ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শিক্ষার্থীদের স্মার্ট কার্ড (পরিচয়পত্র) ফি কমানো, প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ক্লাস শুরুর প্রথম সপ্তাহের মধ্যে কার্ড প্রদান, কার্ড হারানোর জন্য ভোগান্তি লাঘব এবং সব কাজে শুধুমাত্র স্মার্ট পরিচয়পত্রের মাধ্যমে সেবা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
বুধবার (১৫ জানুয়ারি) বিকেলে এসব দাবি জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান বরাবর একটি স্মারকলিপি দিয়েছেন।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের থেকে গত ৮ বছর যাবত ৬০০ টাকা নিয়ে স্মার্ট পরিচয়পত্র প্রদান করে থাকে। এই ফি অত্যন্ত বেশী এবং অযৌক্তিক। বর্তমানে বাজারে ১৫০-২০০ টাকার মধ্যে অত্যাধুনিক সুবিধাসম্পন্ন চিপযুক্ত কার্ড পাওয়া যায়। অধিকন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব প্রিন্টারে পরিচয়পত্র বানানো হয়, এই প্রিন্টার একবার কিনলেই আর প্রতিবছর কিনতে হয় না। ফলে প্রতি বছর স্মার্ট পরিচয়পত্র বাবদ ৬০০ টাকা ফি নেওয়া আমরা অযৌক্তিক বলে মনে করি। আমরা মনে করি, বিশ্ববিদ্যালয় তার নিজস্ব ফান্ড থেকে শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে স্মার্ট পরিচয়পত্র প্রদান করা উচিত।
এতে আরও বলা হয়, প্রত্যেক বছর প্রথম বর্ষে ভর্তি হওয়ার সময় শিক্ষার্থীদের থেকে স্মার্ট পরিচয়পত্রের জন্য ফি নেওয়া হয়। অথচ সময় মত স্মার্ট কার্ড প্রদান করা হয় না। স্মার্ট পরিচয়পত্র হারিয়ে গেলে অত্যন্ত ভোগান্তির প্রক্রিয়ায় যেতে হয় (থানায় জিডি, বিভাগের প্রত্যয়ন, প্রশাসনিক ভবনে দরখাস্তসহ অনেক কাজ করতে হয়) এবং এক হাজার টাকা জরিমানা প্রদান করতে হয়। এটি শিক্ষার্থীদের উপর নিপীড়নমূলক প্রক্রিয়া। স্মার্ট পরিচয়পত্রের মাধ্যমে লাইব্রেরি অ্যাক্সেস-মেডিকেল সুবিধাসহ নানা সুবিধা নিশ্চিত করার ছিল। তবে বিগত ৫-৬ বছরেও এই পরিচয়পত্রের কোনো ব্যবহার দেখা যায়নি। বরং হলের পরিচয়পত্র, লাইব্রেরির জন্য আলাদা পরিচয়পত্র, বিভাগের লাইব্রেরি/সেমিনারে আরেক পরিচয় পত্র, মেডিকেল সেন্টারের জন্য আলাদা বহি নিয়ে সেবা নিতে হয়। একটি ইউনিভার্সিটিতে একাধিক পরিচয়পত্রের ব্যবহার হয়রানিমূলক।
স্মারকলিপিতে শিক্ষার্থীরা পাঁচ দফা দাবি জানান, সেগুলো হলো- শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে স্মার্ট পরিচয়পত্র প্রদান করা হোক। এটি একেবারে সম্ভব না হলে বিদ্যমান ফি কমিয়ে এটিকে নূন্যতম পর্যায়ে এনে নির্ধারণ করা হোক; প্রথম বর্ষে ক্লাস শুরুর এক সপ্তাহের মধ্যে সকল শিক্ষার্থীকে স্মার্ট পরিচয়পত্র সরবরাহ করতে হবে; স্মার্ট পরিচয়পত্র হারিয়ে গেলে সহজ এবং নির্বিঘ্নে শিক্ষার্থীকে ন্যূনতম ফি নিয়ে পুনরায় স্মার্ট পরিচয়পত্র দিতে হবে; অবিলম্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক পরিচয়পত্র বাতিল করে শুধু স্মার্ট পরিচয়পত্রের মাধ্যমে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিস থেকে সনদ-নম্বরপত্র উত্তোলন, কেন্দ্রীয় ও বিজ্ঞান লাইব্রেরি রিসোর্স অ্যাক্সেস-বিভাগের সেমিনার/লাইব্রেরির রিসোর্স অ্যাক্সেস, মেডিকেল সেন্টারের সেবা প্রাপ্তি, হল অফিস এবং নিরাপত্তা বিষয়ক বিভিন্ন যাচাই ও নিরীক্ষণ কাজে এটির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে এবং আগামী এক মাসের মধ্যে আমাদের দাবির কতটুকু বাস্তবায়িত হয়েছে সেটি আপডেট জানাতে হবে।
উপাচার্যকে স্মারকলিপি দেওয়ার সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ও ঢাবির সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী আব্দুল কাদের, শামসুন নাহার হলের শিক্ষার্থী আশরেফা খাতুন, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ, ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হলের শিক্ষার্থী সুলতানা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের শিক্ষার্থী হাসিবুল ইসলাম প্রমুখ।