ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বিভিন্ন হলের সদ্য ঘোষণা করা ছাত্রদল কমিটিতে একাধিক পদধারীর বিরুদ্ধে অতীতে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগ ওঠে, পদধারী অনেকে ছাত্রলীগের কর্মী, নেতা কিংবা ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। এমনকি কেউ কেউ মিছিল-সমাবেশের সামনের সারিতে সক্রিয় থেকেও এখন ছাত্রদলের গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হয়েছেন।
শুক্রবার (৮ আগস্ট) সকাল সাড়ে দশটায় সংগঠনটি হল কমিটি প্রকাশের পর থেকেই এমন অভিযোগ উঠতে শুরু করে।
যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ-
রোকেয়া হলের ছাত্রলীগ কর্মী ছিলেন বর্তমান হল শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মোছা. শ্রাবণী আক্তার। একই হলের সদস্য সচিব আনিকা বিনতে আশরাফের সঙ্গে ছাত্রলীগের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের অভিযোগ আছে। বুয়েটের বিতর্কিত ছাত্রলীগ নেতা ইমতিয়াজ রাব্বীর সঙ্গে তার ছবি ভেসে বেড়াচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
কুয়েত মৈত্রী হলের সদস্য সচিব পদধারী জান্নাতুল ফেরদৌস পুতুল ছাত্রলীগের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ছিলেন, থাকতেন মিছিল র্যালির সামনের সারিতে। তিনি ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতের কালচারাল টিমের সদস্য ছিলেন। কুয়েত-মৈত্রী হলে এটাচড হওয়া সত্ত্বেও তিনি অবৈধভাবে রোকেয়া হলের সভাপতি আতিকা বিনতে হোসাইনের সঙ্গে রাজনীতি করতেন।
ছাত্রলীগের সঞ্জীব-সাদ্দাম কমিটিতে উপ-গণযোগাযোগ সম্পাদক পদে ছিলেন শামসুন্নাহার হলের বর্তমান ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক নিতু রানী সাহা।
সুফিয়া কামাল হলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক পদ পাওয়া জাকিয়া সুলতানা আলো সুফিয়া কামাল হলে এটাচড হওয়া সত্ত্বেও থাকতেন রোকেয়া হলে। ছাত্রলীগ নেত্রী সাজিয়া রহমান সিলভীর কাছের ছোটবোন হিসেবে ছাত্রলীগে পরিচিত ছিলেন তিনি।
অভিযোগ রয়েছে, নাহিদুজ্জামান শিপনের আপন ছোট ভাই মাহদীজ্জামান জ্যোতি দ্বিতীয় বর্ষে পড়েও ভাইয়ের ক্ষমতায় বাগিয়েছেন এফ রহমান হলের সদস্য সচিব পদ। তাছাড়া হল ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক সাখাওয়াত হোসাইন হয়েছেন হলের যুগ্ম আহ্বায়ক, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুমেন শাহরিয়ারের আস্থাভাজন হয়েও মুনতাহা মিথ যুগ্ম আহবায়ক পদ পান। বাদশাহ বিন ফরহাদ আলভি পান সদস্য পদ।
শহীদুল্লাহ হলের আহ্বায়ক হয়েছেন মোসাদ্দেক আল হক শান্ত, তার বাবা নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেছেন। পুরো পরিবার আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত। জীববিজ্ঞান অনুষদ ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি পদে থাকা রাকিবুল হাসান সৌরভ পেয়েছেন ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ হলের সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক পদ।
ছাত্রলীগের ক্যান্ডিডেটদের সঙ্গে নিয়ে ভিসিকে ফুল দেওয়া মো. আবিদ হাসনাত, ইমরান হোসেন হয়েছেন ফজলুল হক মুসলিম হলের আহ্বায়ক।আবার ফজলুল হক হল ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী রাকিব হাসান পেয়ছেন যুগ্ম আহ্বায়ক পদ।
জিয়াউর রহমান হলের রাজু শেখ খালেদা জিয়াকে কটুক্তি করে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েও পেয়েছেন যুগ্ম আহ্বায়ক পদ। একই হলের ছাত্রলীগের পরিচিত মুখ মাহমুদ হাসান প্রলয় গ্যাং এর সক্রিয় সদস্য এবং হলের সবচেয়ে উগ্র ছাত্র নির্যাতনকারী ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ৫ আগস্টের পরপরই সম্মিলিত সিদ্ধান্তে হলের ছাত্রশিক্ষকরা তাকে বের করে দেয়। এখন তিনি জিয়া হল ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক।
ছাত্রলীগের সংসদীয় আসনভিত্তিক কমিটির সদস্য আজিজুল হাকিম ও তৌফিকুল ইসলাম প্রতিক, মাহিন আহমেদ কমিটিতে যুগ্ম আহ্বায়ক পদ পান।
মাস্টার দ্যা সূর্যসেন হলে ছাত্রলীগের মিছিলের নেতা আতিক মন্ডল ও মাহিদুল ইসলাম ফাহিম হয়েছেন ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক।
হাজী মুহম্মদ মুহসিন হলে ছাত্রলীগের সংসদীয় আসনভিত্তিক কমিটির সদস্য শিবলী রহমান পাভেল, ছাত্রলীগের ক্যান্ডিডেট এবং সৈকতের ক্যাডার মিরাজুল ইসলাম মিরাজের একান্ত আস্থাভাজন মেরাজ শাহরিয়ার অপু, ছাত্রলীগ কর্মী জনি প্রামাণিক পেয়েছেন হলের যুগ্ম আহ্বায়ক পদ।
জহুরুল হক হল ছাত্রলীগের পদপ্রার্থী নেতা ফরিদের সহযোগী হাসনাত তারিক জীম ও ফেনী জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি সেক্রেটারির সঙ্গে মিটিং করা হলের সক্রিয় কর্মী জিন্নাহ চৌধুরী যুগ্ম আহ্বায়ক পদ পেয়েছেন।
মো. সজীব হোসেন গেস্টরুমে জুনিয়রদের নির্যাতনকারীদের অন্যতম বলে হলে পরিচিতি আছেন। রাত ২-৩ টার সময় জুনিয়রদের ডেকে সিগারেট আনতে পাঠানোসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তিনি পেয়েছেন যুগ্ম আহ্বায়ক পদ।
শেখ মুজিবুর রহমান হলের সক্রিয় ছাত্রলীগ কর্মী আব্দুল্লাহ আল নোমান ও মোস্তফা হোসেন লিখন ও মোমিতুর রহমান পিয়াল পেয়েছেন যুগ্ম আহ্বায়ক পদ। ইমতিয়াজ আহমেদ হয়েছেন সদস্য। ছাত্রলীগের ঢাবি সভাপতি শয়নের রাজনীতি করা সাদমান বিন শাওন, হলের সভাপতি শান্তর আস্থাভাজন রোমান সরকার হয়েছেন যুগ্ম আহ্বায়ক।
অমর একুশে হলের ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী আব্দুল হামিদ পেয়েছেন হলের সদস্য সচিব পদ।
বিজয় একাত্তর হলের গেস্টরুমের ত্রাস ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে রাকিবুল হাসান রাকিবের বিরুদ্ধে। জুনিয়রদের জুতা নিয়ে তেড়ে আসায় ‘জুতা রাকিব’ নামে পরিচিত পেয়েছিলন তিনি। সেই রাকিব যুগ্ম আহ্বায়ক পদ পেয়েছেন।
আরকানুল ইসলাম রূপক পেয়েছেন যুগ্ম আহ্বায়ক পদ। ২৪ সালের ৩ আগস্ট ‘এক দফার কবর দে’ ঘোষণা করে হল থেকে বহিস্কৃত আহমেদ জাবির মাহাম সদস্য পদ পান।
জগন্নাথ হলের সক্রিয় ছাত্রলীগ কর্মী ধ্রুব রয় পেয়েছেন সদস্য পদ।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাবি ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন জাগোনিউজকে বলেন, গত সেপ্টেম্বর-অক্টোবর থেকে যারা আমাদের প্রাথমিক সদস্য পদ পূরণ করে আমাদের সঙ্গে থেকেছেন এবং অভ্যুত্থানের আগেও আমাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন তাদেরকে আমরা কমিটিতে রাখার চেষ্টা করেছি। এরপরও যদি কেউ পরিচয় গোপন করে থাকেন তাহলে আমরা সে বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবো।
এফএআর/এনএইচআর/এএসএম