অন্তর্বর্তী সরকারের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেছেন, দুর্নীতি ও অপচয়ের কারণে আমরা সীমিত সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার করতে পারছি না। প্রকল্পগুলো নির্ধারিত সময়ে শেষ হয় না, ব্যয়ও বাড়ে। এসব থামাতে হবে। আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদ খুব একটা নেই। কিছু প্রাকৃতিক গ্যাস ছিল। সেটাও ফুরিয়ে আসছে।
তিনি বলেন, বড় সমস্যা হলো, আমাদের প্রকল্পের ব্যয় বেশি। আমাদের সড়ক নির্মাণ ব্যয় অন্য দেশের তুলনায় বেশি। এমনকি দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোর তুলনায়ও অনেক বেশি।
শনিবার (১৬ আগস্ট) চট্টগ্রাম-ঢাকা জ্বালানি তেল সরবরাহের পাইপলাইন প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
এর আগে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় ডেসপাস টার্মিনালে সুইচ টিপে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা পর্যন্ত পাইপলাইনে জ্বালানি তেল পরিবহন প্রকল্পের উদ্বোধন করেন অতিথিরা।
এ সময় উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান বলেন, এ (পাইপলাইন) প্রকল্পটিও ২০১৮ সালে নিয়ে ২০২০ সালে সমাপ্ত হওয়ার কথা ছিল। করোনা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কথা বলা হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্ব ঘটলে অবশ্যই ব্যয় বাড়বে। বিশ্বব্যাপী ইক্যুইপমেন্টের দাম বাড়ে।
তিনি বলেন, আমি অত্যন্ত আনন্দিত পাইপলাইনে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা জ্বালানি তেল পরিবহন করা হবে। রাষ্ট্রের এ প্রকল্প প্রযুক্তিগত উন্নতির সঙ্গে সম্পর্কিত। মডার্ন বিশ্বের ভিত্তি টেকনোলজিক্যাল প্রগ্রেস। মনে রাখতে হবে আমাদের কিন্তু খুব একটা সম্পদ নেই। আমাদের কিছু প্রাকৃতিক গ্যাস ছিল, সেটা এখন ফুরিয়ে আসছে। মানবসম্পদ ছাড়া আমাদের উল্লেখযোগ্য প্রাকৃতিক সম্পদ আর নেই। সেক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত উন্নতি দিয়ে আমাদের এগোতে হবে। আমাদের সম্পদ এমনিতে কম, যা আছে সেটারও সুষ্ঠু ব্যবহার করতে পারছি না দুটি কারণে। একটি হচ্ছে দুর্নীতি, আরেকটি অপচয়। যদি আমরা দুর্নীতি ও অপচয় কমাতে পারি, টেকনোলজিক্যাল প্রগ্রেস করতে পারি তবে বিপুল জনসংখ্যার জন্য গ্রোথ অ্যাচিভমেন্ট সম্ভব হবে।
উপদেষ্টা বলেন, আগে পেট্রোলিয়াম প্রোডাক্ট আমদানি খাতে চার-পাঁচজন বিড করতে পারত। আমরা এটা পরিবর্তন করেছি, ফলে এখন ১০-১২টি প্রতিষ্ঠান বিড করে। আমরা বছরে ১৪০০-১৫০০ কোটি টাকা সেভ করতে সক্ষম হয়েছি। এভাবে আমি যে তিনটি মন্ত্রণালয় দেখি, সেখানে আমরা ৪৫ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় করতে সক্ষম হয়েছি।
জ্বালানি তেল সরবরাহের পাইপলাইন প্রকল্পটি সমাপ্ত করায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে ধন্যবাদ জানিয়ে উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান বলেন, আমি আশা করব, সামনের প্রকল্পগুলো তারা ব্যয় সাশ্রয়ী ও দ্রুততম সময়ে করবেন। দ্রুততম সময়ে করলেই কিন্তু ব্যয় সাশ্রয়ী হবে। যেমন বলা হয়, কান টানলে মাথা আসে। এ প্রকল্পেরও তিনবার রিভিশন হয়েছে। এমন এমন প্রকল্প আছে, ১৭-১৮ বছর হয়ে গেছে। এখনো প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়নি। এ ধরনের প্রকল্প আর টেনে নেওয়া সম্ভব না।
পাইপলাইন রক্ষণাবেক্ষণে গুরুত্ব দিতে হবে উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, আমাদের যে কোনো প্রকল্পে নিজস্ব ভ্যালু এডিশন খুব কম। সামনের দিনে নিজস্ব ভ্যালু এডিশন বাড়াতে না পারলে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হব। দেখুন আমাদের কত ইঞ্জিনিয়ার বেকার। নয়তো এমন কাজ করছে, যেটা ইঞ্জিনিয়ারের কাজ নয়। এসব জিনিস নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে। অন্য দেশের ঠিকাদারদের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে হবে।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের চেয়ারম্যান মো. আমিন উল আহসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ার ইন চিফ মেজর জেনারেল মু. হাসান-উজ-জামান। বক্তব্য দেন বিপিসির পরিচালক ড. এ কে এম আজাদুর রহমান।