ডেঙ্গু টিকা কেন ব্যবহার করছে না বাংলাদেশ

9 hours ago 7

চলতি বছরের ৭ নভেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে দেশে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩০৭ জনে। একই সময়ে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৭৬ হাজার ৫১৪ জন। এমন পরিস্থিতিতে শঙ্কা কাটছে না সাধারণ মানুষের। ডেঙ্গু মোকাবিলা করার উপায় নিয়ে রয়েছে নানা আলোচনা। ডেঙ্গুর কি কোনো ভ্যাকসিন বা টিকা আছে? বাংলাদেশে এই টিকা কেন ব্যবহার করা হয় না?

সাধারণত বর্ষাকালে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব নিয়ে চিন্তায় থাকতো মানুষ। কিন্তু এখন আর কোনো মৌসুম নেই। বছরের যেকোনো সময়ই হতে পারে ডেঙ্গু জ্বর।

কীটতত্ত্ববিদরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তন এবং নগরায়নসহ নানা কারণে এডিস মশার প্রাদুর্ভাব বাড়ছে। আর এ কারণেই ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যাও আরও বাড়বে।

এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় একদিকে যেমন ডেঙ্গুর জীবাণু বহনকারী এডিস মশার বিস্তার ঠেকাতে হবে আবার ভ্যাকসিন বা টিকার ব্যবহারও বাড়ানোর কথা বলছেন তারা।

তবে, ডেঙ্গুর কার্যকর ভ্যাকসিন আছে কি না এমন প্রশ্ন এখনো রয়ে গেছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, টিকা আবিষ্কার হলেও সেগুলো সবার উপযোগী নয়।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মোশতাক হোসেন বলেন, এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুর জন্য দুটি টিকা ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। তবে, সেগুলো ব্যবহারেও রয়েছে নানা সীমাবদ্ধতা।

আর এ কারণেই বিশ্বের অনেক দেশ ডেঙ্গু টিকা ব্যবহারের অনুমোদন দিলেও বাংলাদেশ এখনো এ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়নি।

এছাড়া টিকা ব্যবহারের সিদ্ধান্তের সঙ্গে রাজনৈতিক লাভ-ক্ষতির বিষয়টিও জড়িত বলে মনে করেন কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক কবিরুল বাশার। তিনি বলেন, টিকার অনুমোদন দিতে আগে এই রোগকে এপিডেমিক ডিক্লেয়ার করতে হবে। কিন্তু সেটা করলে তো সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হতে পারে।

আরও পড়ুন:
ডেঙ্গু আক্রান্ত ৭০ হাজার ছাড়ালো
ডেঙ্গু রোধ করা যাচ্ছে না কেন?

এছাড়া এর মাধ্যমে মানুষের মধ্যে ডেঙ্গু নিয়ে আতঙ্ক আরও বেড়ে যেতে পারে বলেও মনে করেন তিনি। ডেঙ্গু মোকাবিলায় টিকার থেকে মানুষের সচেতনতা বেশি জরুরি বলেও মনে করেন অধ্যাপক বাশার।

ভ্যাকসিন নিয়ে যা জানা যাচ্ছে

কেবল বাংলাদেশ নয় ডেঙ্গুর প্রভাব রয়েছে বিশ্বজুড়েই। বিশেষ করে আফ্রিকা ও মধ্য আমেরিকার দেশগুলোতে এর ব্যাপ্তি ভয়াবহ। ইউরোপ-আমেরিকার নানা উন্নত দেশও ডেঙ্গুমুক্ত নয়।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন বা সিডিসির তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের প্রায় চারশ কোটি মানুষ ডেঙ্গু ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাস করে।

বিশ্ব পরিসরে ডেঙ্গুর এমন প্রভাব থাকলেও এর ভ্যাকসিন বা টিকা খুব একটা বিস্তার লাভ করেনি। ডেঙ্গু মোকাবিলায় এখন পর্যন্ত ‘ডেঙ্গাভেক্সিয়া’ এবং ‘কিউডেঙ্গা’ নামে দুই ধরনের টিকা পৌঁছেছে মানুষের হাতে।

ফ্রান্সের বহুজাতিক ফার্মাসিউটিক্যাল প্রতিষ্ঠান সানোফি-অ্যাভেন্টিজের ডেঙ্গু টিকা ‘ডেঙ্গাভেক্সিয়া’ অনুমোদন দিয়েছে বেশ কয়েকটি দেশ।

এছাড়া ২০২৩ সালে জাপানের তাকেদা ফার্মাসিউটিক্যালসের ডেঙ্গু টিকা ‘কিউডেঙ্গা’র অনুমোদন দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। দুই ডোজের এই টিকা শুধু ৬ থেকে ১৬ বছর বয়সীদের জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়।

তবে এর কোনোটিই ব্যবহারের অনুমোদন দেয়নি বাংলাদেশ সরকার। অর্থাৎ বাংলাদেশে ডেঙ্গু টিকা ব্যবহারের সুযোগ নেই। এর কারণ হিসেবে দুই ধরনের টিকারই নানা সীমাবদ্ধতা ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কথা বলছেন কীটতত্ত্ববিদ ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন, ডেঙ্গুর ভ্যাক্সিনের কিছু লিমিটেশনস আছে, একটা নির্দিষ্ট বয়সের মানুষকে ছাড়া দেওয়া যায় না, ১৬ বছরের নিচে বয়স হতে হয়।

এছাড়া ‘ডেঙ্গাভেক্সিয়া’ দিতে হলে আগে একবার ডেঙ্গু হতে হবে। ডেঙ্গু যার জীবনে কখনো হয়নি তাকে এই ভ্যাকসিন দেওয়া যাবে না, বলেন তিনি।

বাংলাদেশে ডেঙ্গু টিকার ট্রায়াল

এখনো ডেঙ্গু টিকা ব্যবহারের অনুমোদন দেয়নি বাংলাদেশ। তবে ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রতিষ্ঠানের আবিষ্কার করা ডেঙ্গু টিকার দ্বিতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল চালিয়েছিলেন আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বা আইসিডিডিআরবির গবেষকরা।

যুক্তরাষ্ট্রের ভার্মন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের লার্নার কলেজ অব মেডিসিন এবং বাংলাদেশের আইসিডিডিআরবির গবেষকরা যৌথভাবে এটি পরিচালনা করেন।

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব হেলথ বা এনআইএই আবিষ্কৃত ওই টিকার নাম দেয়া হয়েছিল টিভি০০৫।

ওই সময় বলা হয়েছিল, ভারতে তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা সফল হলে এর বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হবে। তবে পরবর্তী সময় এ নিয়ে আর আলোচনা এগোয়নি বলে জানান জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মোশতাক হোসেন।

তিনি বলেন, ‘ধারাবাহিকভাবে ডেঙ্গু যে পর্যায়ে যাচ্ছে এবং এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে খুব একটা সফলতাও আমরা দেখাতে পারছি না তাতে ভ্যাকসিন আনা যায় কি না এটা গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনার সময় এসেছে’।

ডেঙ্গু ভ্যাসকিনের পাশাপাশি কমিউনিটি অ্যাওয়ারনেস বা সাধারণ মানুষের সচেতনতার কথা বলছেন কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক কবিরুল বাশার। তিনি বলেন, ‘ডেঙ্গুর ভ্যাকসিন ব্যবহার করার বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত নেয়নি বাংলাদেশে। এটি নিতেও আমাদের সময় লাগবে কারণ এখানে সরকারি সিদ্ধান্ত, বিশেষজ্ঞ মতামত, ট্রায়ালসহ নানা বিষয় জড়িত’।

‘তবে মানুষ যদি নিজে থেকেই পরিচ্ছন্ন থাকা, পানি জমতে না দেওয়া, মশারি টাঙানো এমন পদক্ষেপগুলো নেয় তাহলে ডেঙ্গুর প্রকোপ কমিয়ে আনা সম্ভব’, বলেন তিনি।

সূত্র: বিবিসি বাংলা

এসএনআর/এএসএম

Read Entire Article