তালিকাভুক্ত কোম্পানির করপোরেট কর ১৫ শতাংশ করাসহ আট দাবি বিএমবিএ’র

3 months ago 44

আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির করপোরেট করহার ১৫ শতাংশ করাসহ আট দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ)।

সোমবার (২৪ জুন) গণমাধ্যমে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি জানিয়েছে বিএমবিএ। এতে সই করেছেন বিএমবিএ সভাপতি সাজেদা খাতুন ও মহাসচিব মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম।

এতে বলা হয়, জাতীয় বাজেট ২০২৪-২৫ এর লক্ষ্যমাত্রাগুলো অর্জন এবং কর-জিডিপি অনুপাত বাড়ানোর লক্ষ্যে যে অর্থায়ন প্রয়োজন তা সংগ্রহে শেয়ারবাজার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

জাতীয় বাজেটের ঘাটতির অর্থায়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস হিসেবে শেয়ারবাজারকে অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানিয়ে বিএমবিএ আটটি বিষয় বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানিয়েছে। বিএমবিএ’র দাবিগুলো হুবহু তুলে ধরা হলো-

>> ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট ঘাটতি পূরণের অধিকাংশ ব্যাংকিং উৎস হতে ধারস্বরূপ সংগ্রহ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া অ-ব্যাংকিং উৎস হতে ধার করার মাধ্যমেও বাজেট ঘাটতি পূরণের একটি পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এক্ষেত্রে অর্থ সংস্থানের দীর্ঘমেয়াদি উৎস হিসেবে শেয়ারবাজার হতে অর্থায়নের উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। উল্লেখ্য যে শেয়ারবাজারের প্রাইমারি মার্কেটের মাধ্যমে বিভিন্ন বন্ড/সুকুক/ডিবেঞ্চার ইত্যাদি ইস্যুর মাধ্যমে বাজেটে অর্থায়নের উদ্যোগে নেওয়া যেতে পারে।

>> জাতীয় বাজেটের ঘাটতি অর্থায়ন শেয়ারবাজারের মাধ্যমে করতে হলে এক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করতে পারে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো। অন্যান্য কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো স্টক, বন্ড এবং অন্যান্য সিকিউরিটিজের মাধ্যমে শেয়ারবাজার হতে অর্থায়ন ও শেয়ারবাজারে নতুন কোম্পানির তালিকাভুক্তিকরণে কাজ করে। উল্লেখ্য এসব কাজের আওতা বাড়লে কর আয় অনেক বাড়বে। মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোকে তাদের পরিচালন আয়ের ৩৭.৫% কর দিতে হয়, যেখানে সংশ্লিষ্ট অন্যান্যদের কর দিতে হয় ২৭.৫%। এমতাবস্থায় মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর দক্ষভাবে পরিচালনার জন্য প্রযোজ্য করের হার ২৭.৫% এ আনয়নে অতি প্রয়োজন। এরূপ কর হ্রাস করা হলে শেয়ারবাজার হতে অর্থায়নে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো অধিকতর ভূমিকা রাখতে পারবে এবং তাদের কার্যক্ষমতা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে যা মূলত বাড়তি কর সংগ্রহের সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

>> শেয়ারবাজারের মূলভিত্তি হচ্ছে প্রাইমারি মার্কেট। বিভিন্ন উদ্যোক্তাগণ, এসএমই কোম্পানি, স্টার্ট-আপ কোম্পানি এবং অন্যান্য অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোকে শেয়ারবাজার হতে পুঁজি সংগ্রহ এবং শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগে উৎসাহিত করার জন্য প্রাইমারি মার্কেটকে অধিকতর প্রাধান্য দেওয়া প্রয়োজন। এতদলক্ষ্যে তালিকাভুক্তির প্রক্রিয়া সহজীকরণ, কমপ্লায়েন্স এবং আইনকানুন বিনিয়োগবান্ধব ও সহজীকরণ এবং উপদেষ্টা সহায়তা দেওয়ার মতো বিভিন্ন কার্যকরী পলিসি পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে।

>> শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো ও অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যকার বিদ্যমান কর হারের ব্যবধান ৫ শতাংশ, যাহা অতি-স্বল্প বিধায় কোম্পানিগুলোর শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ততে উৎসাহ কম। জাতীয় বাজেটে তালিকাভুক্ত ও অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে করহারের ব্যবধান বাড়ানো হলে কোম্পানিগুলো শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার জন্য আকৃষ্ট হবে। এছাড়া অ-তালিকাভুক্ত বা নতুন নিবন্ধিত কোম্পানিগুলোকে নির্দিষ্ট সময়ান্তে তালিকাভুক্ত করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া যেতে পারে।

>> দেশের বৃহৎ ও স্বনামধন্য কোম্পানিগুলো, বিভিন্ন বহুজাতিক কোম্পানি ও সরকারি লাভজনক কোম্পানিগুলোকে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার জন্য উৎসাহিত করার লক্ষ্যে পলিসি সহায়তার পাশাপাশি তালিকাভুক্ত কোম্পানির জন্য কর্পোরেট ট্যাক্সের হার ১৫ শতাংশ এবং ভ্যাট ছাড় ইত্যাদি প্রদান করা যেতে পারে। এরূপ সুযোগ-সুবিধা অধিক সংখ্যক ভালো ভালো কোম্পানিকে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হতে উৎসাহিত করবে। এভাবে বিনিয়োগকারীদের জন্য পত্র-কোষে বৈচিত্র্যকরণের সুযোগ সৃষ্টি হবে, বাজারের গভীরতা ও বৈচিত্র্য বৃদ্ধি হবে এবং তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মুনাফা বাড়ার পাশাপাশি তাদের স্টকগুলোকে বিনিয়োগকারীদের কাছে আকর্ষণীয় করে তুলবে।

>> শেয়ারবাজার হতে ৫০ লাখ টাকার ওপর ক্যাপিটাল গেইনের ক্ষেত্রে কর ধার্যকরণের যে প্রস্তাব করা হয়েছে তা পুনর্বিবেচনা করে ৫০ লাখ টাকার উপরে হতে বিভিন্ন স্ল্যাব ভিত্তিক কর ধার্য করা যেতে পারে এবং এই ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স ফাইলান ট্যাক্স হিসেবে বিনিয়োগকারীর ট্যাক্স ফাইলে বিবেচিত হবে। এছাড়াও শেয়ারবাজার হতে কর সংগ্রহ বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে কর ব্যবস্থার উন্নতকরণ এবং পরিবর্ধন করা যেতে পারে।

>> শেয়ারবাজারের উন্নয়নের জন্য বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ করায় উৎসাহিত করা গুরুত্বপূর্ণ। দেশের শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করার জন্য কর প্রণোদনা, সহজী বিনিয়োগ পদ্ধতি এবং পলিসি সহায়তার মতো পদক্ষেপ অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।

>> শেয়ারবাজারের উন্নয়নকল্পে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বিভিন্ন কার্যকরী পলিসি সহায়তা দেওয়া আবশ্যক। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বিভিন্ন কার্যকরী পলিসি সহায়তা এবং সরকারি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে আইসিবিকে প্রাইমারি মার্কেট সংক্রান্ত কার্যক্রম পুনরায় শুরুকরণসহ বিভিন্ন কার্যকরী পলিসি সহায়তা প্রদান করা যেতে পারে।

বিএমবিএ’র পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এসব পদক্ষেপ শেয়ারবাজারের গতিশীলতা বৃদ্ধির পাশাপাশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়াবে এবং শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকে উৎসাহিত করবে। এসব উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা সম্ভবপর হলে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের লক্ষ্যে একটি শক্তিশালী ও বৈচিত্র্যপূর্ণ শেয়ারবাজার গড়ে তোলা সম্ভবপর হবে।

এমএএস/এমএএইচ/

Read Entire Article