‘গুলি খেয়ে আহত হয়েও হাসপাতালে আমি বলতে পারিনি আমার নাম নাহীদ হাসান। চিকিৎসা নিতে আমাকে দিতে হয়েছিল মিথ্যা পরিচয়। ড্রেসিংয়ের সময় প্রচণ্ড চিৎকার দিয়ে উঠতাম। কারণ চিকিৎসকরা কসাইয়ের মতো ড্রেসিং করত। ব্যথা পাচ্ছি বললে আমাকে বলতেন- আন্দোলনে গেছিলা ক্যান।’
নওগাঁয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আহত ও শহীদদের স্মরণে এক স্মরণসভায় আন্দোলনের অনুভূতি জানাতে গিয়ে এভাবেই কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলেন গুলিতে আহত শিক্ষার্থী নাহীদ হাসান।
শনিবার (২৩ নভেম্বর) নওগাঁ সদর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে জেলা প্রশাসন এ স্মরণসভার আয়োজন করে।
জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল আউয়ালের সভাপতিত্বে আয়োজিত স্মরণসভায় আলোচনা করেন পুলিশ সুপারের প্রতিনিধি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফারজানা হোসেন, সিভিল সার্জন ডাক্তার মো. নজরুল ইসলাম ও নওগাঁ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রবীন শীষসহ সব উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তারা।
আরও উপস্থিত ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া সমন্বয়ক রিয়াজুস সালেহীন ও ফজলে রাব্বি। এ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন আন্দোলনে শহীদ মাহফুজ আলম শ্রাবনের ভাই মোস্তাফিজুর রহমান এবং গুলিতে আহত মো. নাহিদ হাসান।
বক্তারা আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেছেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে কেবল সরকার পরিবর্তনের লক্ষ্য ছিল না, লক্ষ্য ছিল বৈষম্যহীন, শোষণমুক্ত, ফ্যাসিবাদীমুক্ত একটি রাষ্ট্র গড়ে তোলা। ভবিষ্যতে আর কখনো যাতে অগণতান্ত্রিক স্বৈরাচারী ও ফ্যাসিবাদী সরকার এ দেশে তাদের নৈরাজ্য কায়েম করতে না পারে।
তারা আরও বলেন, এই আন্দোলনে আহত ও যুদ্ধাহত পরিবারের সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। যে কোনো প্রয়োজনে আপনাদের পাশে থাকব। শহীদ আবু সাঈদ, ওয়াসিম, মুগ্ধসহ অনেকে শহীদ হয়েছেন। জুলাইয়ে এটা কোনো ব্যক্তির আন্দোলন ছিল না, প্রতিটি শ্রেণি-পেশার মানুষের আন্দোলন ছিল। তাই বৈষম্যহীন একটি বাংলাদেশ গড়তে তাদের অবদান আমাদের ভুলে গেলে চলবে না। এই শহীদদের আত্মত্যাগ সবার হৃদয়ে ধারণ করে বৈষম্যহীন একটি বাংলাদেশ গড়তে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
যে ব্যক্তি আহত হয় তার কষ্ট হয়তো আমরা বুঝব না। আহত ব্যক্তির কষ্ট প্রতিটা মিনিট, প্রতিটা সেকেন্ড তার পরিবারকেও ভোগ করতে হচ্ছে। আমাদের এমন কিছু করে যাওয়া উচিত আন্দোলনে যারা আহত হয়েছে, ভবিষ্যতে তারা যেন পরিবার নিয়ে সুখে শান্তিতে জীবন-যাপন করতে পারে।
তারা বলেন, আমরা জনতার পাশে ছিলাম, এখনো আছি এবং যারা আহত হয়েছেন অনেকের নাম সরকারের তালিকায় নেই। তাদের সঠিক তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করার জন্য আহ্বান করা হচ্ছে।
পরে জুলাই-আগস্টে অভ্যুত্থানে আহত ও শহীদদের স্মরণে তাদের পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে তাদের স্মরণে বিশেষ মোনাজাত ও দোয়ার মাধ্যমে অনুষ্ঠান শেষ হয়।