তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা নিয়ে রিভিউ আবেদন শুনানি ৯ ফেব্রুয়ারি

2 hours ago 3

সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী নিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সংক্রান্ত বিষয় বাতিলের রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, পাঁচ বিশিষ্ট নাগরিক ও এক ব্যক্তির করা চারটি আবেদনের শুনানির জন্য আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি দিন ঠিক করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।

আবেদনকারীর পক্ষে সময়ের আরজির পরিপ্রেক্ষিতে রোববার (১৯ জানুয়ারি) আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বিভাগের বেঞ্চ এই দিন ঠিক করেন। আদালতে বিএনপির পক্ষে সময় আবেদন করেন সিনিয়র অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন ও ব্যারিস্টার মো. রুহুল কুদ্দুস কাজল।

এর আগে গত বছরের ১ ডিসেম্বর আপিল বিভাগ রিভিউ আবেদনগুলো শুনানির জন্য ১৯ জানুয়ারি দিন ঠিক করেন। এর ধারাবাহিকতায় আজ আবেদনগুলো কার্যতালিকার ছিল। কিন্তু সকাল সাড়ে নয়টার দিকে বিএনপির পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘আবেদনটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা নিয়ে। তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিল করে আনা পঞ্চদশ সংশোধনী নিয়ে হাইকোর্ট রায় দিয়েছেন। পূর্ণাঙ্গ রায় এখনো পাইনি।’

আদালত বলেন, ‘ক্রম অনুসারে বিষয়টি এলে বলতে পারেন, প্রার্থনা কী?’ এ সময় বিএনপির পক্ষে অপর জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. রুহুল কুদ্দুস বলেন, ‘রিভিউ শুনানিতে পঞ্চদশ সংশোধনী নিয়ে হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় দরকার। তাই দুই সপ্তাহ সময় চাওয়া হয়েছে। এরপর আদালত শুনানির জন্য ৯ ফেব্রুয়ারি দিন ঠিক করেন।

এর আগে আপিল বিভাগের সাত বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ ২০১১ সালের ১০ মে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী (তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা) বাতিল ঘোষণা করে রায় দেন। হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিল মঞ্জুর করে এই রায় দেওয়া হয়।

আপিল বিভাগের ওই রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে গত বছরের অক্টোবরে একটি আবেদন করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এর আগে রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে আবেদন করেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তি। অন্য চারজন হলেন, তোফায়েল আহমেদ, এম হাফিজউদ্দিন খান, জোবাইরুল হক ভূঁইয়া ও জাহরা রহমান। রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে গত বছরের ২৩ অক্টোবর আরেকটি আবেদন করেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার।

এ ছাড়া নওগাঁর রানীনগরের নারায়ণপাড়ার বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মোফাজ্জল হোসেন আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে গত বছর একটি আবেদন করেন। পঞ্চম সংশোধনী নিয়ে আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে আরেকটি আবেদন করেন তিনি।

১৯৯৬ সালে ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত হয়। এই সংশোধনীর বৈধতা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এম সলিমউল্লাহসহ অন্যরা ১৯৯৮ সালে হাইকোর্টে রিট করেন। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রুল দেন। হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চ চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০০৪ সালের ৪ আগস্ট রায় দেন। সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীকে বৈধ ঘোষণা করে দেওয়া রায়ে বলা হয়, ১৯৯৬ সালের ত্রয়োদশ সংশোধনী সংবিধানসম্মত। এই রায়ের বিরুদ্ধে সরাসরি আপিলের অনুমতি দেওয়া হয়।

এর ধারাবাহিকতায় ২০০৫ সালে আপিল করে রিট আবেদনকারী পক্ষ। এই আপিল মঞ্জুর করে ২০১১ সালের ১০ মে আপিল বিভাগ রায় ঘোষণা করেন। ঘোষিত রায়ের পর তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার বিলোপসহ বেশ কিছু বিষয়ে আনা পঞ্চদশ সংশোধনী আইন ২০১১ সালের ৩০ জুন জাতীয় সংসদে পাস হয়। ২০১১ সালের ৩ জুলাই এ-সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ করা হয়।

এদিকে পঞ্চদশ সংশোধনী আইন চ্যালেঞ্জ করে গত বছরের ১৮ আগস্ট সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তি রিট করেন। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রুল দেন। পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের ১৬টি ধারার বৈধতা নিয়ে নওগাঁর রানীনগরের নারায়ণপাড়ার বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মোফাজ্জল হোসেন গত বছরের অক্টোবরে একটি রিট করেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে রুল হয়।

রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর হাইকোর্ট রায় ঘোষণা করেন। রায়ে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলুপ্তি-সংক্রান্ত পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের ২০ ও ২১ ধারা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও বাতিল ঘোষণা করা হয়। একই সঙ্গে সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে গণভোটের বিধান পুনর্বহাল এবং পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের আরও চারটি ধারা বাতিল ঘোষণা করা হয়।

এফএইচ/এসআইটি/এমএস

Read Entire Article