ভারতের কাছে হেরে গেছে অস্ট্রেলিয়া। এতে সেমিফাইনালে খেলার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে আফগানিস্তানের, সঙ্গে বাংলাদেশের। আগামীকালের ম্যাচে যদি বাংলাদেশ ৬৩ রানে আফগানদের হারাতে পারে, তাহলে সেমিতে যেতে পারবে তারা। আর যদি আফগানরা জিতে যায়, তাহলে বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়া বাদ পড়বে। সেমিতে যাবে আফগানরা।
তবে বাংলাদেশ যদি কোনো রকমে ম্যাচটি জিতে তাহলে বাদ পড়বে অস্ট্রেলিয়া ও আফগানিস্তান। তবে আগামীকাল আফগানদের হারানোর প্রাণপণ চেষ্টা করবে বাংলাদেশ।
সমীকরণটি জটিল। আর বাংলাদেশ দল গ্রুপ পর্বে শ্রীলঙ্কা, নেদারল্যান্ডস আর নেপালকে হারিয়ে সুপার এইটে উঠে আসলেও এখনো অবিন্যস্ত, ছন্নছাড়া, আড়ষ্ট আর জবুথবু এক দল। বোলিংটাই একমাত্র সম্বল-শক্তি। ব্যাটিংয়ের অবস্থা খুব খারাপ। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ১৫৯ রান করা ছাড়া বাকি ম্যাচগুলোর একটিতেও বাংলাদেশের ব্যাটাররা দেড়শো রানও করতে পারেননি।
উদ্বোধনী জুটির অবস্থা চরম খারাপ। এক আসরে তিনবার উদ্বোধনী জুটিতে পরিবর্তন আনা হয়েছে। তারপরও কোনোই উন্নতি বা অগ্রগতি নেই। এখন পর্যন্ত কোনো ম্যাচেই বাংলাদেশের ওপেনাররা ১০ রানও তুলে দিতে পারেন নি। তানজিদ তামিম, লিটন দাস আর অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তর অবস্থা খুবই খারাপ।
অন্যদিকে এক নম্বর তারকা ও প্রধান চালিকাশক্তি সাকিব আল হাসানও নিজেকে খুঁজে পাচ্ছেন না। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ৬৪ রানের ইনিংসটি ছাড়া সাকিবের ব্যাট থেকে একটি ৩০ রানের ইনিংসও বেরিয়ে আসেনি। যে সাকিব টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে বাঘা বাঘা ব্যাটারদের নাকানি চুবানি খাইয়েছেন, তিনি এবার গণ্ডায় গণ্ডায় উইকেট পাননি। এবার তার নামের পাশে মাত্র ৩ উইকেট। ৩ ম্যাচে কোনো উইকেটই পাননি।
তবে ৪ বোলার- বিশেষ করে পেসার তানজিম সাকিব, মোস্তাফিজুর রহমান, তাসকিন আহমেদ এবং লেগস্পিনার রিশাদ হোসেন নাসাউ আর সেন্ট ভিনসেন্টের ‘ডাবল পেসড ও আনইভেন বাউন্সি’ পিচে বেশ ভালো বোলিং করেছেন। তাদের হাত ধরেই নেপাল, শ্রীলঙ্কা আর নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে জয় ধরা দিয়েছে। তারাই দক্ষিণ আফ্রিকাকে মাত্র ১১৩ রানে আটকে রেখে জয়ের প্রবল সম্ভাবনা তৈরি করেছিলেন। কিন্তু ব্যাটারদের ব্যর্থতায় জেতা সম্ভব হয়নি।
সুপার এইটে এসেও বাংলাদেশের ব্যাটারদের ছন্নছাড়া অবস্থা। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে আগে ব্যাট করে ১৪০ রান আর ভারতের বিপক্ষে ১৯৭ রানে বিশাল স্কোরের জবাবে ১৪৭ রানের বেশি করতে পারেনি শান্তর দল। সব মিলে আত্মবিশ্বাস তলানিতে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের।
অন্যদিকে গ্রুপ পর্বে অন্যতম ফেবারিট নিউজিল্যান্ডকে ৭৫ রানে অলআউট করার পর সেরা আটে এসে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে আফগানরা টগবগ করে ফুটছে। ইব্রাহিম জাদরান, রাহমানউল্লাহ গুরবাজ, রশিদ খান, মোহাম্মদ নবি ও গুলবদন নাইবদের মনোবল ও আস্থা আকাশছোঁয়া। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে যে ‘মোমেন্টাম’ ভালো খেলার প্রথম ও প্রধান রসদ, তা পুরোপুরি আছে আফগানদের। তাই ছন্দ আর পরিবেশ-পরিপ্রেক্ষিত বিবেচনায় আগামীকাল সোমবারের ম্যাচে ফেবারিট আফগানরা।
কিন্তু তারপরও আপনি বাংলাদেশের পক্ষে বাজি ধরতে পারেন। অতিবড় ও অন্ধ বাংলাদেশ সমর্থক ছাড়া স্বাভাবিক হিসাব-নিকাশ আর সমীকরণে ছন্দের চূড়ায় আর আকাশছোঁয়া আত্মবিশ্বাসে উড়তে থাকা আফগানদের বিপক্ষে আগামীকাল সোমবারের ম্যাচে বাংলাদেশের পক্ষে বাজি ধরার মতো মানুষ কম।
যারা বাংলাদেশের পক্ষে বাজি ধরতে চান, তাদের মনোবল বাড়ানোর উপলক্ষ্য অবশ্যই আছে।
ইতিহাস ও পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, এমনিতে যত প্রতিদ্বন্দ্বিতাই হোক না কেন, আইসিসির ইভেন্টে- বিশেষ করে ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে কখনই বাংলাদেশের বিপক্ষে জয় পায়নি আফগানরা।
২০১৫, ২০১৯ আর ২০২৩ সালে ৫০ ওভারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সাফল্য শতভাগ। তিনবারের সাক্ষাতে প্রতিবার হেরেছে আফগানরা। আর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও বাংলাদেশই জিতেছে। সেটা ২০১৪ সালে। সেই সময় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আসর বসেছিল বাংলাদেশে।
বাছাইয়ের আদলে প্রথম রাউন্ডে মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ আর আফগানিস্তান। তখনকার আনকোরা অনভিজ্ঞ ও আইসিসির সহযোগী সদস্য দেশ আফগানিস্তান দাঁড়াতেই পারেনি মাশরাফি বিন মর্তুজার বাংলাদেশের সামনে। ২০১৪ সালের ১৬ মার্চ হোম অব ক্রিকেট খ্যাত শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে আফগানদের মাত্র ৭২ রানে অলআউট করে ৯ উইকেটে জিতেছিল বাংলাদেশ।
দুর্দান্ত অলরাউন্ডিং পারফরম্যান্সে (১১ বলে ১৮ নটআউট ও বল হাতে ২/১৫) সাকিব হয়েছিলেন ম্যাচসেরা। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও দারুণ বোলিং (৪ ওভারে ১/৮) করেছিলেন।
এবার কি হবে, তা সময়ই বলে দেবে। তবে আফগানরা যেমন রশিদ খানের হাত ধরে বাংলাদেশের বিপক্ষে বেশির ভাগ ম্যাচ জিতেছে, একইভাবে সব ফরম্যাটে আফগানদের বিপক্ষে সাকিবও বাংলাদেশের সাফল্যের স্থপতি ও রূপকার।
আফগানদের বিপক্ষে ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে সাকিব একাই বহুবার পার্থক্য গড়ে দিয়েছেন। এবার নিজেকে হারিয়ে খুঁজতে থাকা সাকিব আগামীকাল ২৫ জুনকে নিজের দিন করে ফেলতে পারবেন? সাকিব ব্যাট ও বল হাতে জ্বলে উঠলে আর বাংলাদেশকে ঠেকায় কে?
কাজেই ইতিহাস ও পরিসংখ্যানকে মানদণ্ড ধরলে বাংলাদেশের পক্ষে বাজি ধরাই যায়, কী বলেন?
এআরবি/এমএইচ/