চলতি বছরে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সবচেয়ে বেশি মারা গেছেন ২০ থেকে ৩০ বছর বয়সী রোগীরা। এরপর শূন্য থেকে ১০ বছর বয়সী শিশুর মৃত্যুহার সবচেয়ে বেশি।
সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) এক প্রেস ব্রিফিংয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এ তথ্য জানায়।
ব্রিফিংয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফর, সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ (সিডিসি) শাখার লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. মো. হালিমুর রশিদ এবং অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. আবু হোসেন মো. মঈনুল আহসান উপস্থিত ছিলেন।
হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর দ্রুত মৃত্যু
অধ্যাপক ডা. হালিমুর রশিদ জানান, এ পর্যন্ত ১১৪টি ডেথ রিভিউ সম্পন্ন হয়েছে। এর মধ্যে দেখা গেছে—
• হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মারা গেছেন ৫৭ জন রোগী।
• ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে মারা গেছেন ৭৮ জন।
• ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ৫ জন।
• অন্যরা আরও পরে মৃত্যুবরণ করেছেন।
আরও পড়ুন
ডেঙ্গুতে আরও ২ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৬৭৮
তিনি বলেন, ডেঙ্গুতে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে ঢাকা ও বরগুনায়। শুধু ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে ৩৩ জনের, আর কুর্মিটোলা হাসপাতালে ১৪ জনের। এছাড়া মারা যাওয়া রোগীদের প্রায় ৪০ শতাংশের অন্য অসুস্থতাও ছিল।
সচেতনতার ওপর জোর
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মহাপরিচালক ডা. আবু জাফর বলেন, যত ব্যবস্থাই নেওয়া হোক, জনগণ সচেতন না হলে ডেঙ্গু থেকে মুক্তি পাওয়া কঠিন। গত বছরের তুলনায় এ বছর আক্রান্ত বেড়েছে, তবে মৃত্যুর সংখ্যা কিছুটা কমেছে।
তিনি আরও বলেন, বর্ষা মৌসুমে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ে। শুরুতেই রোগ নির্ণয় না হলে জটিলতা দেখা দেয় এবং মৃত্যুহার বেড়ে যায়। তাই জ্বর হলেই দ্রুত পরীক্ষা করা জরুরি। ডেঙ্গু টেস্টের কিট পর্যাপ্ত মজুত আছে।
চিকনগুনিয়ার সঙ্গে তুলনা
ডা. আবু জাফর বলেন, ডেঙ্গুতে নতুন কোনো চিকিৎসা পদ্ধতি নেই। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন মেনে আধুনিক চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ডেঙ্গুর উপসর্গ স্পষ্ট, কিন্তু চিকনগুনিয়া দীর্ঘদিন ভোগায় এবং অনেক সময় উপসর্গ স্পষ্ট হয় না।
চিকিৎসা ও প্রস্তুতি
অধিদপ্তরের পরিচালক ডা. আবু হোসেন মো. মঈনুল আহসান বলেন, ডেঙ্গু কোনো জটিল রোগ নয়। জ্বর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পরীক্ষা ও চিকিৎসা নিতে হবে। কিন্তু রোগীরা দেরিতে হাসপাতালে আসছেন, তখন অবস্থা গুরুতর হয়ে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, বড় বড় হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসার জন্য টিম গঠন করা হয়েছে। সিটি করপোরেশন ও পৌরসভাকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান জোরদারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ডেঙ্গু রোগীদের জন্য পর্যাপ্ত প্লইড সরবরাহ রয়েছে, কোথাও ঘাটতির খবর পাওয়া যায়নি।
এদিকে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে ৬৭৮ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন মোট ৪২ হাজার ৫০৯ জন। এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ১৮১ জনের।
২৪ ঘণ্টায় হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন ৫৫৫ জন। চলতি বছর এখন পর্যন্ত মোট ছাড়পত্র পাওয়া রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪০ হাজার ১৮৬ জনে।
২০২৪ সালে দেশে মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছিল ১ লাখ ১ হাজার ২১৪ জন এবং মৃত্যু হয়েছিল ৫৭৫ জনের। এর আগের বছর ২০২৩ সালে ডেঙ্গুতে মারা যান সর্বোচ্চ ১ হাজার ৭০৫ জন এবং আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন।
এসইউজে/ইএ/এমএস