বন্যার পানিতে ভেসে যায় তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা ইকবাল হোসেনের স্বপ্ন। গ্রীষ্মকালীন তরমুজ আবাদ করেছিলেন। ফলনও খুব ভালো হয়েছে। কয়েকবার ফলন বাজারে বিক্রি করার পর স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় পুরো জমির তরমুজ পানিতে ডুবে নষ্ট হয়ে যায়। চোখের সামনে পানিতে ভেসে যায় তার পরিশ্রম ও পুঁজি। লাভ তো দূরের কথা, লোকসান গুনতে হয়েছে প্রায় ২ লাখ টাকা। কিন্তু তাতেও তিনি দমে যাননি। বন্যার ক্ষত শেষ হওয়ার পর গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষ শুরু করেছেন। কিছুদিন পর জমি থেকে তরমুজ তুলে বাজারে বিক্রি শুরু করবেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে প্রায় ৪ লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি হবে বলে আশাবাদী এ কৃষি উদ্যোক্তা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মিরসরাই উপজেলার খৈয়াছড়া ইউনিয়নের মসজিদিয়া গ্রামের বাসিন্দা ইকবাল হোসেন। তার দেখাদেখি অনেকে গ্রীষ্মকালীন তরমুজসহ নানা ধরনের ফসল চাষে আগ্রহী হয়েছেন। চলতি মৌসুমে ৫০ শতক জমিতে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা ব্যয়ে মালচিং ও অর্গানিক পদ্ধতিতে চাষ করেছিলেন গ্রীষ্মকালীন তরমুজ। তরমুজের সাথী ফসল হিসেবে একই জমিতে চাষ করেছিলেন গ্রীষ্মকালীন কাঁচামরিচ, টমেটো। ফলন পেতে শুরু করে আশায় বুক বেঁধেছিলেন এই স্বপ্নবাজ কৃষক।
তবে আগস্টের মাঝামাঝি ফেনী ও মিরসরাই উপজেলায় অতিবৃষ্টি ও উজান নেমে আসা পানি ও পাহাড়ি ঢলে টানা ৭ দিনের বন্যায় তলিয়ে যায় কৃষক ইকবালের স্বপ্নের তরমুজ ক্ষেত। ২ লাখ টাকা লোকসানে পড়েও দমে যাননি ইকবাল। স্থানীয় এনজিও ও আত্মীয়-স্বজনদের থেকে ধার-দেনা করে বন্যার পানি কমে যাওয়ার সাথে সাথে জৈব সার ও কোকফিড মিশ্রণে সিডলিং ট্রেতে চারা প্রস্তুত করে বেডগুলোতে তরমুজ, রকমেলন ও শসা আবাদ করে পুনরায় আশায় বুক বেঁধেছেন ইকবাল।
ইকবাল হোসেনের তরমুজ ক্ষেতে গিয়ে দেখা যায়, মালচিং পদ্ধতিতে চাষ করা বিভিন্ন রঙের তরমুজ গাছে ঝুলছে। কয়েকজন কাজের লোকসহ তিনি ক্ষেতের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। জমিতে আবাদ করা হয়েছে সূর্যডিম, ব্ল্যাক বেবি, ব্ল্যাক সাইন, বিগ বাইট, ইস্ট জাতের উচ্চ ফলনশীল গ্রীষ্মকালীন তরমুজ। সাথী ফসল হিসেবে লং জাপান তামিম প্লাস ইউনাইটেড সিড জাতের শসা ও বাবলি ও বাহুবলি জাতের টমেটো চাষ করেছেন। পাশাপাশি তার ক্ষেতে শোভা পেয়েছে উন্নত জাতের পেঁয়ারা ও বিদেশি নানা ধরনের ফল। তরমুজ ও শসা গাছে ফলন আসতে শুরু করেছে। এরই মধ্যে শসা বাজারজাত শুরু করেছে। চলতি মাসের শেষদিকে তরমুজ বাজারজাত করতে পারবেন বলে আশাবাদি।
কৃষক ইকবাল হোসেন বলেন, ‘গত আগস্ট মাসে যখন বন্যা শুরু হয়েছে; তখন আমার চাষ করা ৫০ শতক জমির তরমুজ বিক্রি শুরু করেছি মাত্র। দু’এক বাজার বিক্রির পর বন্যার পানিতে ডুবে সব পচে গেছে। টমেটো ও কাঁচামরিচ ক্ষেতও ডুবে নষ্ট হয়ে যায়। এ ক্ষেত করতে ২ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। তখন সব মিলিয়ে ৫ লাখ টাকার বিক্রির আশা করছিলাম। কিন্তু পুঁজিও হারাতে হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘বন্যার ধকল কাটিয়ে ধার-দেনা করে আবারও ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য কৃষি অফিসের সহযোগিতায় নতুন করে তরমুজ আবাদ করেছি। সবকিছু ঠিক থাকলে লাভের ব্যাপারে আশাবাদি। কিছুদিন আগে উপজেলা কৃষি অফিসার ও আমার ক্ষেত দেখতে আসেন তার সাথে একজন কৃষি সচিব ছিলেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘ঋণগ্রস্ত হওয়ায় কিছুটা হতাশায় ভুগছি। সরকারিভাবে ঋণের ব্যবস্থা করে দিলে ঘুরে দাঁড়াতে সুবিধা হতো। কৃষকের মাঝে যদি সরকারিভাবে পলি শেড ব্যবস্থা করে দেওয়া যেত; বৈরী আবহাওয়ায় কৃষকেরা চাষাবাদ করতে পারতেন। এতে কৃষি ক্ষেত্র অনেক প্রসারিত হতো। বেকার যুবকরা কৃষিকাজে উদ্বুদ্ধ হতেন।’
মিরসরাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ চন্দ্র রায় বলেন, ‘বন্যায় খুব ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তরমুজ চাষি ইকবাল। ক্ষতি কাটিয়ে নতুন করে আবার তরমুজ আবাদ করেন। ভালো ফলনও হয়েছে। এরই মধ্যে কয়েকবার ক্ষেত পরিদর্শন করেছি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবার ভালো বিক্রি হতে পারে। ইকবাল খুবই পরিশ্রমী একজন কৃষক। তার দেখাদেখি অনেকে গ্রীষ্মকালীন তরমুজসহ বিভিন্ন ফসল চাষ করছেন।’
এসইউ/এএসএম