তামাকজনিত রোগে দেশে বছরে ১ লাখ ৬১ হাজার মানুষের মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল ও রিসার্চ ইনস্টিটিউটের রোগতত্ত্ব ও গবেষণা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী।
বুধবার (১৩ আগস্ট) রাজধানীতে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের সহযোগিতায় আয়োজিত ‘জনস্বার্থ বনাম তামাক কোম্পানির প্রভাব: তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন ত্বরান্বিতকরণে সাংবাদিকদের ভূমিকা’ শীর্ষক কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনের সময় তিনি এ কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি রাশেদ রাব্বি।
এ সময় বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরাম জানিয়েছে, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনে তামাক কোম্পানির মতামত নেওয়া সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য।
সংগঠনটির দাবি, এ ধরনের পদক্ষেপ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোলের আর্টিকেল ৫.৩-এর সরাসরি লঙ্ঘন এবং দেশের জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি।
তামাকজনিত মৃত্যু ও স্বাস্থ্যঝুঁকি
ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী জানান, তামাক হৃদরোগ, ক্যানসার ও শ্বাসতন্ত্রের নানা রোগের অন্যতম প্রধান কারণ। প্রতি বছর বাংলাদেশে ১ লাখ ৬১ হাজারের বেশি মানুষ তামাকজনিত রোগে মারা যায় এবং ৪ লাখ মানুষ পঙ্গুত্ব বরণ করে। প্রতিদিন প্রায় ৩ কোটি ৮৪ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হচ্ছেন।
সরকারের সিদ্ধান্তের সমালোচনা
বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি রাশেদ রাব্বি বলেন, প্রতিদিন গড়ে ৪৪২ জন মানুষ তামাকজনিত কারণে অকালে মারা যাচ্ছেন। এটি প্রতিরোধে বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন দ্রুত সংশোধন করা জরুরি হলেও সরকার নানা অজুহাতে গড়িমসি করছে, বরং স্টেকহোল্ডার মিটিংয়ের নামে তামাক কোম্পানির মতামত গ্রহণের যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তা ডব্লিউএইচও ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল-এফসিটিসি’র সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
সাংবাদিকদের অবস্থান
কর্মশালায় অংশ নেওয়া সাংবাদিকরা বলেন, ডব্লিউএইচও ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল-এফসিটিসি’র আর্টিকেল ৫.৩ অনুযায়ী তামাক কোম্পানিকে নীতি প্রণয়ন বা সংশোধন প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত করা যাবে না। অথচ ১৩ জুলাই উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে খসড়া সংশোধনী নিয়ে তামাক কোম্পানির মতামত গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়েছে, যা জনস্বার্থের পরিপন্থি।
প্রস্তাবিত ছয়টি সংশোধনী
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রস্তাবিত বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের গুরুত্বপূর্ণ ছয়টি সংশোধনী হলো—
- ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান বাতিল করে শতভাগ পাবলিক প্লেস ও গণপরিবহন ধূমপানমুক্ত করা।
- তামাক বিক্রয়কেন্দ্রে পণ্যের প্রদর্শনী নিষিদ্ধ করা।
- তামাক কোম্পানির সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা।
- ই-সিগারেটসহ নতুন তামাকজাত পণ্যে কিশোর ও তরুণদের প্রবেশ রোধ করা।
- প্যাকেট ও কৌটায় সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার ৫০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৯০ শতাংশ করা।
- বিড়ি-সিগারেটের খুচরা শলাকা ও মোড়কবিহীন ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্যের বিক্রি নিষিদ্ধ করা।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের তামাক নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের উপদেষ্টা নাইমুল আজম খান, সমন্বয়ক ডা. অরুনা সরকার, সিনিয়র কমিউনিকেশনস অফিসার আবু জাফর, রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেলসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিনিধি।
এসইউজে/এনএইচআর/জেআইএম