ঢাকায় ডাকসুতে শিবিরের জয়, দিল্লিতে দুশ্চিন্তা

3 hours ago 10

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেলের ভূমিধস বিজয় ভারতের নীতিনির্ধারকদের মনে গভীর উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই সাফল্য কেবল ছাত্র রাজনীতিতেই নয়, মূলধারার রাজনীতিতেও জামায়াতে ইসলামীকে পুনরুজ্জীবিত করার পথ খুলে দিতে পারে, যা ভারতের নিরাপত্তা ও কৌশলগত স্বার্থের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।

ভারতের সাবেক পররাষ্ট্রসচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা বৃহস্পতিবার নয়াদিল্লির ইন্ডিয়া ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার আয়োজিত ‌‘আমরা কি বাংলাদেশের নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত?’ শীর্ষক আলোচনায় স্পষ্ট সতর্কবার্তা দেন।

তিনি বলেন, ভারত প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে, বিশেষ করে বাংলাদেশের সঙ্গে, সহযোগিতামূলক সম্পর্ক বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকলেও, যদি ক্ষমতায় এমন কোনো শক্তি আসে যারা ভারতের মূল স্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করে, তবে সতর্ক থাকা ছাড়া উপায় নেই।

শ্রিংলা জামায়াতে ইসলামী প্রসঙ্গে বলেন, ‘চিতা’ কখনো তার লক্ষ্য হারায় না। অর্থাৎ অতীতে যাদের কর্মকাণ্ড ভারতের জন্য শঙ্কার কারণ ছিল, ভবিষ্যতেও তাদের কাছ থেকে ইতিবাচক পরিবর্তনের আশা করা ভুল হবে।

তিনি আরও বলেন, ক্ষমতায় যেই আসুক আমরা তার সঙ্গে কাজ করব, এটি ঠিক আছে। কিন্তু যদি সেই কেউ আপনার স্বার্থবিরোধী কাজ করে, তবে আপনাকে অবশ্যই প্রস্তুত থাকতে হবে।

ঢাকায় ভারতের হাইকমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করা শ্রিংলার বক্তব্য দিল্লির কূটনৈতিক মহলে তীব্র সাড়া ফেলেছে। অনেকেই মনে করছেন, জামায়াতের ছাত্রসংগঠনের এই বিজয় আসন্ন ফেব্রুয়ারি ২০২৬ সালের সাধারণ নির্বাচনের প্রেক্ষাপট পাল্টে দিতে পারে।

এদিকে, ডাকসুতে ছাত্রশিবিরের বিজয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ভারতের বিরোধী দল কংগ্রেসের জ্যেষ্ঠ নেতা শশী থারুর। বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) এক্সে (আগে টুইটার) দেওয়া এক পোস্টে তিনি এ নির্বাচনকে ‘আসন্ন দিনগুলোর জন্য একটি উদ্বেগজনক ইঙ্গিত’ হিসেবে আখ্যা দেন।

থারুর প্রশ্ন তোলেন, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে কী জামায়াতে ইসলামীর সরকার গঠন দেখা যাবে? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রশিবিরের এই জয়ের প্রভাব জাতীয় নির্বাচনে কতটুকু পড়বে?

শশী থারুর লিখেছেন, ভারতের বেশিরভাগ মানুষের কাছে শিবিরের জয় পাওয়া একটি সাধারণ বিষয় মনে হতে পারে, কিন্তু এটি আসন্ন দিনগুলোর জন্য একটি উদ্বেগজনক ইঙ্গিত।

তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশে প্রধান দুই রাজনৈতিক দল (বর্তমানে নিষিদ্ধ) আওয়ামী লীগ এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) উভয়ের প্রতিই জনগণের মধ্যে অসন্তোষ বেড়েই চলেছে। আর যারা এ দুটি দলের ওপর বিরক্ত তারা জামায়াতের দিকে ঝুঁকছেন।

থারুর আরও লেখেন, যারা জামায়াতে ইসলামীর দিকে ঝুঁকছে তাদের অধিকাংশই ধর্মান্ধ বা কট্টরপন্থি ইসলামে বিশ্বাসী নয়। তবে জামায়াতে ইসলামী এমন কোনো দুর্নীতি বা অব্যবস্থাপনার সাথে যুক্ত নয়, যা অন্য দুটি মূলধারার দলের ক্ষেত্রে দেখা যায়।

তিনি প্রশ্ন তুলে লেখেন, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির সাধারণ নির্বাচনে এর কেমন প্রভাব পড়বে? নয়াদিল্লিকে কী তাহলে প্রতিবেশী দেশে জামায়াতের সংখ্যাগরিষ্ঠতার (সরকারের) মোকাবিলা করতে হবে?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঐক্যবদ্ধ ছাত্র জোটের ব্যানারে ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত প্রার্থীরা সহ-সভাপতি (ভিপি), সাধারণ সম্পাদক (জিএস) এবং সহকারী সাধারণ সম্পাদকসহ (এজিএস) মোট ১৫টি গুরুত্বপূর্ণ পদের মধ্যে ৯টিতেই জয়ী হয়েছে।

সূত্র: বিজনেস টুডে, পিটিআই

এসএএইচ/এমআরএম

Read Entire Article