ঢাবির ঝুঁকিপূর্ণ হলে বসবাস, নীতিনির্ধারকদের ঘুম ভাঙবে কবে?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক আবাসিক হল দীর্ঘদিন ধরে গঠনগত অবনতি, জরাজীর্ণ কাঠামো ও অকার্যকর নিরাপত্তা ব্যবস্থার কারণে মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে। পাকিস্তান আমল কিংবা তারও আগে নির্মিত এসব ভবনের অধিকাংশেই দীর্ঘদিন ধরে বড় ধরনের সংস্কার হয়নি। ফলে প্লাস্টার খসে পড়া, দেওয়ালে ফাটল, ছাদের রড বেরিয়ে থাকা এবং অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থার ভঙ্গুর। শিক্ষার্থীদের মাঝে নতুন করে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। ১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠিত সলিমুল্লাহ মুসলিম হল ঢাবির সবচেয়ে পুরোনো হলগুলোর একটি, গেলো কয়েক বছর ধরে বারবার সংবাদ শিরোনাম হয়ে আসছে। হলের করিডর, পুরোনো ব্লক ও একাধিক কক্ষে বড় ফাটল দেখা গেছে, ছাদের পলেস্তারা খসে পড়েছে, এমনকি কোথাও কোথাও লোহার রড বেরিয়ে রয়েছে। কয়েক মাস আগেই একাধিক কক্ষে প্লাস্টার পড়ে শিক্ষার্থীরা আহত হন, যা প্রশাসনের প্রতি অসন্তোষ আরও বাড়িয়ে তোলে। ১৯৬৭ সালে নির্মিত হাজী মুহসীন হলও একই দুরবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। হলের ক্যান্টিন, সিঁড়িঘর এবং বিভিন্ন ব্লকের ফাটল, মেঝের ফাটল এবং দেওয়ালের পলেস্তারা খসে পড়া এখন নিয়মিত ঘটনা। হল সংসদের জিএস রাফিদ হাসান সাফওয়ান বলেন, রাতে আকস্মিকভাবে ছাদের অংশ খসে পড়ার শব্দে ঘুম ভেঙে
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক আবাসিক হল দীর্ঘদিন ধরে গঠনগত অবনতি, জরাজীর্ণ কাঠামো ও অকার্যকর নিরাপত্তা ব্যবস্থার কারণে মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে।
পাকিস্তান আমল কিংবা তারও আগে নির্মিত এসব ভবনের অধিকাংশেই দীর্ঘদিন ধরে বড় ধরনের সংস্কার হয়নি। ফলে প্লাস্টার খসে পড়া, দেওয়ালে ফাটল, ছাদের রড বেরিয়ে থাকা এবং অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থার ভঙ্গুর। শিক্ষার্থীদের মাঝে নতুন করে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে।
১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠিত সলিমুল্লাহ মুসলিম হল ঢাবির সবচেয়ে পুরোনো হলগুলোর একটি, গেলো কয়েক বছর ধরে বারবার সংবাদ শিরোনাম হয়ে আসছে। হলের করিডর, পুরোনো ব্লক ও একাধিক কক্ষে বড় ফাটল দেখা গেছে, ছাদের পলেস্তারা খসে পড়েছে, এমনকি কোথাও কোথাও লোহার রড বেরিয়ে রয়েছে। কয়েক মাস আগেই একাধিক কক্ষে প্লাস্টার পড়ে শিক্ষার্থীরা আহত হন, যা প্রশাসনের প্রতি অসন্তোষ আরও বাড়িয়ে তোলে।
১৯৬৭ সালে নির্মিত হাজী মুহসীন হলও একই দুরবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। হলের ক্যান্টিন, সিঁড়িঘর এবং বিভিন্ন ব্লকের ফাটল, মেঝের ফাটল এবং দেওয়ালের পলেস্তারা খসে পড়া এখন নিয়মিত ঘটনা। হল সংসদের জিএস
রাফিদ হাসান সাফওয়ান বলেন, রাতে আকস্মিকভাবে ছাদের অংশ খসে পড়ার শব্দে ঘুম ভেঙে যায়। অগ্নিনির্বাপক সরঞ্জামের বড় অংশই মেয়াদোত্তীর্ণ বা অকার্যকর হওয়ায় যে কোনো মুহূর্তে বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছি।
বাংলাদেশ‑কুয়েত মৈত্রী হলের ভবনগুলো কাঠামোগত এবং আবাসনগত সমস্যায় জর্জরিত। ২০০৬ সালে সেই ভবনটি প্রকৌশল শাখা দ্বারা ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছিল, তারপরও হাজারের মতো শিক্ষার্থী এখানে বসবাস করছেন।
১৯৪১ সালে প্রতিষ্ঠিত ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হলেও একই চিত্র। বিশেষ করে এক্সটেনশন ভবনে ছাদের পলেস্তারা খসে পড়া, দেওয়ালে লম্বা ফাটল এবং স্যাঁতসেঁতে দেওয়াল নিয়ে শিক্ষার্থীরা বহুদিন ধরে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। আংশিক সংস্কার হলেও অনেক কক্ষ এখনো ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে, যা শিক্ষার্থীদের দৈনন্দিন জীবনকে অনিরাপদ করে তুলছে।
১৯৭৬ সালে প্রতিষ্ঠিত কবি জসীম উদ্দীন হল সম্প্রতি আলোচনায় আসে ৩২৪ নম্বর কক্ষে হঠাৎ করে দেওয়ালের প্লাস্টার খসে পড়ে এক শিক্ষার্থী আহত হওয়ার ঘটনায়। ভবনের পুরোনো ব্লকে দীর্ঘদিন ধরে ফাটল ও পলেস্তারা খসে পড়ার ঘটনা ঘটলেও বড় ধরনের সংস্কারের উদ্যোগ এখনও নেওয়া হয়নি।
এ ছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও কয়েকটি আবাসিক হল বহুদিন ধরে কাঠামোগত জীর্ণতা ও প্রয়োজনীয় রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
ফজলুল হক মুসলিম হল, সুর্যসেন হল এবং জহুরুল হক হল-প্রতিটি হলের দেওয়ালে দীর্ঘ ফাটল সৃষ্টি, পুরোনো পাইপলাইনের কারণে কক্ষ ও করিডরে পানি জমে থাকা এবং অগ্নিনিরাপত্তা সরঞ্জামের ঘাটতি শিক্ষার্থীদের উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
১৯৪০ সালে প্রতিষ্ঠিত ফজলুল হক মুসলিম হল ঢাবির অন্যতম ঐতিহ্যবাহী আবাসিক হল। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বারবার সংস্কার দাবি উত্থাপিত হলেও বড় কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি। শিক্ষার্থীরা জানান, রাতের বেলা ছাদের অংশ ভেঙে পড়া, ওয়াশরুমের দেওয়াল খসে পড়া এবং পুরোনো বৈদ্যুতিক লাইনের শটসার্কিটের ভয় নিয়ে তাদের থাকতে হয়। বিশেষ করে বর্ষাকালে পানিনিষ্কাশন ব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে পড়ায় হলের নিচতলার করিডর ও কক্ষগুলোতে স্থায়ী জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।
১৯৬৪ সালে নির্মিত সূর্যসেন হলের অবস্থাও বেশ নাজুক। পুরোনো ভবনটির কিছু অংশে গভীর ফাটল তৈরি হয়েছে, ছাদের প্লাস্টার প্রতিদিনই কোনো না কোনো জায়গায় খসে পড়ছে। হলের আবাসিক শিক্ষার্থী গোলাম মোহাম্মদ শাব্বির বলেন, ভবনের ভেতরে প্রবেশ করলেই স্যাঁতসেঁতে গন্ধ ও দেওয়ালের পচনধরা জায়গা চোখে পড়ে। এসব সমস্যা বহুদিন ধরে সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে জানানো হলেও মেরামতের কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ফলে প্রতিনিয়ত জীবনহানির আশঙ্কা নিয়ে আমাদের থাকতে হচ্ছে।
আরও পড়ুন:
‘আমরা থাকি মৃত্যুকূপে, কর্মচারীরা থাকেন আলিশানে’
ভূমিকম্পের পর আতঙ্কে ঢাবির মুহসীন হলের ছাদ থেকে লাফ, আহত ৬
ভূমিকম্পে শেকৃবির ৭ হলের ৩টিতে ফাটল
অন্যদিকে, ১৯৭২ সালে নির্মিত জহুরুল হক হল দীর্ঘদিনের অবহেলা ও অপর্যাপ্ত রক্ষণাবেক্ষণের কারণে এখন ক্রমশ নাজুক হয়ে উঠছে। হলের বিভিন্ন ব্লকে ছাদের বড় অংশ ফেটে গেছে, কোথাও কোথাও রড বের হয়ে আছে, যা সামান্য ঝাঁকুনিতেও আরও ভেঙে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন শিক্ষার্থীরা। এছাড়া বৈদ্যুতিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা দুর্বল হওয়ায় আগুন লাগার ঝুঁকিও রয়েছে বলে তারা অভিযোগ করেন।
শহীদুল্লাহ হলের ইব্রাহীম খলিল বলেন, কেউ আধঘুমে, কেউবা সবে ঘুম থেকে উঠেছে, কেউ নিত্য কাজকর্মে ব্যস্ত। হঠাৎ করেই ভূমিকম্প আঘাত হানে। সবার মাথায় একটাই আতঙ্ক, আমাদের এই ফিটনেসবিহীন ভবন সামান্য ঝাঁকুনিতেই ধসে পড়তে পারে। সাধারণ অবস্থাতেই কয়দিন পরপর ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ে। তাই প্রাণ বাঁচাতে যে যেভাবে পেরেছে, দৌড়ে বিল্ডিংয়ের নিচে নেমে আসার চেষ্টা করেছে সবাই।
তিনি বলেন, গত পরশু বুয়েটের এক ভাইয়ের পোস্টে দেখলাম, তাদের হলগুলোর ফিটনেসবিহীন ভবনের বেহাল অবস্থার কথা। ঢাকা মেডিকেলের ফজলে রাব্বী হলের অবস্থাও নাকি একই রকম ভাঙাচোরা। ঢাবি, বুয়েট, ঢাকা মেডিকেলের মতো দেশের শীর্ষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর অবস্থা যদি এমন হয়, তাহলে সার্বিক চিত্র বুঝতে আর বেশি কিছু বলার প্রয়োজন পড়ে না।
সালমান শাহেদ নামে অন্য এক শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের এই ক্যাম্পাসের পাশেই আজিমপুরে গড়ে উঠেছে সরকারি কর্মকর্তাদের বিশাল আবাসিক প্রকল্প। যদিও এসব প্রকল্প নিয়ে আমাদের বিশেষ আপত্তি নেই। শত শত প্রকল্প বাস্তবায়ন হোক-তাতে সমস্যা নেই। কিন্তু দেশের ভবিষ্যৎ চালকদের নিরাপত্তার বিষয়টিও নীতিনির্ধারকদের সমান গুরুত্ব দিয়ে ভাবা উচিত।
মুহসীন হলের জাহিদ হাসান হিমেল বলেন, নীতিনির্ধারকদের কবে ঘুম ভাঙবে? আরেকটা অক্টোবর ট্র্যাজেডি (ঢাবির জগন্নাথ হলে ভবন ধসে ৪০ জন নিহত হওয়ার ঘটনা) ঘটলে? ভূমিকম্পে ভবন ধসে পড়লে তখন আর ৩০-৪০ জন নয়, একসঙ্গে শত সহস্র প্রাণ ঝরে পড়বে!
এফএআর/এসএনআর/এএসএম
What's Your Reaction?