ড্যাপ নিয়ে স্বার্থান্বেষী মহল সবসময়ই অপপ্রচার চালিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সভাপতি পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান।
বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের কনফারেন্স হলে ঢাকার বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) ও ইমারত নির্মাণ বিধিমালার সংশোধনে জনস্বার্থ, পরিবেশ ও বাসযোগ্যতার সংকট শীর্ষক নাগরিক সংলাপে তিনি এ কথা বলেন।
বিআইপির সাধারণ সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ শেখ মুহম্মদ মেহেদী আহসানের সঞ্চালনায় সংলাপে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিআইপি সভাপতি পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান।
তিনি বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর দেশের সংবিধানসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের সংস্কার হলেও সমগ্র দেশের টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশের নগরায়ণ, নগর পরিকল্পনা ও উন্নয়ন, ইমারত, নির্মাণ ও পরিবেশ সংশ্লিষ্ট আইন ও বিধিমালার যৌক্তিক কোনো সংস্কার হয়নি। বিপরীতে ড্যাপ নিয়ে স্বার্থান্বেষী মহল সবসময়ই অপপ্রচার চালিয়েছে।
ড. আদিল মুহাম্মদ খান, ড্যাপ অচিরেই সংশোধন করা হবে, এই বার্তা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দিয়ে ভবন নির্মাণে আগ্রহী ভবন মালিকদের নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। ইমারত নকশা ও নির্মাণ সংশ্লিষ্ট অনেক পেশাজীবী নতুন ড্যাপের প্রস্তাবনা অনুযায়ী ভবন নকশায় আগ্রহী না হয়ে ভবন মালিকদের ভিন্ন বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন।
আরও পড়ুন
তিনি বলেন, ঢাকার বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা প্রণয়নের সঙ্গে সঙ্গেই বারবার স্বার্থান্বেষী মহলের বাধার কারণে সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হতে পারছে না। গত দুটি বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা প্রণয়নের পরপরই রিভিউ কমিটি গড়ে ড্যাপ বাস্তবায়নের মূল শক্তিটাই নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। সরকার উভয় ক্ষেত্রেই প্রভাবশালী মহলের কাছে সামগ্রিক জনস্বার্থ, শহরের বাসযোগ্যতাকে ছাড় দিয়েছে। অনুরূপভাবে বেসরকারি আবাসিক প্রকল্পের ভূমি উন্নয়ন বিধিমালা ২০০৪ সংশোধন করা হয় ২০১৫ সালে, যেন আবাসন ব্যবসায়ীদের চাপে জনস্বার্থ উপেক্ষা করে নাগরিক সুবিধাদির মানদণ্ড বা স্ট্যান্ডার্ড অনেক কমিয়ে ফেলা হয়েছে, ফলে পরিমাণ কমেছে পার্ক, খেলার মাঠ, বিদ্যালয় প্রভৃতি নাগরিক সুবিধাদিতে।
সংলাপে বিআইপির সাধারণ সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ শেখ মুহম্মদ মেহেদী আহসান বলেন, যে কোনো শহরের টেকসই পরিকল্পনা এবং সামগ্রিক জনস্বার্থ ও জনস্বাস্থ্য রক্ষার্থে প্রয়োজনীয় বিধিবিধান সংবলিত ইমারত নির্মাণ বিধিমালা প্রণয়ন এবং সেটির কার্যকর বাস্তবায়ন অত্যন্ত প্রয়োজন। ঢাকা যানজট, বায়ুদূষণ, জলাবদ্ধতা, পার্ক-খেলার মাঠসহ বিভিন্ন নাগরিক সুবিধা ও পরিষেবার দিক দিয়ে অত্যন্ত সংকটপূর্ণ অবস্থায় আছে, যার পেছনে নগর পরিকল্পনার সঠিক কৌশল প্রয়োগ না করার পাশাপাশি এর আগে জনঘনত্ব পরিকল্পনা প্রণয়ন না করা এবং বিদ্যমান ইমারত নির্মাণ বিধিমালায় এফএআর এর উচ্চমানের ও দায় আছে। এর আগে বাংলাদেশের নগর পরিকল্পনায় জনঘনত্ব বিষয়টি উল্লেখ থাকলেও পরিকল্পনার কৌশল হিসেবে তার প্রয়োগ সীমিত পরিসরে দেখা গেছে। পরিকল্পনার মাধ্যমে জনসংখ্যা ও জনঘনত্ব নির্ধারণ না করা গেলে যে কোনো শহর অবাসযোগ্য হতে বাধ্য, ঢাকা যার প্রকৃষ্ট উদাহরণ।
বিআইপির উপদেষ্টা পরিষদের আহ্বায়ক এবং সাবেক সভাপতি পরিকল্পনাবিদ মো. ফজলে রেজা সুমন বলেন, ড্যাপকে পুরো ঢাকা শহরের সমন্বিত উন্নয়নের একটি দলিল বলা হয় যেখানে ভূমি ব্যবহার, নাগরিক সুবিধাসহ সবকিছুই আলোচনা করা আছে। কিন্তু কিছু স্বার্থান্বেষী মহল এটাকে ফ্যাসিস্ট সরকারের দলিল বলে আখ্যায়িত করছে যা অত্যন্ত দুঃখজনক। ড্যাপ পর্যালোচনার জন্য যে কমিটি রয়েছে রাজউকের উচিত সেখানে নাগরিক সমাজকে যুক্ত করা।
তিনি আরও বলেন, ডব্লিউএইচও’র মতে ঢাকা শহরের ৩৫ শতাংশ মানুষ ভিটামিন ডি এর অভাবে ভুগছে, যা আমাদের বলে দেয় আমাদের এই শহর কতটা বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।
বাংলাদেশ গাছ রক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়কারী আমিরুল রাজীব বলেন, ড্যাপ পর্যালোচনার জন্য ১৫ সদস্য বিশিষ্ট যে কমিটি গঠন করা হয়েছে সেখানে কয়েকজন সরকারি আমলা, পেশাজীবী আর্কিটেক্ট, ইঞ্জিনিয়ার এবং একজন প্ল্যানার রয়েছেন। এই কমিটিতে আরও প্ল্যানার ও নিরপেক্ষ পেশাজীবী, পরিবেশকর্মী ও নাগরিক সমাজকে সংযুক্ত করা উচিত ছিল। আমাদের দেশে কোনো পরিবেশ কমিশন নেই, যার ফলে আমাদের শহরের প্রাণ দিন দিন হারিয়ে গেলেও আমরা কিছু করতে পারছি না। শহরের সব পার্ক, উদ্যান ও জলভূমি সংরক্ষণের জন্য আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে ও সব সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।
সংলাপে আইইবির প্রতিনিধি প্রকৌশলী আবু সাদেক, ধরিত্রী আন্দোলনের সদস্যসচিব মোহাম্মদ শরীফ জামিল, রিভার অ্যান্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টারের (আরডিআরসি) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এজাজ, বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. আনোয়ার জাহিদ,
ইনস্টিটিউশন অব ফরেস্টার্স বাংলাদেশ (আইএফবি)-এর সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল হাসান, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের প্রতিনিধি পারভীন ইসলাম, স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের ডিন এবং বায়ুমণ্ডল অধ্যায় কেন্দ্রের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কামরুজ্জামান মজুমদার, তেঁতুলতলা মাঠ রক্ষা আন্দোলনের প্রতিনিধি সৈয়দা রত্না প্রমুখ বক্তব্য দেন।
এমএমএ/ইএ