‘ডেটা সায়েন্স’ কি সত্যিই সবচেয়ে চাহিদাসম্পন্ন বিষয়

11 hours ago 2

ডেটা সায়েন্স কিন্তু কম্পিউটার সায়েন্স নয়। তবে বলা হয়ে থাকে, শতাব্দীর সবচেয়ে চাহিদাসম্পন্ন পেশায় যারা যোগ দেওয়ার প্রস্তুতি নেবেন, তারাই পড়বেন এই বিষয়টি নিয়ে। এ জন্য আপনাকে জ্ঞান অর্জন করতে হবে ডেটা সায়েন্স এবং মেশিন লার্নিংয়ের ওপরে।

ডেটা সায়েন্স হল এমন একটি আধুনিক ক্ষেত্র যা তথ্যের বিশ্লেষণ ও ব্যাখ্যার ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে। আজকের ডিজিটাল যুগে, বিপুল পরিমাণ তথ্য প্রতিনিয়ত উৎপন্ন হচ্ছে এবং এই তথ্যগুলোকে প্রক্রিয়া করে অর্থপূর্ণ তথ্য বের করা অত্যন্ত জরুরি। ডেটা সায়েন্সের মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের দক্ষতা অর্জন করতে পারি এবং ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা পেতে পারি।

পাঠ্য হিসেবে ডেটা সায়েন্স যে কারণে যুগপোযোগী
দুনিয়ার সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ হচ্ছে ডেটা। ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস মেশিনস কর্পোরেশন (আইবিএম) ডেটা সায়েন্স সম্পৃক্ত পেশাজীবীদের একবিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে চাহিদাসম্পন্ন পেশা ঘোষণা দিয়েছে। ফোর্বসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, লিংকডইনে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল চাকরির ক্ষেত্র হচ্ছে ডেটা সায়েন্স।

বিশ্বের বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে প্রতিটি রাষ্ট্র এখন অনেক অনেক তথ্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করছে। প্রত্যেকেই চাইছে এসব তথ্য বিশ্লেষণ করে বিভিন্ন কাজে লাগাতে। বিশ্বে এখন বড় বড় যেসব স্ক্যামের খবর পাওয়া যায়, তার মধ্যেও একটা বড় অংশ তথ্য চুরির! এ থেকেই বোঝা যায় বর্তমান বিশ্বে ডেটাকে কতটা গুরুত্ব দেওয়া হয়। ফলে দেশে ডেটা সায়েন্সে বিশেষজ্ঞ কর্মীর চাহিদা বাড়ছে। একই সঙ্গে বাড়ছে ফ্রিল্যান্স কাজের বাজারও। ডেটা সায়েন্সে পারদর্শী হলে অনেক ধরনের প্রতিষ্ঠানে ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ আছে। যেমন:
১. সরকারি চাকরি
২. ই-কমার্স এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম
৩. টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি
৪. ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি
৫. প্রচলিত কাজের বাইরেও নানা কাজের সুযোগ রয়েছে। যেমন নেটফ্লিক্সের মতো সাইটেই ৯ ধরনের ডেটা সায়েন্সভিত্তিক চাকরি রয়েছে। ডেটা ইঞ্জিনিয়ার, কোয়ানটিটিভ অ্যানালিস্ট, এমএল সায়েন্টিস্ট প্রভৃতি। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানের অন্যান্য ক্ষেত্রেও ডেটা দিয়ে বিভিন্ন সাহায্য করার সুযোগ রয়েছে।

ডেটা সায়েন্সের প্রধান উপাদান হল, ডেটা সংগ্রহ, ডেটা প্রক্রিয়াকরণ, পরিসংখ্যান, মেশিন লার্নিং, এবং ডেটা ভিজ্যুয়ালাইজেশন। একজন ডেটা সায়েন্টিস্টের এই কৌশলগুলোর ওপর গভীর জ্ঞান থাকতে হয়। একই সঙ্গে প্রোগ্রামিং ভাষা (যেমন পাইথন), ডেটাবেস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের (যেমন এসকিউএল) দক্ষতা অর্জন করা গুরুত্বপূর্ণ।

ডেটা সায়েন্স কিন্তু কম্পিউটার সায়েন্স নয়। তবে বলা হয়ে থাকে, শতাব্দীর সবচেয়ে চাহিদাসম্পন্ন পেশায় যারা যোগ দেওয়ার প্রস্তুতি নেবেন, তারাই পড়বেন

কর্মক্ষেত্রে পদ-পদবী
১. ডেটা সায়েন্টিস্ট: ডেটা সায়েন্টিস্টরা বিভিন্ন উৎস থেকে ডেটা সংগ্রহ করেন, অপ্রয়োজনীয় ডেটা বাদ দেন এবং ডেটা বিশ্লেষণ করেন। তারা ডেটা ভিজ্যুয়ালাইজেশন, মেশিন লার্নিং মডেল তৈরি এবং ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করে।
২. মেশিন লার্নিং ইঞ্জিনিয়ার: মেশিন লার্নিং ইঞ্জিনিয়াররা জটিল অ্যালগরিদম ডিজাইন, বাস্তবায়ন এবং উন্নত করেন যা কম্পিউটারকে ডেটা থেকে শিখতে এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবে সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম করে।
৩. ডেটা অ্যানালিস্ট: ডেটা অ্যানালিস্টরা ডেটা সংগ্রহ করেন, অপ্রয়োজনীয় ডেটা বাদ দেন এবং প্রাথমিক বিশ্লেষণ করেন। তারা ট্রেন্ড চিহ্নিত করেন এবং রিপোর্ট তৈরি করেন।
৪. ডেটা আর্কিটেক্ট: ডেটা আর্কিটেক্টরা ডেটা স্টোরেজ এবং সিস্টেম ডিজাইন করেন যা ডেটা সংগ্রহ, সংরক্ষণ, বিশ্লেষণ এবং ব্যবহারের জন্য একটি কার্যকর কাঠামো প্রদান করে।
৫. ডেটা ভিজ্যুয়ালাইজেশন স্পেশালিস্ট: ডেটা ভিজ্যুয়ালাইজেশন স্পেশালিস্টরা জটিল ডেটা থেকে আকর্ষণীয় গ্রাফ, চার্ট এবং মানচিত্র তৈরির মাধ্যমে সহজবোধ্য করে তোলেন।

কোথায় পড়বেন
ডেটা সায়েন্স শেখার জন্য বিভিন্ন অনলাইন কোর্স, ওয়ার্কশপ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোগ্রাম রয়েছে। বাংলাদেশে যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ডেটা সায়েন্স পড়ানো হয়।
১. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: ফলিত পরিসংখ্যান এবং ডেটা সায়েন্স
২. বুয়েট: ডেটা সায়েন্সে স্নাতকোত্তর
৩. ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি: স্কুল অব ডেটা অ্যান্ড সায়েন্স
৪. গ্রিন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ: আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এবং ডেটা সায়েন্স
৫. নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি: ডেটাবেজ অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস্
৬. ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
৭. ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি: ডেটা সায়েন্স
8. স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ (এসইউবি): ডেটা সায়েন্স ও মেশিন লার্নিং
ডেটা সায়েন্স একটি বহুমাত্রিক ক্ষেত্র, যা তথ্যের বিশ্লেষণ, মডেল তৈরি এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় কাজ করে। এটি পরিসংখ্যান, গণিত, প্রোগ্রামিং, এবং ব্যবসায়িক পরিস্থিতির সমন্বয় ঘটায়। ডেটা সায়েন্টিস্টরা তথ্যের বিশাল পুল থেকে অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য বের করে আনেন যা ব্যবসায়িক ফলাফল এবং নীতিনির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

এই ক্ষেত্রটি শুধু চাকরি পাওয়ার জন্যই নয়, বরং আমাদের চারপাশের বিশ্বকে বোঝার এবং প্রতিদিনের সমস্যা সমাধানে সাহায্য করে। সর্বোপরি, ডেটা সায়েন্স একটি চ্যালেঞ্জিং কিন্তু অত্যন্ত পুরস্কৃত ক্ষেত্র, যেখানে দক্ষতার মাধ্যমে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করা সম্ভব।

এএমপি/আরএমডি/জেআইএম

Read Entire Article