ফরিদপুর-৪ আসনের ভাঙ্গা উপজেলার দুটি ইউনিয়ন পুনর্বিন্যাসের প্রতিবাদে মহাসড়ক অবরোধ ও আন্দোলনের অংশ হিসেবে সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে থানা, হাইওয়ে থানা ও উপজেলা পরিষদে অগ্নিসংযোগ, হামলা ও ভাঙচুর চালিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা।
তবে এ ঘটনার পর পুরো ভাঙ্গা এখন শান্ত থাকলেও ঢাকা-বরিশাল ও ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে অবরোধ চলছে। এতে সব যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, আন্দোলনকারীরা প্রথমে উপজেলা পরিষদের হলরুমে ঢুকে শতাধিক চেয়ার, ১০টি ফ্যান ও ৩৫টির বেশি বাতি ভাঙচুর করেন। এরপর তিন তলাবিশিষ্ট উপজেলা পরিষদ ভবনের প্রতিটি তলায় সাতটি করে মোট ২১টি কক্ষে ভাঙচুর চালানো হয়। এসময় সিসিটিভি ক্যামেরা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ের বিভিন্ন কক্ষের কাচ ও আসবাবপত্র ভাঙচুর করেন আন্দোলনকারীরা। উপজেলা পরিষদ চত্বর ও অফিসার্স ক্লাবের গ্যারেজে থাকা সাতটি মোটরসাইকেল আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। উপজেলা অফিসার্স ক্লাবও ভাঙচুর করা হয়।
ভাঙ্গা থানায় হামলা চালিয়ে পুলিশের তিনটি গাড়ি ও একটি বড় রিজার্ভ ভ্যান ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। থানা চত্বরে থাকা অন্তত চারটি মোটরসাইকেলে আগুন দেওয়া হয়। ভাঙচুর করা হয় থানার ব্যানার ও ভবনের কাচসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র।
এদিকে, ভাঙ্গা হাইওয়ে থানায় ব্যাপক হামলা ও অগ্নিসংযোগ করেছেন আন্দোলনকারীরা। তারা চারটি পিকআপ, একটি রেকার, একটি জলকামান গাড়ি, আটটি মোটরসাইকেল, একটি অ্যাম্বুলেন্স ও দুটি আলামতের গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।
ভাঙ্গা বাজারের ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম জানান, থানা, হাইওয়ে ও উপজেলায় ভাঙচুরের সময় লোকজন হঠাৎ করে রামদা-লাঠিসোঁটা ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে প্রবেশ করেন। ওইসব অস্ত্র দিয়ে তারা তাণ্ডব চালান। পেট্রোল দিয়ে মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেন। আর এসব করতে আধাঘণ্টার মতো সময় লাগে। হামলার সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী হামলাকারীদের বাধা দেয়নি বলে অভিযোগ করেন।
ভাঙ্গা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রোকিবুজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, ‘হামলা-ভাঙচুরের সময় কয়েকজন কনস্টেবলকে কৌশলে থানা থেকে বের করে দেওয়া হয়। আর আমরা কয়েকজন থানার রান্নাঘরের পাশে একটি বাথরুমে আশ্রয় নিই। হামলাকারীরা গাড়ি, মোটরসাইকেলসহ অফিসের ল্যাপটপ, টিভি থেকে শুরু করে এমন কোথাও নেই যে ভাঙচুর করতে বাকি রেখেছে। তারপরও বিস্তারিত দেখে পরবর্তীতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণের তথ্য জানানো যাবে।’
এ বিষয়ে ভাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিজানুর রহমান কথা বলতে রাজি হননি।
ফরিদপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আব্দুল জলিলেরও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
ফরিদপুর-৪ আসনের ভাঙ্গা উপজেলা থেকে আলগী ও হামিরদী নামে দুটি ইউনিয়ন কেটে নিয়ে ফরিদপুর-২ আসনের নগরকান্দায় সংযুক্ত করার প্রতিবাদে দুই সপ্তাহ ধরে আন্দোলন করে আসছেন স্থানীয় জনতা। তারা আসনগুলোর আগের অবস্থায় বহাল চান।
আন্দোলনের অংশ হিসেবে রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) থেকে টানা তিনদিন বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়ক ও রেলপথ অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। সোমবার দ্বিতীয় দিনের কর্মসূচি চলছে। বেলা ১১টা থেকে ঢাকা-বরিশাল ও ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করেন বিক্ষোভকারীরা। এরপর ভাঙ্গা উপজেলা সদরে এসে হামলা-ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটানো হয়।
এন কে বি নয়ন/এসআর/এএসএম