ঢাবিতে ফিলিস্তিনের পক্ষে সংহতি সমাবেশে দুই শিক্ষার্থীকে মারধর

5 hours ago 2

ফিলিস্তিনের ওপর চালানো দখলদার ইসরায়েলের সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে বিক্ষোভকালে দুই শিক্ষার্থীর ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। 

সোমবার (৭ এপ্রিল) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় এ হামলার ঘটনা ঘটে।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে প্রত্যক্ষদর্শী ও বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের (বাগছাস) ঢাবি শাখার আহ্বায়ক আব্দুল কাদের কালবেলাকে বলেন, আমি আর মাহিন সাড়ে ১১টার দিকে টিএসসিতে চা খাচ্ছিলাম। এমন সময় খেয়াল করলাম, নটরডেম কলেজের পোশাক পরা চারজন শিক্ষার্থী কপালে ও হাতে কালো পতাকা নিয়ে রাজু ভাস্কর্যের দিকে যাচ্ছে। তখন আমি তাদের বুঝিয়ে বলার পর তারা সেগুলো খুলে ফেলে। পরে আবার খেয়াল করলাম কালো পতাকা হাতে মাইকের কাছে কয়েকজন দাঁড়িয়ে আছেন। তারা কালো পতাকা উড়াচ্ছে।

কাদের বলেন, তখন আমরা তাদের যখন বোঝাতে গেছি, আপনারা এই পতাকা নামিয়ে ফেলেন। এগুলো ভিন্ন বার্তা দিচ্ছে। তখন অভিযুক্তসহ (রায়ান) তিন থেকে চারজন চিল্লাচিল্লি শুরু করে এই বলে, আমরা নাকি ইসলামবিরোধী। আমাদের মারার জন্য উপস্থিত সবাইকে উসকে দেয় তারা। পরে সেখানে উপস্থিত সাংবাদিকরা আমাকে টিএসসির ভিতরে নিয়ে যায়। না হলে আমাকে মারধর করা হতো।

জানা যায়, এসময় খালেদ হাসান ও সানি সরকার নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীকে ৫০-৬০ জনের একটি দল ব্যাপক মারধর করে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাদেরকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসা শেষে তাদের ঢাবির শহীদ বুদ্ধিজীবী মোর্তজা মেডিকেল সেন্টারে রাখা হয়েছে। খালেদ হাসান আরবি বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষ ও সানি সরকার রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।

এদিকে,এ হামলার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের রায়ানকে সন্দেহ করছেন শিক্ষার্থীরা। রায়ান থাকতেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলে। তিনি নিষিদ্ধ সংগঠন হিজবুত তাহরীরের অন্যতম সংগঠক বলে নিশ্চিত হয়েছে কালবেলা।

সূত্র জানায়, রায়ানের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নানা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে নিষিদ্ধ সংগঠন হিজবুত তাহরীর। ৫ আগস্টের পরে ঢাবি ক্যাম্পাসে হিজবুত তাহরীর যেসব কর্মসূচি পালন করেছে সেগুলোতে সরব ছিলেন তিনি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রায়ানের এক বন্ধু কালবেলাকে বলেন, ‘রায়ান দীর্ঘদিন ধরে হিজবুত তাহরীরের সাথে জড়িত। ক্যাম্পাসে ওদের যত প্রোগ্রাম হয় সব জায়গায় রায়ান থাকে। মূলত সে এর অন্যতম সংগঠক হিসেবে কাজ করে।’ রায়ান ছাড়া বাকি তিনজনের পরিচয় পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে রায়ানের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এদিকে এ ঘটনায় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা একটি মামলা দায়ের করবে বলে জানান আব্দুল কাদের। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে এ ঘটনা অবহিত করা হলেও তারা কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেননি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমেদ কালবেলাকে বলেন, আমরা বিষয়টি খুব সিরিয়াসলি দেখছি। হিজবুত তাহরীরের সাথে জড়িত থাকার যে অভিযোগ আসছে আমরা সেগুলো আরও যাচাই-বাছাই করছি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও এখানে কাজ করছে। সবকিছু জেনে তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।

প্রক্টরিয়াল টিম নিষ্ক্রিয় ছিল শিক্ষার্থীদের এমন অভিযোগের জবাবে প্রক্টর বলেন, সেখানে শত শত মানুষ ছিল। এখানে কোন কিছু করতে গেলে ভেবেচিন্তে করতে হয়। তারা ভূমিকা রেখেছে। নিবৃত থাকেনি।

এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মামলা করবে না বলে জানান প্রক্টর। তবে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা যদি মামলা করেন তাহলে সেক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যথাযথ সহযোগিতা করবে বলে জানান তিনি।

Read Entire Article