ঢাকায় দুরখেইম: বিভক্ত জাতিতে সামাজিক সংহতির সন্ধান
যদি সমাজবিজ্ঞানী এমিল দুরখেইম (Émile Durkheim) আজকের ঢাকা শহরে এসে হাঁটতেন, তবে তিনি এক জীবন্ত সমাজতাত্ত্বিক পরীক্ষাগার খুঁজে পেতেন—একটি মহানগর যা একই সঙ্গে বৈপরীত্য, দ্বন্দ্ব ও সংযোগে পূর্ণ। যানজটে আটকে থাকা রাস্তায়, চকচকে শপিং মল ও ছিন্নভিন্ন বস্তির মাঝখানে, ধর্মীয় আচার ও ডিজিটাল জীবনের মিলিত জটিলতায় দুরখেইম তাঁর নিজস্ব প্রশ্নটি আবার উত্থাপন করতেন—কীভাবে একটি সমাজ দ্রুত পরিবর্তনের যুগে নৈতিক ভিত্তি ও সামাজিক সংহতি ধরে রাখে? এই প্রশ্নটি কেবল সমাজতাত্ত্বিক নয়, এটি আজকের বাংলাদেশের সামাজিক-রাজনৈতিক বাস্তবতার কেন্দ্রে থাকা একটি জরুরি প্রশ্ন। সংহতির তত্ত্ব: যান্ত্রিকতা থেকে জৈবিকতা দুরখেইম বিশ্বাস করতেন যে প্রতিটি সমাজ কোনো না কোনো রূপে সংহতির উপর নির্ভর করে—একটি সামষ্টিক চেতনা যা ব্যক্তিকে একে অপরের সঙ্গে যুক্ত করে রাখে। তাঁর ক্লাসিক্যাল তত্ত্বে, তিনি দুই ধরনের সংহতির কথা বলেছিলেন। প্রথাগত সমাজে তিনি একে বলেছিলেন যান্ত্রিক সংহতি (Mechanical Solidarity), যা বিশ্বাস, মূল্যবোধ ও জীবনযাপনের মিলের ওপর দাঁড়িয়ে থাকে; এখানে সমাজের প্রত্যেকেই প্রায় একই ধরনের কাজ করত এবং তাদের মধ্যেকার পার্
যদি সমাজবিজ্ঞানী এমিল দুরখেইম (Émile Durkheim) আজকের ঢাকা শহরে এসে হাঁটতেন, তবে তিনি এক জীবন্ত সমাজতাত্ত্বিক পরীক্ষাগার খুঁজে পেতেন—একটি মহানগর যা একই সঙ্গে বৈপরীত্য, দ্বন্দ্ব ও সংযোগে পূর্ণ। যানজটে আটকে থাকা রাস্তায়, চকচকে শপিং মল ও ছিন্নভিন্ন বস্তির মাঝখানে, ধর্মীয় আচার ও ডিজিটাল জীবনের মিলিত জটিলতায় দুরখেইম তাঁর নিজস্ব প্রশ্নটি আবার উত্থাপন করতেন—কীভাবে একটি সমাজ দ্রুত পরিবর্তনের যুগে নৈতিক ভিত্তি ও সামাজিক সংহতি ধরে রাখে? এই প্রশ্নটি কেবল সমাজতাত্ত্বিক নয়, এটি আজকের বাংলাদেশের সামাজিক-রাজনৈতিক বাস্তবতার কেন্দ্রে থাকা একটি জরুরি প্রশ্ন।
সংহতির তত্ত্ব: যান্ত্রিকতা থেকে জৈবিকতা
দুরখেইম বিশ্বাস করতেন যে প্রতিটি সমাজ কোনো না কোনো রূপে সংহতির উপর নির্ভর করে—একটি সামষ্টিক চেতনা যা ব্যক্তিকে একে অপরের সঙ্গে যুক্ত করে রাখে। তাঁর ক্লাসিক্যাল তত্ত্বে, তিনি দুই ধরনের সংহতির কথা বলেছিলেন। প্রথাগত সমাজে তিনি একে বলেছিলেন যান্ত্রিক সংহতি (Mechanical Solidarity), যা বিশ্বাস, মূল্যবোধ ও জীবনযাপনের মিলের ওপর দাঁড়িয়ে থাকে; এখানে সমাজের প্রত্যেকেই প্রায় একই ধরনের কাজ করত এবং তাদের মধ্যেকার পার্থক্য ছিল সামান্য। অন্যদিকে, আধুনিক সমাজে আসে জৈবিক সংহতি (Organic Solidarity), যেখানে মানুষের পারস্পরিক নির্ভরশীলতাই সংহতির মূল। শ্রম বিভাজন যত বাড়ে, মানুষ তত বেশি একে অপরের ওপর নির্ভর করে টিকে থাকে, যেমন মানবদেহের বিভিন্ন অঙ্গের মতো। আজকের ঢাকা শহর এই দুই ধরনের সংহতির এক অনিশ্চিত মিশ্রণ। এখানে গ্রামীণ সমাজের আত্মীয়তাভিত্তিক বন্ধন এখনও টিকে আছে, আবার পাশাপাশিই গড়ে উঠেছে অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক পুঁজিবাদী নগরজীবন। ফলে ঢাকা এক দ্বৈত রূপ ধারণ করেছে—একদিকে ঐতিহ্য, অন্যদিকে আধুনিকতা; একদিকে সামষ্টিকতা, অন্যদিকে তীব্র ব্যক্তিকেন্দ্রিকতা।
নৈতিক শূন্যতা: অ্যানোমি ও ঢাকার হতাশা
ঢাকার সামাজিক জীবনে এখন এক গভীর বিভাজন লক্ষ করা যায়। ধর্মীয় ও পারিবারিক মূল্যবোধে গঠিত পুরোনো সামাজিক কাঠামো দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে অর্থনৈতিক বৈষম্য, রাজনৈতিক মেরুকরণ ও ডিজিটাল বিচ্ছিন্নতার চাপে। দুরখেইমের ভাষায়, এ এক অ্যানোমি (Anomie)—একটি নীতিহীনতার অবস্থা, যখন সমাজের প্রচলিত নৈতিক নিয়ম নতুন আকাঙ্ক্ষা ও ভোগপ্রবণতাকে নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়। শহুরে মধ্যবিত্ত জীবনে কর্তব্যবোধের জায়গায় এসেছে সীমাহীন আকাঙ্ক্ষা, ধর্মীয় সংযমের জায়গা নিয়েছে ভোগবাদ ও প্রতিযোগিতা।
চকচকে ভবন, নতুন অর্থনীতির উচ্ছ্বাস, বা প্রযুক্তিগত গর্বের আড়ালে লুকিয়ে আছে এক গভীর নৈতিক অনিশ্চয়তা। দুরখেইম বলেছিলেন, আধুনিকতা মানুষকে স্বাধীনতা দেয়, কিন্তু সেই স্বাধীনতার মধ্যেই লুকিয়ে থাকে শূন্যতা, উদ্বেগ ও বিচ্ছিন্নতা। ঢাকার তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ক্রমবর্ধমান হতাশা, আত্মহত্যা, মাদকাসক্তি কিংবা দুর্নীতিতে নিমজ্জন—সবই এই নৈতিক শূন্যতার প্রতিফলন। সমাজের প্রথাগত কাঠামো দ্রুত ভেঙে গেলেও, তার জায়গায় একটি নতুন, শক্তিশালী ও সর্বজনীন নৈতিক মানদণ্ড তৈরি হয়নি। ফলে মানুষ দিক-নির্দেশনাহীন, এবং এই অ্যানোমিই সমাজকে ভিতর থেকে দুর্বল করে দিচ্ছে।
জৈবিক সংহতির ভঙ্গুরতা: অর্থনৈতিক সম্পর্ক ও শোষণ
তবুও ঢাকা কেবল নৈতিক অবক্ষয়ের গল্প নয়। এখানে এখনো সংহতির সন্ধান চলছে—যদিও তা নতুন রূপে ও বিচ্ছিন্নভাবে প্রকাশ পাচ্ছে। শহরের শ্রমবাজার, মাইগ্রেশন, ডিজিটাল যোগাযোগ—সব মিলিয়ে এক জটিল আন্তঃনির্ভরশীলতার জাল তৈরি হয়েছে, যা দুরখেইমের জৈবিক সংহতির ধারণারই আধুনিক রূপ। পোশাক শ্রমিক, রিকশাচালক, ডেলিভারি কর্মী বা অনলাইন উদ্যোক্তা—সবাই মিলে এই মহানগর অর্থনীতিকে সচল রাখছে। একজন রিকশাচালক শহরে এসেছেন বলেই হয়তো একটি নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবার জীবিকা নির্বাহ করতে পারছে, আবার তিনি শহরের উচ্চবিত্তের দৈনন্দিন চলাচলকেও সম্ভব করছেন।
“ঢাকায় দুরখেইম” তাই কেবল এক কাল্পনিক ভাবনা নয়, বরং এক বাস্তব সমাজতাত্ত্বিক আহ্বান। দুরখেইমের প্রশ্নগুলো—নৈতিকতা কোথায়, সংহতি কীভাবে টিকে থাকবে, এবং সমাজ কীভাবে নিজেকে পুনর্গঠিত করবে—আজকের বাংলাদেশের বাস্তবতার সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত। আজকের সংকট কেবল অর্থনৈতিক নয়, এটি নৈতিক ও সম্পর্কের সংকট। সমাজ ভেঙে যাচ্ছে শ্রেণি, ধর্ম, রাজনীতি ও প্রযুক্তির বিভাজনে। কিন্তু দুরখেইম বলেছিলেন, সংহতি কখনো পুরোপুরি হারায় না; এটি রূপ বদলে নতুন আকারে ফিরে আসে।
এই অর্থনৈতিক পারস্পরিকতা এক ধরনের অব্যক্ত সংহতি তৈরি করছে, কিন্তু তার ভিত্তি এখনও শোষণ, অসমতা ও অবিচারের ওপর দাঁড়ানো। দুরখেইম সতর্ক করেছিলেন—অর্থনৈতিক সংহতি তখনই টিকে থাকে যখন তা নৈতিক নিয়মের দ্বারা পরিচালিত হয়। ঢাকায় সেই নৈতিক নিয়ন্ত্রণ দুর্বল; মালিক-শ্রমিক, রেন্ট-সিকিং গোষ্ঠী ও সাধারণ মানুষের মধ্যেকার সম্পর্ক নৈতিকভাবে স্বীকৃত নয়। তাই শহরের সংহতি ভঙ্গুর ও অনিশ্চিত, যা সামাজিক অস্থিরতা বা অর্থনৈতিক ধাক্কায় সহজেই ভেঙে পড়তে পারে।
সমষ্টিগত উত্তেজনা: ক্ষণিকের ঐক্য ও স্থায়ী ভাঙন
ছাত্র আন্দোলন, নাগরিক প্রতিবাদ কিংবা মানববন্ধনের মতো ঘটনাগুলো দুরখেইমের “সমষ্টিগত উত্তেজনা” (collective effervescence) ধারণার বাস্তব উদাহরণ। এসব মুহূর্তে মানুষ ব্যক্তিস্বার্থ ভুলে সমাজের নৈতিক চেতনার অংশ হয়ে ওঠে। যখন হাজার হাজার মানুষ একটি সাধারণ দাবি বা অন্যায়ের প্রতিবাদে রাজপথে নামে, তখন তাদের মধ্যে একটি সামষ্টিক শক্তি বা উন্মাদনা তৈরি হয়, যা তাদেরকে একতার বন্ধনে আবদ্ধ করে।
কিন্তু এই উন্মাদনা বেশিক্ষণ টিকে না; আন্দোলন শেষ হয়, আশাভঙ্গ হয়, আর মানুষ ফিরে যায় নিজ নিজ বিচ্ছিন্ন জীবনে। দুরখেইম বলতেন, এটি নৈতিক সংহতির দুর্বলতার লক্ষণ—যেখানে সমাজের সামষ্টিক চেতনা আর স্থায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে টিকিয়ে রাখা যায় না। . মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় যে ঐক্যবোধ বাঙালি জাতিকে এক করেছিল, আজ সেই সামষ্টিক চেতনা ভাঙছে শ্রেণি, মতাদর্শ ও রাজনৈতিক স্বার্থের বিভাজনে। এই ক্ষণস্থায়ী সংহতি প্রমাণ করে, ঢাকার সমাজ এখনো একটি স্থায়ী, নৈতিকভাবে স্বীকৃত ঐক্যের ভিত্তি খুঁজে পায়নি।
ধর্ম ও পবিত্রতার রূপান্তর
ধর্মীয় জীবনও এই পরিবর্তনের মধ্যে এক দ্বন্দ্বময় অবস্থানে রয়েছে। দুরখেইম মনে করতেন ধর্ম সমাজের নৈতিক ভিত্তি, যা যৌথ বিশ্বাস ও আচার-অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মানুষকে সংযুক্ত রাখে। বাংলাদেশের সমাজে ধর্মীয় মূল্যবোধ এখনো নৈতিক কাঠামোর কেন্দ্রে আছে। মসজিদ, মাদ্রাসা ও ধর্মীয় সমাবেশ এখনো মানুষকে একত্র করে, নিয়ন্ত্রণ করে, পথ দেখায়। কিন্তু যখন ধর্ম রাজনীতিকরণ ও গোষ্ঠীস্বার্থের হাতিয়ার হয়ে ওঠে, তখন তা সংহতির বদলে বিভাজনের উৎসে পরিণত হয়। এটি দুরখেইম কথিত ধর্মের ব্যর্থতা নয়, বরং সমাজ পরিবর্তনের লক্ষণ—যখন পবিত্রতা তার স্থানচ্যুত হয়ে ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর স্বার্থে ব্যবহৃত হয়।
আজকের ঢাকায় “পবিত্রতা” নতুন রূপে ফিরে এসেছে—তা আর কেবল উপাসনালয়ে সীমাবদ্ধ নয়, বরং ডিজিটাল পর্দায়ও প্রকাশ পাচ্ছে। স্মার্টফোন, সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার বা ভাইরাল ট্রেন্ড আজ নতুন “পবিত্র প্রতীক”, যা মানুষের আচরণ ও নৈতিকতা নির্ধারণ করছে। অনলাইন কমিউনিটিগুলো ধর্মীয় পরিচয়কে শক্তিশালী করে তুলছে, কিন্তু একইসঙ্গে ভিন্ন মতাবলম্বীদের প্রতি অসহিষ্ণুতাও বাড়িয়ে দিচ্ছে।
নৈতিক পুনর্গঠনের পথে: শিক্ষা ও প্রাতিষ্ঠানিক নৈতিকতা
দুরখেইম শিক্ষা ব্যবস্থাকে সমাজের নৈতিক ভিত্তি পুনর্গঠনের প্রধান মাধ্যম হিসেবে দেখেছিলেন। কিন্তু ঢাকার শিক্ষাব্যবস্থা এখন ক্রমেই বিভক্ত হচ্ছে—ইংরেজি-মাধ্যম ও বাংলা-মাধ্যম, সরকারি ও বেসরকারি, শহর ও গ্রামের মধ্যে এক গভীর ব্যবধান তৈরি হয়েছে। এর ফলে গড়ে উঠছে বিচ্ছিন্ন নৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি—যেখানে তরুণ প্রজন্ম একে অপরের অভিজ্ঞতা থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। কেউ বৈশ্বিক সুযোগ খুঁজছে, কেউ বেকারত্বে হতাশ, কেউ রাজনীতিতে ক্ষুব্ধ। এই বিচ্ছিন্নতা দুরখেইমের ভাষায় নৈতিক অস্থিতিশীলতার লক্ষণ—যেখানে সমাজ তরুণ প্রজন্মকে একক নৈতিক বার্তা দিতে পারছে না।
তবুও, প্রতিদিনের জীবনে আমরা দেখি অন্য এক ধরণের সংহতি—অপ্রাতিষ্ঠানিক, নীরব, কিন্তু শক্তিশালী। বস্তির প্রতিবেশী একে অপরকে সাহায্য করে, দুর্যোগে তরুণরা ত্রাণ নিয়ে ছুটে যায়, অনলাইন দান সংগ্রহে মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে যুক্ত হয়। দুরখেইম এইসব ক্ষুদ্র কর্মকাণ্ডে দেখতেন “নৈতিক ঘনত্ব” (moral density)—এক সামাজিক শক্তি যা সংকটের মধ্যেও সমাজকে টিকিয়ে রাখে। নাগরিক উদ্যোগগুলো এই নৈতিক সংহতিরই প্রমাণ।
কিন্তু রাষ্ট্রের স্তরে এসে দুরখেইমের প্রশ্ন আরও গভীর হয়। তাঁর মতে রাষ্ট্র কেবল প্রশাসনিক কাঠামো নয়, বরং একটি নৈতিক প্রতিষ্ঠান—যা সামষ্টিক চেতনাকে ধারণ করে ও নিয়ন্ত্রণ করে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এই নৈতিক কর্তৃত্ব দুর্বল হয়ে পড়েছে। দুর্নীতি, দলীয়করণ, এবং আস্থাহীনতা রাষ্ট্রের নৈতিক বৈধতাকে ক্ষয় করেছে। দুরখেইমের মতে, নৈতিক পুনর্গঠনের জন্য প্রয়োজন “পেশাগত নৈতিকতা”—যেখানে প্রতিটি ক্ষেত্র নিজের অভ্যন্তরীণ নৈতিক মানদণ্ড তৈরি করে। বাংলাদেশের জন্য এর অর্থ হলো প্রশাসন, শিক্ষা, গণমাধ্যম, ও ব্যবসা খাতে নৈতিক জবাবদিহি প্রতিষ্ঠা করা—যাতে সমাজের সংহতি শুধু আবেগে নয়, প্রতিষ্ঠানেও প্রতিফলিত হয়।
“ঢাকায় দুরখেইম” তাই কেবল এক কাল্পনিক ভাবনা নয়, বরং এক বাস্তব সমাজতাত্ত্বিক আহ্বান। দুরখেইমের প্রশ্নগুলো—নৈতিকতা কোথায়, সংহতি কীভাবে টিকে থাকবে, এবং সমাজ কীভাবে নিজেকে পুনর্গঠিত করবে—আজকের বাংলাদেশের বাস্তবতার সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত। আজকের সংকট কেবল অর্থনৈতিক নয়, এটি নৈতিক ও সম্পর্কের সংকট। সমাজ ভেঙে যাচ্ছে শ্রেণি, ধর্ম, রাজনীতি ও প্রযুক্তির বিভাজনে। কিন্তু দুরখেইম বলেছিলেন, সংহতি কখনো পুরোপুরি হারায় না; এটি রূপ বদলে নতুন আকারে ফিরে আসে।
ঢাকার এই বিশৃঙ্খলার মধ্যেও সেই নতুন সংহতির বীজ লুকিয়ে আছে—যুবসমাজের প্রতিবাদে, নাগরিক উদ্যোগে, এবং সাধারণ মানুষের প্রতিদিনের সহযোগিতায়। দুরখেইমের আত্মা যদি আজকের ঢাকা ঘুরে দেখতেন, তিনি হয়তো বলতেন—সংহতি এখনো জীবিত, কেবল আমাদের তা চেনার দৃষ্টি দরকার। অবশেষে, “ঢাকায় দুরখেইম” আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে সংহতি কোনো অতীতের ধারণা নয়, বরং প্রতিটি সমাজের চলমান প্রকল্প—যেখানে মানুষ অবিরত চেষ্টা করে বিভক্তির ভেতর থেকেও একতার নৈতিক পথ খুঁজে নিতে। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎও এই অনুসন্ধানের ওপর নির্ভর করছে—কীভাবে আমরা ভাঙনের মাঝের এই সংহতির বীজগুলোকে পরিচর্যা করতে পারি, এবং কেমনভাবে একটি নতুন নৈতিক চুক্তির মাধ্যমে আবারও আমাদের “সমষ্টিগত আত্মা”কে পুনরুজ্জীবিত করতে পারি।
লেখক: সমাজবিজ্ঞান ও উন্নয়নবিষয়ক কলাম লেখক ও গবেষক।
[email protected]
এইচআর/এমএস
What's Your Reaction?