তিন দশকেও অব্যবহৃত রাজবাড়ীর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল

2 hours ago 4

গত ৩২ বছর ধরে অবহেলায় পড়ে রয়েছে রাজবাড়ী কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল। আশপাশে জমেছে ময়লার স্তূপ। নষ্ট হচ্ছে আসবাবপত্র। যার ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে পরিবহন শ্রমিক ও যাত্রীদের। 

১৯৯৪ সালের ১৯ এপ্রিল রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের শ্রীপুর এলাকায় যাত্রা শুরু করে রাজবাড়ী কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল। ১ কোটি ৭৪ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই বাস টার্মিনালটি উদ্বোধন করেন তৎকালীন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জাহানারা বেগম। তবে, উদ্বোধনের পর থেকে এখন পর্যন্ত কাজে আসেনি বাস টার্মিনালটি। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে সাময়িক চালু হয়েছিলে তবে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর আবারও বন্ধ হয়ে যায় এটি। বর্তমানে টার্মিনালের বদলে এটি ব্যবহার হচ্ছে গাড়িগুলোর গ্যারেজ হিসেবে। 

দীর্ঘদিন ধরে কার্যক্রম না থাকায় জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে টার্মিনালটি। মূল ভবনসহ বিভিন্ন স্থানে চলছে বিভিন্ন যানবাহন মেরামতের কাজ। যত্রতত্র পড়ে রয়েছে ময়লা-আবর্জনা। ভবনের কোনো কক্ষ ব্যবহার না হওয়ায় নষ্ট হচ্ছে আসবাবপত্র। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পরিবহন শ্রমিক বলেন, টার্মিনালটি পরিত্যক্ত থাকায় সন্ধ্যার পর থেকেই শুরু হয় নানা ধরনের অসামাজিক কার্যকলাপ ও বসে মাদকসেবীদের আসর। 

মো. শহিদুল ইসলাম নামের এক শ্রমিক নেতা কালবেলাকে বলেন, এখানে ময়লা আবর্জনা দিয়ে ভরা। অচল অবস্থায় পড়ে আছে দীর্ঘ বছর যাবৎ। এটা গ্যারেজ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। আমি চাই, এই টার্মিনালটা অতিদ্রুত সচল হোক। 

সুলতান খা নামের আরেক পরিবহন শ্রমিক কালবেলাকে বলেন, টার্মিনালটি অকেজো হয়ে পড়ে আছে। সরকার সেটি দেখছে না। অথচ বড়পুল ও মুরগির ফার্ম এলাকা থেকে ঝুঁকি নিয়ে যাত্রীরা বাসে উঠছে। এতে দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। তাই অবহেলিত থাকা এ টার্মিনালটি চালু হওয়ার দাবি জানাচ্ছি।

এদিকে বাস টার্মিনাল যাত্রা শুরুর পর স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বেশি আয়ের যে আশা দেখেছিলেন সেখানেও ভাটা পড়েছে। একাধিক ব্যবসায়ী বলেন, তারা টার্মিনালে অনেক আশা নিয়ে দোকান দিয়েছিলেন। কিন্তু তাদের আশা আর পূরণ হয়নি। সারাদিন বসে থাকলেও আশানুরূপ বেচাকেনা করতে পারেন না। ফলে দোকান ভাড়া দেওয়া কষ্টকর হয়ে উঠছে তাদের।

রফিক সরদার নামের এক দোকানদার কালবেলাকে বলেন, প্রতি মাসে আমাকে ৪৮০ টাকা দোকান ভাড়া দিতে হয় পৌরসভার। অথচ এখানে অনেক আশা করে দোকানটা নিয়েছিলাম। কিন্তু টার্মিনাল বন্ধ। বেচাকেনা নাই। আমরা চাই অতি দ্রুতই টার্মিনালটি চালু হোক।

বাধন রানা নামের স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, আমাদের এই টার্মিনালটা দীর্ঘ বছর বন্ধ থাকার কারণে আমাদের অনেক ক্ষতি হচ্ছে, ব্যবসা বাণিজ্যও ক্ষতি হচ্ছে। সরকারের কাছে একটাই দাবি টার্মিনালটা যেন চালু করে দেয়। 

সব ধরনের সুযোগ সুবিধা থাকার পরও চালু না হওয়ায় ফলে জেলা শহরের বড়পুল ও মুরগির ফার্ম এলাকা থেকে ঝুঁকি নিয়ে বাসে উঠানামা করছেন যাত্রীরা। কখনো কখনো কিছুটা ভোগান্তিতে পড়তে হয় তাদের।

কালাম ড্রাইভার বলেন, মহাসড়কের ওপর গাড়ি পার্কিং করে যাত্রী ওঠানামা করানো হয়। এতে যানজট সৃষ্টির পাশাপাশি দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা থাকে। আমরা চাই বাস টার্মিনালটি চালু করা হোক। এতে যাত্রীরাও সুবিধা পাবে, আমরাও নির্বিঘ্নে যাত্রী সেবা দিতে পারব।

রাজবাড়ী কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালটি চালুর উদ্যোগ নেওয়ার কথা কালবেলাকে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা। তিনি জানান, টার্মিনাল থেকে যাত্রীরা কেনো যাচ্ছে না আমাকে একটু জানতে হবে। সেক্ষেত্রে যদি আমাদের সেকেন্ড কোনো বিষয় থাকে সেটিও আমাদের বিবেচনায় আনতে হবে। এ জন্য পরিবহন মালিক গ্রুপের নেতাদের সঙ্গে বসে কথা বলে তারপর আমি এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব। 

Read Entire Article