কর্মকর্তা
রিটার্নিং কর্মকর্তা হতে সরকারি কর্মকর্তা হতে হবে এমন কোনো নিয়ম নেই। কমিশন চাইলে সমাজের যে কোনো লোককে রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দিতে পারবে। তারপরও নির্বাচন কমিশনের প্রথম শ্রেণির ৮৬০ জন কর্মকর্তা রয়েছেন। তারা সবাই রিটার্নিং-সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা হওয়ার যোগ্যতা রাখেন। তাদের মধ্যে যুগ্ম সচিব পদধারী তিনজন। এছাড়া চতুর্থ গ্রেডের আঞ্চলিক কর্মকর্তা ১০ জন। এই ১০ জন কর্মকর্তা উপ-সচিব এবং যুগ্ম-সচিবের কিছুটা নিম্নের পদধারী। ইসির সারাদেশে উপ-সচিব পর্যায়ে ৪২ কর্মকর্তা রয়েছেন। এছাড়া সিনিয়র সহকারী সচিব পর্যায়ে ১৬৭ ও সহকারী সচিব পর্যায়ে ৫৬৮ জন কর্মকর্তা রয়েছেন। এছাড়া বাকি ৭০ জন প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা নানাভাবে ইসিতে কর্মরত।
ভোটে রিটার্নিং-সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা কতজন দরকার
বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনায় জেলা প্রশাসকদেরই (ডিসি) রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেয় ইসি। এ হিসেবে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকার দুজন বিভাগীয় কমিশনার এবং ৬৪ জন ডিসিসহ ৬৬ জন রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়। এছাড়া সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে ৫৯২ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। এরমধ্যে ইউএনও ৪৯৫ জন, স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালক ১৪ জন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আটজন, জোনাল এক্সিকিউটিভ অফিসার ১১ জন এবং অন্যান্য ৬৪ জন বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়। ফলে রিটার্নিং ও সহকারী মোট ৬৫৮ জন কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়। মোটাদাগে বলা যায় ভোট পরিচালনায় ৬৫৮ জন ব্যক্তির প্রয়োজন।
নির্বাচন পরিচালনায় ডিসিদের ওপরই আস্থা রাখছে ইসি
বারবার ডিসিরা রিটার্নিং কর্মকর্তা হওয়ার কিছু কারণও রয়েছে বলে দাবি করছে ইসি। বলা হচ্ছে, ডিসি জেলার উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সমন্বয়ক, তার ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা আছে, জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটিসহ শতাধিক কমিটির সভাপতি, তার রয়েছে একাধিক গাড়ি ব্যবহারের সুযোগ ও পুলিশি প্রটোকল এবং জেলা প্রশাসনের তহবিল থেকে অর্থ খরচের অনুমোদন। এসব বিবেচনায় ডিসিদের হাতেই নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব রাখতে চায় ইসি।
আরও পড়ুন:
তফসিলের পর মাঠপ্রশাসনে বড় রদবদলে উদ্যোগ নেবে ইসি
তফসিল ঘোষণার আগে ইসির প্রথম আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা শুরু
সম্ভবত ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবে ইসি
ইসি সূত্র বলছে, ২০২৪ সালের বিতর্কিত নির্বাচনে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল রোডম্যাপ ঘোষণা করেছিল। সেই ঘোষিত রোডম্যাপে ইসির নিজস্ব কর্মকর্তাদের রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু তৎকালীন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ইসিকে চিঠি দিয়ে জানায়, ডিসিদেরই রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ দিতে হবে। এরপরই আউয়াল কমিশন তাদের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্তকে প্রাধান্য দেয়।

এর আগে ২০২২ সালের ৩১ জুলাই প্রধান নির্বাচন কমিশন বরাবর চিঠি লিখে ১৫ দফার এক প্রস্তাব দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। চিঠিতে ইসি কর্মকর্তাদের বিএনপি-জামায়াতের লোক বলে আখ্যা দেওয়া হয়। এসব কর্মকর্তা যেন নির্বাচন থেকে বাইরে রাখা হয় এমন বার্তাই ছিল চিঠিতে।
বিতর্কিত তিন নির্বাচনের জন্য ডিসিদের দায়ী করেন ইসি কর্মকর্তারা
২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনগুলো নিয়ে দেশ-বিদেশে ব্যাপক সমালোচনা হয়। এসব নির্বাচনে নানান কৌশলে জনগণের ভোটাধিকার হরণ করে আওয়ামী লীগকে আবার ক্ষমতায় আনার অভিযোগ রয়েছে। সংবিধানে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালনার বাধ্যবাধকতা থাকলেও, এই নির্বাচনে তা লঙ্ঘনের গুরুতর অভিযোগও রয়েছে। এ নির্বাচনে মাঠ পর্যায়ে ডিসিরাই গুরু দায়িত্ব পালন করেন। ডিসিদের নির্দেশে আড়ালের কাজগুলো ইসি কর্মকর্তারা করলেও সিদ্ধান্ত নেওয়ার কোনো ক্ষমতা ছিল না তাদের। ফলে বিতর্কিত তিন নির্বাচনের দায় নিতে চান না ইসি কর্মকর্তারা।
ইসির এক কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, ‘ভোটের দিন আমাদের রোল প্লে করার কোনো ক্ষমতা থাকে না। ডিসিরা যা বলেন আমরা তাই করতে বাধ্য। সুতরাং বিতর্কিত নির্বাচনের জন্য আমাদের দায়ী করার কোনো সুযোগ নেই। ভোটে আমাদের কাজ ছিল কামলা দেওয়া কিন্তু সিদ্ধান্ত নেন আমলারা।’
এবারও ইসির নিজস্ব কর্মকর্তা থেকে রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগের প্রস্তাব
সংবিধানের ১২৬ ধারায় বলা হয়েছে, ইসিকে সহযোগিতা করবে নির্বাহী বিভাগ। অথচ নির্বাচনের সময় নির্বাহী বিভাগকে সহযোগিতা করেন ইসি কর্মকর্তারা।
২০২৫ সালের ১ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়েছে, নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাদের নিয়োগ করার। এ দায়িত্ব পালনের জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক কমিশনের কর্মকর্তা পাওয়া না গেলে প্রশাসনসহ অন্য ক্যাডার থেকে নিয়োগ করার কথাও বলা হয়েছে। নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ছিলেন ড. বদিউল আলম মজুমদার।
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ডিসিদের পরিবর্তে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কর্মকর্তাদের রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার জন্য সংস্থাটির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) উপাচার্য মুহাম্মদ ইয়াহিয়া আখতারও। ২৮ সেপ্টেম্বর রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে শিক্ষাবিদ, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে ইসি আয়োজিত নির্বাচনী সংলাপে চবি উপাচার্য এ আহ্বান জানান।
ইয়াহিয়া আখতার বলেন, ‘সরকার পরিবর্তন হলেও আমলাতন্ত্র পরিবর্তন হয়নি। ইসির যথেষ্ট লোকবল আছে। আপনাদের প্রশিক্ষিত লোকবল থাকলেও (নির্বাচনে) আমলাদের নিয়োগ করা হয়। কাজেই আপনাদের দক্ষ লোকদের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ করুন। এখন ডিসিদের দেওয়া হয়। তারা সারাবছর এ নিয়ে কাজ করেন না। ইসির কর্মকর্তাদের সেই অভিজ্ঞতা আছে। ডিসি নয়, ইসি কর্মকর্তাদের রিটার্নিং কর্মকর্তা করুন।’

‘ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বড় জেলাগুলোতে প্রশাসনের লোকবলের পাশাপাশি রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কর্মকর্তাদেরও নিয়োগ দেওয়া উচিত।’ মনে করেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার এবং অন্তর্বর্তী সরকারের শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ড. এম সাখাওয়াত হোসেন।
গত ১১ অক্টোবর ‘নির্বাচন কমিশন প্রণীত সাংবাদিকদের জন্য নীতিমালা-২০২৫’ শীর্ষক পর্যালোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সাখাওয়াত হোসেন বলেন, বড় জেলায় যেখানে বেশি আসন আছে, সেখানে একাধিক রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ করে, ইসির নিজস্ব কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে। এখন ইসির কর্মকর্তারা অনেক অভিজ্ঞ। অন্তত ১৪-১৫ জনকে রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে।
রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগে প্রশাসনের পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব কর্মকর্তাদের মধ্য থেকেও যথাসম্ভব নিরপেক্ষ, সৎ, দক্ষ ও অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের নিয়োগ দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে জামায়াতে ইসলামীও।
বাংলাদেশ ইলেকশন কমিশন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনও ইসির কাছে দাবি জানিয়েছে, আগামী জাতীয় নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব কর্মকর্তাদের হাতে দেওয়ার।
সংগঠনটির আহ্বায়ক মনির হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘ইসি কর্মকর্তারা সব সময় ভোটের কাজে নিয়োজিত থাকেন নানাভাবে। ভোটার তালিকা হালনাগাদসহ নাননা কাজ করেন। অথচ ইসি কর্মকর্তারা ভোটের দিন কোনো রোল প্লে করতে পারেন না। তাই আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি ইসির নিজস্ব কর্মকর্তাদের রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দিতে হবে। এর আগে কমিশন বার বার সিদ্ধান্ত নিলে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের কারণে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। এখন নির্দিষ্ট কোনো রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় নেই। তাই আমরা আশা করবো সুষ্ঠু ভোট আয়োজনে এবারই বড় সুযোগ ইসির নিজস্ব কর্মকর্তাদের এই দায়িত্ব পালনের সুযোগ দেওয়ার।’
এ বিষয়ে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ড. মো. আব্দুল আলীম জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের সুপারিশ আছে যতটা সম্ভব ইসির নিজস্ব কর্মকর্তা থেকে রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ দিতে হবে। ভোটের দিন ইসি কর্মকর্তাদের হাতে ক্ষমতা থাকা উচিত। তাদের ক্ষমতা দিলে ভোট আরও সুষ্ঠু হবে, তাদের অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত। নির্বাচন কমিশন কেন ডিসিদের ওপর আস্থা রাখছে জানি না।
আব্দুল আলীম আরও বলেন, ‘যে কেউ চাইলেই রিটার্নিং কর্মকর্তা হতে পারবেন। কানাডায় বিজ্ঞাপন দেওয়া হয় রিটার্নিং কর্মকর্তা চেয়ে। যোগ্য লোকরা আবেদন করে দায়িত্ব পান। কিন্তু আমাদের দেশে একই নিয়ম চলে আসছে ডিসিরাই রিটার্নিং কর্মকর্তা হবেন। আমাদের দেশে ডিসির বাইরে যেতে পারছি না। এবার যদি ইসির নিজস্ব কর্মকর্তা রিটার্নিং কর্মকর্তা না হন তবে আর কবে হবে আমাদের জানা নেই।’
তবে আসন্ন নির্বাচনে ইসির নিজস্ব কর্মকর্তা থেকে রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব কে. এম. আলী নেওয়াজ।
যদিও নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেছেন, আগামী নির্বাচনে নির্বাচন পরিচালনার ক্ষমতা তারাই পাবেন, যাদের হাতে জেলার সব প্রশাসনিক ক্ষমতা রয়েছে। তবে এখনো চূড়ান্ত হয়নি। আগামীতে যে কোনো কমিশন সভায় আলোচনার পর এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত আসবে।
এমওএস/এসএনআর/এমএমএআর/এমএফএ/জেআইএম

15 hours ago
3









English (US) ·