তালিকায় যুগ পার, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে আতঙ্কে বসবাস
বিপজ্জনক জেনেও বছরের পর বছর ধরে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের কোনোটিতে ব্যবসা, আবার কোনোটিতে বসবাস করে চলেছেন বাসিন্দারা। একযুগ আগে যশোর পৌরসভা কর্তৃপক্ষ ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের একটি তালিকা করলেও তা আর হালনাগাদ করা হয়নি। সেই তালিকার অনেক ভবন অপসারণও সম্ভব হয়নি। সম্প্রতি সারাদেশে মাঝারি মানের ভূমিকম্পের পর যশোরের এসব ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের বাসিন্দাদের মাঝে সৃষ্টি হয়েছে আতঙ্ক। এসব ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে বসবাস নিরুৎসাহিত করতে বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা জানিয়েছে পৌর কর্তৃপক্ষ। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১৩ সালে সাভারের রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির পর যশোর পৌর এলাকায় ১৩৭টি ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করে পৌর কর্তৃপক্ষ। ওইসব ভবনে বসবাস ছাড়াও ব্যবসা বাণিজ্য, অফিসের দাপ্তরিক কাজকর্ম করা হয়। এই ভবনগুলোর মধ্যে ব্যক্তি মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ভবন ৬৮টি, আবাসিক ভবন ৬১টি, সরকারি ভবন ছয়টি ও দুটি মন্দির ছিল। ভবনগুলো ৪০ থেকে ১৫০ বছরের পুরোনো হয়ে বসবাসের অনুপযোগী হওয়ায় সেগুলো তালিকাভুক্ত করে পৌরসভা। তবে একযুগ আগের ওই তালিকার অনেক ভবন এরইমধ্যে ভেঙে পড়েছে বা সংশ্লিষ্টরা ভেঙে ফেলেছেন। কিন্তু তারপরও বেশকিছু ভবন রয়ে গেছে। পাশাপাশি আরও কিছু ভবন নতুন করে ঝুঁকিপ
বিপজ্জনক জেনেও বছরের পর বছর ধরে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের কোনোটিতে ব্যবসা, আবার কোনোটিতে বসবাস করে চলেছেন বাসিন্দারা। একযুগ আগে যশোর পৌরসভা কর্তৃপক্ষ ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের একটি তালিকা করলেও তা আর হালনাগাদ করা হয়নি। সেই তালিকার অনেক ভবন অপসারণও সম্ভব হয়নি। সম্প্রতি সারাদেশে মাঝারি মানের ভূমিকম্পের পর যশোরের এসব ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের বাসিন্দাদের মাঝে সৃষ্টি হয়েছে আতঙ্ক। এসব ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে বসবাস নিরুৎসাহিত করতে বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা জানিয়েছে পৌর কর্তৃপক্ষ।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১৩ সালে সাভারের রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির পর যশোর পৌর এলাকায় ১৩৭টি ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করে পৌর কর্তৃপক্ষ। ওইসব ভবনে বসবাস ছাড়াও ব্যবসা বাণিজ্য, অফিসের দাপ্তরিক কাজকর্ম করা হয়। এই ভবনগুলোর মধ্যে ব্যক্তি মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ভবন ৬৮টি, আবাসিক ভবন ৬১টি, সরকারি ভবন ছয়টি ও দুটি মন্দির ছিল। ভবনগুলো ৪০ থেকে ১৫০ বছরের পুরোনো হয়ে বসবাসের অনুপযোগী হওয়ায় সেগুলো তালিকাভুক্ত করে পৌরসভা। তবে একযুগ আগের ওই তালিকার অনেক ভবন এরইমধ্যে ভেঙে পড়েছে বা সংশ্লিষ্টরা ভেঙে ফেলেছেন। কিন্তু তারপরও বেশকিছু ভবন রয়ে গেছে। পাশাপাশি আরও কিছু ভবন নতুন করে ঝুঁকিপূর্ণ হয়েছে।
পুরোনো এসব ভবনের প্লাস্টার ও ছাদ ধসে পড়লেও ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেনি পৌরসভা কর্তৃপক্ষ। এমনকি ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের হালনাগাদ তালিকাও নেই তাদের কাছে। পৌর কর্তৃপক্ষ বলছে, সর্বশেষ ২০১৩ সালের তালিকা অনুযায়ী পৌরসভায় ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ছিল ১৩৭টি। এর মধ্যে অনেক ভবন ভেঙে ফেলা হয়েছে। তবে পরবর্তীতে এই তালিকা হালনাগাদ করা হয়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শহরের ঘোপ নওয়াপাড়া রোড, সেন্ট্রাল রোড, জেল রোড, এইচএমএম রোড, এমএম আলী রোড, বড় বাজার, খালধার রোড, কাপুড়িয়া পট্টি, হরিণাথ দত্ত লেন, ষষ্ঠীতলা, পোস্ট অফিস পাড়ার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল এলাকা, গুরুদাস বাবু লেন, বারান্দীপাড়া, মোল্যাপাড়া, বেজপাড়া ও পুরাতন বাসস্ট্যান্ডসহ বিভিন্ন এলাকায় পুরনো জরাজীর্ণ ভবন রয়েছে। কিন্তু এসব ভবনের অনেকগুলোই ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ঘোষণা করা হয়নি।
এসব ভবনে মানুষ বসবাস ও ব্যবসা করছে। একাধিক ভবনের বিভিন্ন স্থানে ফাটল ধরেছে। প্লাস্টার ও ছাদ খসে পড়ছে। তারপরও ব্যবহার বন্ধ হচ্ছে না। ঝড় ও বর্ষা মৌসুমে জরাজীর্ণ এসব ভবন বেশি বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। কারণ ঝড়বৃষ্টিতে ভবন ধসে পড়ার আশঙ্কা থাকে। এসব জেনেও মানুষ সেখানে বসবাস করছে। তবে সর্বশেষ ২১ নভেম্বর শুক্রবার ভূমিকম্পের পর এসব ভবনে বসবাসরতদের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে।
যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের ঝুঁকিপূর্ণ আবাসিক ভবনে হাসপাতালের কর্মচারী আঞ্জুয়ারা, রবিন, নিমাইসহ বেশ কয়েকজনের পরিবারের বসবাস। শুক্রবারের ভূমিকম্পের পর তাদের মধ্যেও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
এই ভবনের কোয়ার্টারে বসবাসরত কয়েকজন জানান, ঘরগুলোর পলেস্তারা খসে পড়ছে। ছাদের রড বেরিয়ে গেছে। দেওয়াল ও ছাদে বড় বড় গাছ জন্মেছে। গাছের শিকড়ে পানির পাইপ ফেটে যাচ্ছে, বিদ্যুতের তার জড়িয়ে নানান ঝুঁকি তৈরি করছে। এর মধ্যেই বাধ্য হয়ে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে তারা বসবাস করছেন।
যশোর পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের এইচএমএম রোডের বড় বাজার এলাকায়ও বেশকিছু জরাজীর্ণ ভবন রয়েছে। এসব ভবনের কোনো কোনোটিতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, আবার কোনো কোনোটিতে বসবাসও রয়েছে।
যশোর পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর রাশেদ আব্বাস রাজ জানান, এই এলাকায় বেশকিছু ঝুঁকিপূর্ণ ভবন রয়েছে। এই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো চিহ্নিত করার পাশাপাশি নাগরিকদের সচেতন করতে পৌরসভার ভূমিকা গ্রহণ করা প্রয়োজন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র আরও জানায়, ২০১৩ সালে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ যশোর পৌর এলাকার ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোর তালিকা তৈরি করে। সেই সময় ভবন মালিকাদের চিঠিও দেওয়া হয়। কিন্তু এরপর একযুগ পার হলেও ওই তালিকা হালনাগাদ করা হয়নি।
যশোর পৌরসভার শহর পরিকল্পনাবিদ সুলতানা সাজিয়া জানান, ২০১৩ সালে যশোর পৌরসভায় ১৩৭টি ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করে নোটিশ দেওয়া হয়। এই ভবনগুলোর মধ্যে বেশকিছু ভবন মালিকরা অপসারণও করেন। তবে বেশ কিছু ভবন নিয়ে মামলা, ভাড়াটিয়া নামছে না, আবার কোনো কোনো ভবন মালিকের বিকল্প বাসস্থান না থাকায় ভবন ভেঙে ফেলতে রাজি হননি। এসব জটিলতার কারণে সেসময় আর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। এছাড়া কোনো কোনো ভবন মালিক ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে সংস্কার করে চাকচিক্য করেছেন। কিন্তু সেগুলোর ঝুঁকি থেকেই গেছে।
যশোর পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম শরীফ হাসান বলেন, ২০১৩ সালে পৌর এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা করা হয়েছিল। এর মধ্যে বেশকিছু ভবন ভেঙে ফেলা হয়েছে। তবে হাইকোর্টে মামলাসহ নানা জটিলতায় অনেক ভবন অপসারণে পদক্ষেপ গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। এখন যেহেতু ভূমিকম্পের বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। এখন এ ব্যাপারে নতুন করে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা প্রস্তুতসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।
এফএ/জেআইএম
What's Your Reaction?