তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনী দ্রুত পাসের দাবি জানিয়েছে পেশাজীবী বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা।
সোমবার (১৮ আগস্ট) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন আয়োজিত, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এফসিটিসি’র বাস্তবায়ন ও তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালীকরণে করণীয় বিষয়ক মতবিনিময় সভায় এমন দাবি জানায় তারা।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধে উপস্থাপন করেন ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের তামাক নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের সমন্বয়কারী শরিফুল ইসলাম। তিনি জানান, বাংলাদেশে প্রায় ৩ কোটি ৭৮ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তামাক ব্যবহার করেন। তামাক ব্যবহারজনিত রোগে প্রতি বছর দেশে ১ লাখ ৬১ হাজারের বেশি মানুষ অকালে মৃত্যুবরণ করেন। এমন অবস্থায়, তামাক কোম্পানিগুলো মিথ্যা প্রচার করছে। তারা বলছে প্রস্তাবিত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনী পাস হলে সরকার বিপুল পরিমাণে রাজস্ব হারাবে। তবে বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। ২০০৫ সালে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন প্রণয়ন ও ২০১৩ সালে সংশোধনের পর গত ১৮ বছরে সরকারের রাজস্ব আয় বেড়েছে সাড়ে ১২ গুণ। একই সঙ্গে ২০০৯ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে তামাক ব্যবহার ১৮ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। তিনি জানান, বর্তমানে ৯ জন উপদেষ্টা ও ৩ জন সচিব দ্বারা গঠিত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি গঠিত হয়েছে যারা আইনের খসড়াটিকে পুনরায় রিভিউ করছেন। এমতাবস্থায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনী চূড়ান্তকরণের পূর্বে বিভিন্ন অ্যাসোসিয়েশন ও পেশাজীবী সংগঠনের ভূমিকা তুলে ধরেন এবং ভবিষ্যৎ করণীয় সম্পর্কে ধারণা প্রদান করেন।
অনুষ্ঠানে সংগঠনগুলোর নেতারা জানান, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের অধিকতর শক্তিশালীকরণে জন্য বাংলাদেশ সরকারের পদক্ষেপ নিঃসন্দেহে যেমন সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য তেমনি সর্বশেষ উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে তামাক কোম্পানির মতামত গ্রহণের সিদ্ধান্ত অত্যন্ত হতাশাব্যঞ্জক। তবে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা কমিটির সভায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনে তামাক কোম্পানির মতামত গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা আন্তর্জাতিক চুক্তি বিশ্ব সংস্থার এফসিটিসি আর্টিকেল ৫.৩ এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
বক্তারা জানান, এফসিটিসি আর্টিকেল ৫.৩ তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন তথা জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার এই রক্ষাকবজ। তামাক কোম্পানি প্রভাবমুক্ত নীতিনির্ধারণ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে এবং যারা আমাদের সন্তানদের মৃত্যুর জন্য দায়ী সেই তামাক কোম্পানির সাথে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না।
বক্তারা আরও জানান, বাংলাদেশে তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপ একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তারা মিথ্যা প্রচার, লবিং ও প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে আইন দুর্বল করার চেষ্টা চালায়। অথচ এফসিটিসির আর্টিকেল ৫.৩ তামাক কোম্পানির সঙ্গে সরকার ও নীতিনির্ধারকদের সম্পর্ক সীমিত রাখতে নির্দেশনা দেয়।
ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের সভাপতি ড. গোলাম রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব সাইদুর রহমান, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব শেখ মোমেনা মনি, জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের মহাপরিচালক মো. আখতার-উজ-জামান। অনুষ্ঠানে গেস্ট অব অনার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট চিকিৎসক ও হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. শহিদুল আলম।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের স্বাস্থ্য ও ওয়াশ সেক্টরের পরিচালক ইকবাল মাসুদ। আহ্ছানিয়া মিশন ইয়ুথ ফোরামের কো-অর্ডিনেটর মারজানা মুনতাহাসহ ফোরামের অন্য সদস্যরা। এ সময় বাংলাদেশ দোকান ব্যবসায়ী মালিক সমিতি, বাংলাদেশ সুপারমার্কেট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল (যাপ) সংস্থা, বাংলাদেশ গ্রোসারী বিজনেস অ্যাসোসিয়েশন(বিজিবিএ), বাংলাদেশ সংযুক্ত শ্রমিক ফেডারেশন, ঢাকা মহানগর দোকান ব্যবসায়ী মালিক সমিতি, জাতীয় দোকান কর্মচারী ফেডারেশনের নেতা প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।