ঢাবিতে ছাত্রদলের কোরআন তেলাওয়াত প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত

7 hours ago 7

পবিত্র মাহে রমজান উপলক্ষে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল আয়োজিত ৩ দিনব্যাপী হিফজুল কোরআন ও কোরআন তিলাওয়াত প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) সকাল ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি অডিটরিয়ামে এ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।

ছাত্রদল সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিবের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছিরের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য আমানুল্লাহ আমান, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন‌ নবী খান সোহেল, যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল ও প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু।

বক্তব্যে সুলতান সালাউদ্দিন টুকু বলেন, ছাত্রদলের এ কোরআন তেলাওয়াতের আয়োজন করার কথা বলেছিলেন জননেতা তারেক রহমান। এটাই এ ক্যাম্পাসে প্রথম। এর আগে ফ্যাসিস্ট হাসিনা এ ধরনের আয়োজন করতে দেয় নাই।

তিনি বলেন, আগে সংস্কার পরে নির্বাচন এটা ফ্যাসিবাদের মতো আচরণ। বিএনপি সবাইকে নিয়ে পথ চলতে চায়। কোনোভাবেই আমরা আর সন্ত্রাসের রাজনীতি কায়েম করতে দিব না।

যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি বলেন, আজকের এ আয়োজন ছাত্র রাজনীতির মধ্যে একটি গুণগত পরিবর্তন। আজ থেকে বিশ বছর আগের কোনো ছেলে ছাত্ররাজনীতির ভালো কোনো দিক দেখেছে বলে আমি মনে করি না। ছাত্রলীগের রাজনীতিকেই তারা মনে করতো এটাই রাজনীতি।

তিনি বলেন, এ ছাত্ররাজনীতি আমাদের সমাজকে কলুষিত করেছিল। আমাদের সমাজ ও সংস্কৃতি ধ্বংস করেছিল। পাঁচ তারিখের পর জাতীয় রাজনীতি ও নেতৃত্বে পরিবর্তন এসেছে। একইভাবে ছাত্ররাজনীতি ও এর নেতৃত্বে যারা আছেন সেখানেও পরিবর্তন এসেছে এবং এ বিষয়কে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল খুব ভালো করেই গ্রহণ করেছে বলে আমার বিশ্বাস। আজকের এ আয়োজন যারা করেছেন সামনেও তারা এগুলো ধরে রাখবেন।

এ্যানি বলেন, ছাত্রদলের এ মুহূর্তে করণীয় কি এবং কোন কোন পদ্ধতিতে ছাত্ররাজনীতির ধারা ফিরিয়ে আনা যায় সে বিষয়ে জননেতা তারেক রহমান পজিটিভ ওয়েতে দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন।

হাবিব উন‌ নবী খান সোহেল বলেন, স্বৈরাচার যখন ক্ষমতায় থাকে তখন সাদা-কে সাদা, কালো-কে কালো বলা যায় না। মামুনুল হক সাহেবকে গ্রেপ্তার করে অমানুষিক নির্যাতন করা হয়েছিল এবং মাসের পর মাস আটকে রাখা হয়েছিল।

তিনি বলেন, ছাত্রদল মেধাবীদের সংগঠন। আজকে আমরা কোরআন তেলাওয়াত শুনলাম। আমাদের ছোট্ট ছোট্ট ভাই-বোনেরা কত সুন্দর করে তেলাওয়াত করলো এটা কিন্তু তারা একদিনে অর্জন করেনি। ছাত্রদল যেন এ ধরনের আয়োজন অব্যাহত রাখে।

গ্রামাঞ্চলে থাকা মেধাবী শিক্ষার্থীদের টার্গেট করার তাগিদ দিয়ে সোহেল বলেন, শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ ও নগরায়ণের ফলে আমাদের গ্রামের মেধাবীরা যাতে হারিয়ে না যায়। গ্রামাঞ্চলে নজর দিয়ে সেখান থেকে মেধাবীদের বের করে আনবে ছাত্রদল। ছাত্রদল মেধাবী খুঁজবে আর গুন্ডারা গুন্ডা খুঁজবে, ধর্ষণকারীরা ধর্ষককে খুঁজবে।

ছাত্রদলের উদ্দেশে সোহেল বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে কিছু ঘটনা আমাদের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে। এর মধ্যে কিছু কিছু অপপ্রচার কিন্তু সব অপপ্রচার না। দীর্ঘ পনেরো-ষোলো বছর তোমাদের ওপর নির্যাতন হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই তোমাদের মনে প্রতিহিংসার দানা বাঁধতে পারে। ছাত্রদল চাইলে বাংলাদেশ স্থবির করে দিতে পারে। সাফল্যই সেরা প্রতিশোধ।

আমানুল্লাহ আমান বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া যারা বাংলাদেশের সব বোর্ডে ফার্স্ট ও সেকেন্ড হয়েছে তাদেরকে বিদেশে ও জাতিসংঘের অধিবেশনে সঙ্গে করে নিয়ে যেতেন। সব বোর্ডের ছাত্র-ছাত্রী দেখত যে ফার্স্ট ও সেকেন্ড হলে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যাওয়া যায়। এটা কিন্তু শুরু করেছিলেন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। মেয়েদের যে উপবৃত্তি দিয়ে আজকে ছেলেদের চেয়ে স্কুলে মেয়েদের সংখ্যা বেশি, নারীদের মূল্যায়ন, এটা করেছেন বেগম খালেদা জিয়া। মহিলা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ও করলেন বেগম খালেদা জিয়া। কোন কাজটা করে নাই বিএনপি?

আমান বলেন, বাংলাদেশের বিভিন্ন সংকটকালে কারা নেতৃত্ব দিয়েছে আজকের এ প্রজন্মকে জানতে হবে। যখন বাংলাদেশ হানাদার বাহিনীর আক্রমণের শিকার হলো ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ, বাংলাদেশের মানুষ দিগ্বিদিক পাচ্ছে না কোথায় যাবে, কী করবে, কী সিদ্ধান্ত নিবে, সেই সময়ে একাত্তর সালে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দিলেন। সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু হলো। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলো। লক্ষ লক্ষ শহীদের বিনিময়ে আমরা পেলাম স্বাধীনতা।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক বলেন, অনেকে বিএনপি এবং আওয়ামীলীগকে এক পাল্লায় বিচার করে, আমি মনে করি এটা অনেক বড় অবিচার। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি কোনো ইসলামিক রাজনৈতিক সংগঠন নয়, তবে এ দুটির মধ্যে ঐতিহাসিক অনেক ব্যবধান রয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা যদি এদেশের রাজনীতি ইতিহাস পর্যালোচনা করি তাহলে সবসময়ই আমরা এদেশে দুটি ধারা লক্ষ্য করতে পাই। সেই অবিভক্ত ব্রিটিশ আমল থেকে যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ঘোষণা এসেছিল, যখন ঢাকাকে কেন্দ্র করে পূর্ববঙ্গের উত্থানের ঘোষণা এসেছিল, যখন মুসলিম জাতিসত্তা প্রতিষ্ঠার ঘোষণা এসেছিল, তখন এ বঙ্গ অঞ্চল থেকে কিছু মানুষ তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেছিল, তারা ঢাকাকে কেন্দ্র করে পূর্ব বাংলার উত্থানকে ঠেকিয়ে দিতে চেয়েছিল যারা মুসলিম জাতিসত্তার বিরোধী ছিল। সেই ঐতিহাসিক ধারা ব্রিটিশ আমল থেকে চলে এসেছে।

এভাবে দুটি ধারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সংঘাত চলেছে লড়াই চলেছে। একটি ধারা ছিল পূর্ববঙ্গকেন্দ্রিক, আমি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদ তথা মুসলিম জাতীয়তাবাদের তথা মুসলিম জাতিসত্তা গঠনের যে ঐতিহাসিক ধারা এ ধারায় যারা রাজনীতি করে জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির সেই ধারার প্রতিনিধিত্ব করে। বিএনপিকে যেমন এ কথাটা মনে রাখতে হবে যার বিএনপির সমালোচনা করে তাদের এ কথাটা মনে রাখতে হবে।

Read Entire Article