ঢালচরের ভূমিহীনদের মানবেতর জীবনযাপন

‘স্যার আগে আমার সুন্দর বসতঘর আছিলো। ফসলি জমি আছিলো। সংসারের কোনো অভাব আছিলো না। কোনো সময় ভাবি নাই এমন কইরা স্ত্রী, সন্তান ও ছেলে বউ নাতি লইয়া নদীর পারে তেলপালের ঘরে মাটিতে ঘুমাইতে হইবো।’ এসব বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন কাঞ্চন মুন্সি। কাঞ্চন মুন্সি ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার বিচ্ছিন্ন সাগর মোহনার ঢালচর ইউনিয়নের ভদ্রপাড়া এলাকার মেঘনা নদীর তীরে বসবাস করেন। বাঁশের কঞ্চি ও তেরপাল দিয়ে ঝুপড়ি নির্মাণ করে স্ত্রী, তিন সন্তান ও এক ছেলে বউ ও নাতি নিয়ে বসবাস করছেন। কাঞ্চন মুন্সি জানান, তিনি চার সন্তানের জনক। এক মেয়ে ও তিন ছেলে তার। আগে তার ভালো বসতঘর, ফসলি জমি ছিল। কিন্তু মেঘনা নদী তার বসতভিটা, ফসলি জমি নিয়ে গেছে। এ পর্যন্ত ৪ বার ভাঙনের শিকার হয়ে নিঃস্ব হয়েছেন তিনি। গত ১০ দিন আগে তিনি মেঘনা নদীর পাশে সন্তানদের নিয়ে ওই আশ্রয়টি নির্মাণ করেন বসবাস করছেন। নদী ভাঙনের কারণে দেনায় জর্জরিত তিনি। বর্তমানের দুই সন্তান নিয়ে সাগর মোহনার মেঘনা নদীতে মাছ শিকার করেন কোনো রকম খেয়ে বেঁচে আছেন। তিনি আরও জানান, কোনো জমি-জমা নাই। টাকাও নাই। তাই বাধ্য হয়ে বাঁশ কাইটা কঞ্চি দিয়া ও তেরপাল দিয়া কোনো রকম তাবুর মত ঘর নির্মাণ করে থাকছ

ঢালচরের ভূমিহীনদের মানবেতর জীবনযাপন

‘স্যার আগে আমার সুন্দর বসতঘর আছিলো। ফসলি জমি আছিলো। সংসারের কোনো অভাব আছিলো না। কোনো সময় ভাবি নাই এমন কইরা স্ত্রী, সন্তান ও ছেলে বউ নাতি লইয়া নদীর পারে তেলপালের ঘরে মাটিতে ঘুমাইতে হইবো।’ এসব বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন কাঞ্চন মুন্সি।

কাঞ্চন মুন্সি ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার বিচ্ছিন্ন সাগর মোহনার ঢালচর ইউনিয়নের ভদ্রপাড়া এলাকার মেঘনা নদীর তীরে বসবাস করেন। বাঁশের কঞ্চি ও তেরপাল দিয়ে ঝুপড়ি নির্মাণ করে স্ত্রী, তিন সন্তান ও এক ছেলে বউ ও নাতি নিয়ে বসবাস করছেন।

কাঞ্চন মুন্সি জানান, তিনি চার সন্তানের জনক। এক মেয়ে ও তিন ছেলে তার। আগে তার ভালো বসতঘর, ফসলি জমি ছিল। কিন্তু মেঘনা নদী তার বসতভিটা, ফসলি জমি নিয়ে গেছে। এ পর্যন্ত ৪ বার ভাঙনের শিকার হয়ে নিঃস্ব হয়েছেন তিনি। গত ১০ দিন আগে তিনি মেঘনা নদীর পাশে সন্তানদের নিয়ে ওই আশ্রয়টি নির্মাণ করেন বসবাস করছেন। নদী ভাঙনের কারণে দেনায় জর্জরিত তিনি। বর্তমানের দুই সন্তান নিয়ে সাগর মোহনার মেঘনা নদীতে মাছ শিকার করেন কোনো রকম খেয়ে বেঁচে আছেন।

তিনি আরও জানান, কোনো জমি-জমা নাই। টাকাও নাই। তাই বাধ্য হয়ে বাঁশ কাইটা কঞ্চি দিয়া ও তেরপাল দিয়া কোনো রকম তাবুর মত ঘর নির্মাণ করে থাকছি। প্রচন্ড শীতে মাটিতে ঘুমাতে হয় আমাগোরে। কি করমু আমাগো গরীবের তো আর কোনো যায়গা নাই। এহন যেখানে থাকতেছি এইডা আবার পরের জমি। উডাই দিলে কই যামু জানি না। সরকার যদি আমারে একটু জমি দিতো তাহলে ধার-দেনা ও ঋণ নিয়া ঘর উঠাইয়া থাকতে পারতাম।

ঢালচরের ভূমিহীনদের মানবেতর জীবনযাপন

তার স্ত্রী আয়েশা বেগম জানান, নদীতে আমাগো জমি, ঘর সব নেওয়ার পর থেকে কয়েকবার ঋণ কইয়া আমার স্বামী অন্য জমিতে ঘর তুলছিল। তাও আবার নদী ভাঙনের নদীতে নিয়ে গেছে। এখন তো আমরা নিঃস্ব। কি আর করমু। এহন শীতের মধ্যে মাটিতে ঘুমাতে হয়। সরকার তো আমাগো দিকে চায় না।

কাঞ্চন মুন্সির ছেলে বউ শিরিনা বেগম বলেন, বাবা-মা শ্বশুরের জমি-জমা ও সুন্দর ঘর দেইখা বিয়ে দিছে। এখন তো সব নদীতে লইয়া গেছে। আমরা এহন নদীর পারে তেরপালের তাঁবুর মত ঘরে থাকি। শীতের মধ্যে মাটিতে ঘুমাই। ছোট একটা অবুঝ শিশু নিয়ে ঘুমাইতে হয়। সবাই একসঙ্গে থাকি।

অন্যদিকে সব হারিয়ে ঢালচর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের শান্তি নগর এলাকার বন বিভাগের বাগানে ঝুঁকি নিয়ে স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে বসবাস করছেন জেলে মো. হুমায়ুন কবীর।

তিনি জানান, এখন পর্যন্ত মেঘনা নদীর ৮/১০ বার ভাঙনের কবলে পড়তে হয়েছে। বাবা-দাদার জমি, বসতঘর ও নিজের জমানো টাকা সবই হারিয়েছেন মেঘনা নদীর ভাঙনের কারণে। তাই জমি কেনার টাকা না থাকায় বন বিভাগের বাগানের এক ফাঁকে টিন, বাঁশ ও তেরপালের বেড়া দিয়ে ঝুপড়ি ঘর নির্মাণ করে বসবাস করছেন। শীতে কষ্ট পাচ্ছেন। বৃষ্টি ও ঝড়ের সময় ঘরে পানি ঢোকে সব ভিড়ে যায়।

তিনি জানান, বন বিভাগের বাগানে বসবাস করায় রাতের বেলায় সাপ, বন্য প্রাণীর আতঙ্কে থাকতে হয়। এছাড়াও বন বিভাগ প্রতিদিন তাদের এখান থেকে উঠে যেতে বলে। সরকারি যদি পেলেতো আমাগো এমন কষ্টে থাকতে হতো না। ঢালচর ইউনিয়নের সরকারি খাস জমি আছে কিন্তু আজ পর্যন্ত কাউকে বন্দোবস্ত দেয়নি। যার কারণে জমিগুলো পরিত্যক্ত অবস্থা আছেন। অথচ আমরা গরীবরা জমির অভাবে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছি। তাই সরকারের কাছে আমাদের আকুল আবেদন সরকারি জমি আমাদের বন্দোবস্ত দেওয়ার জন্য।

ঢালচরের ভূমিহীনদের মানবেতর জীবনযাপন

স্থানীয় মো. শাহে আলম ফরাজী ও ইউসুফ শিকার জানান, ঢালচর ইউনিয়নের হাজার হাজার সরকারি খাস জমি পরিত্যক্ত পরে থাকলেও ভূমিহীনদের মাঝে দেওয়া হচ্ছে না। আর জমির অভাবে ভূমিহীনরা সব হারিয়ে কারো আশ্রয় হয়েছে রাস্তার পাশে, কারো নদীর র্তীরে আবার কারো আশ্রয় হয়েছে বন বিভাগের বাগানে। বাঁশ দিয়ে কেউ মাথার গুঁজার আশ্রয় করেছেন কেউ বা বাঁশ ও টিন দিয়ে কোনো রকম ঘর তুলে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। তাও প্রতিদিন তাদের সরে যেতে বলা হচ্ছে। চরম জীবন ঝুঁকি নিয়ে মানুষ বছরের পর বছর বসবাস করছেন। কিন্তু কারও কোনো মাথাব্যথা নেই।

তারা জানান, ঢালচর ইউনিয়নের বর্তমানে প্রায় ১২ হাজার মানুষের বসবাস। এরমধ্যে বেশি মানুষ ভূমিহীন। আমরা বর্তমান সরকারের কাছে অনুরোধ করছি ঢালচরের ভূমিহীন মানুষের মানবেতর কষ্টের জীবন থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য সরকারি খাস জমি বন্দোবস্ত দেওয়ার জন্য।

ভোলা জেলা প্রশাসক ডা. শামীম রহমান জানান, ঢালচরের ভূমিহীন মানুষ সরকারি নিয়ম অনুযায়ী খাস যদি বন্দোবস্ত পাওয়ার জন্য আবেদন করলে তা যাচাই-বাঁচাই করা হবে। যাচাই-বাঁচাইতে যদি খাস জমি পাওয়ার যোগ্য যারা হবে আমরা তাদের মাঝে খাস জমি বন্দোবস্ত দিবো।

জুয়েল সাহা বিকাশ/আরএইচ/এএসএম

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow