তবে কি ট্রাম্পের চেয়ে বাইডেন ভালো ছিলেন?

15 hours ago 13
গাজায় ইসরায়েলের হামলা ও যুদ্ধবিরতি ভেঙে পড়ার পর মার্কিন প্রশাসনের ভূমিকা নতুন করে আলোচনায় এসেছে। বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন—দুজনই ইসরায়েলের প্রতি দৃঢ় সমর্থন জানিয়েছেন। তবে ট্রাম্প প্রশাসন গাজা ইস্যুতে অনেক বেশি নমনীয় ও ইসরায়েলপন্থী বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।  কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল জাজিরার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বাইডেন প্রশাসনের তুলনায় ট্রাম্প প্রশাসন ইসরায়েলের প্রতি ‘অন্ধ সমর্থন’ দিয়েছে এবং গাজার ওপর কঠোর অবস্থান নিয়েছে। ট্রাম্প খোলাখুলিভাবে বলেছেন, গাজাকে মানুষের বসবাসের অনুপযোগী করে ফিলিস্তিনিদের অন্য কোথাও সরাতে হবে।  এ ছাড়া ট্রাম্প গাজাকে ‘মধ্যপ্রাচ্যের রিভিয়েরা’ বানানোর পরিকল্পনা করেছেন, যেখানে বিলাসবহুল আবাসন প্রকল্প গড়ে তোলা হবে। অর্থাৎ, গাজাকে ফিলিস্তিনিদের জন্য নয়, বরং পর্যটন কেন্দ্র বানানোর পরিকল্পনা তার রয়েছে। এই দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্ট করে যে, ট্রাম্প প্রশাসনের নীতিতে মানবিক বিবেচনার চেয়ে ভৌগোলিক ও রাজনৈতিক হিসাব বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। বাইডেনের অবস্থান ও তার কৌশল বাইডেন প্রশাসনও ইসরায়েলের প্রতি ‘ইস্পাত কঠিন সমর্থন’ জুগিয়েছিল। তবে কিছু ক্ষেত্রে তারা মানবিক দিক বিবেচনা করে ইসরায়েলকে সংযত হতে বলেছে। আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাইডেন বারবার ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে কৌশলী হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন এবং জনসম্মুখে ও গোপনে বেসামরিক মানুষের মৃত্যু কমানোর জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। এ ছাড়া বাইডেন প্রশাসনের সময় ইসরায়েল গাজায় হামলার আগে সাধারণ জনগণকে সতর্ক করতে লিফলেট বিতরণ, আরবি ভাষায় মাইকিং ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সতর্কবার্তা প্রচারের ব্যবস্থা করেছিল। তবে সাম্প্রতিক হামলার ক্ষেত্রে ইসরায়েল এই উদ্যোগ নেয়নি, যা ট্রাম্প প্রশাসনের প্রভাব বলে মনে করা হচ্ছে। যুদ্ধবিরতির ব্যর্থতা ও দুই প্রশাসনের ভূমিকা গাজায় নতুন করে শুরু হওয়া ইসরায়েলি হামলায় নিহতের সংখ্যা ৩৪২ ছাড়িয়ে গেছে। যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপ শেষ হওয়ার পর ইসরায়েল দ্বিতীয় ধাপ বাস্তবায়ন না করে হামাসকে মেয়াদ বাড়ানোর আহ্বান জানায়, যা হামাস প্রত্যাখ্যান করে। এই প্রতিক্রিয়ায় ১৬ দিন ধরে গাজায় সব ধরনের পণ্য প্রবেশ বন্ধ রাখে নেতানিয়াহু সরকার এবং পরে নির্বিচারে হামলা শুরু করে। বাইডেন প্রশাসন এই ধরনের প্রতিক্রিয়ায় কিছুটা সংযত ছিল, যদিও তারা প্রকাশ্যে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কঠোর নিন্দা জানায়নি। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসন ইসরায়েলকে কোনো শর্ত ছাড়াই পূর্ণ সমর্থন দিয়েছে, যা যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনাকে আরও ক্ষীণ করেছে। ট্রাম্পের চেয়ে বাইডেন নমনীয় ছিলেন? গাজা ইস্যুতে বাইডেন ও ট্রাম্প প্রশাসন দুজনই ইসরায়েলকে সমর্থন দিয়েছে, তবে বাইডেন কিছুটা কৌশলী ছিলেন। মানবিক দিক থেকে বিবেচনা করলে, বাইডেন অন্তত ইসরায়েলকে কিছু নিয়ম মেনে চলতে বাধ্য করেছেন। অন্যদিকে, ট্রাম্পের নীতিতে ইসরায়েলের প্রতি শক্তিশালী সমর্থন দেখা গেছে, যা গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তির ব্যর্থতায় ভূমিকা রেখেছে। তবে দুজনের কেউই গাজা সংকট সমাধানে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেননি। বাইডেন যেখানে কিছুটা সংযত অবস্থান নিয়েছিলেন, সেখানে ট্রাম্প পুরোপুরি ইসরায়েলের সামরিক শক্তিকে উস্কে দিয়েছেন।  হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) ইসরায়েল ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ব্যাপক বিমান হামলা শুরুর আগে ট্রাম্পের পরামর্শ নিয়েছিল। ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনা করেই যুদ্ধবিরতির পর গাজায় বড় আকারে বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল।  বিশ্লেষকরা বলছেন, গাজা ইস্যুতে ট্রাম্পের চেয়ে বাইডেন নমনীয় ছিলেন। কারণ মানবিক বিবেচনায় বাইডেন তুলনামূলকভাবে সংযত নীতি অনুসরণ করেছেন, যা কিছু ক্ষেত্রে সংঘাত কমাতে ভূমিকা রেখেছে।
Read Entire Article