তিন বছর ধরে তালাবন্ধ, নষ্ট হচ্ছে ৪০ কোটি টাকার ভবন

2 months ago 8

নতুন ভবন বুঝে পাওয়ার তিন বছর পরও চালু হয়নি গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালের নতুন ভবন। ফলে অযত্ন-অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে প্রায় ৪০ কোটি টাকায় নির্মিত আধুনিক এ ভবন। এদিকে পুরোনো ভবনে চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা।

গণপূর্ত বিভাগ সূত্র জানায়, ২০১৪ সালে জেলা সদর হাসপাতালটিকে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। ২০১৮ সালে গণপূর্ত বিভাগ ৩৯ কোটি ৭০ লাখ টাকা ব্যয়ে দ্যা ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যান্ড আর্কিটেক্ট লিমিটেড নামক একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নতুন হাসপাতাল ভবন নির্মাণকাজের কার্যাদেশ দেয়। এরপর এখানে ছয়তলা একটি ভবন নির্মাণ করা হয়। ২০২২ সালের এপ্রিল মাসের শুরুর দিকে গণপূর্ত বিভাগ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ভবনটি বুঝিয়ে দেন। ভবন বুঝে পাওয়ার তিন বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও হাসপাতালের নবনির্মিত ভবন চালু করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। তাই আগের মতো পুরোনো ভবনে ভোগান্তি নিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন রোগীরা।

তিন বছর ধরে তালাবন্ধ, নষ্ট হচ্ছে ৪০ কোটি টাকার ভবন

সরেজমিনে দেখা যায়, জেনারেল হাসপাতালের আন্তঃবিভাগ ও বহির্বিভাগে রোগীদের উপচেপড়া ভিড়। পা ফেলার মতো জায়গা নেই। পুরুষ-মহিলা ওয়ার্ডেও রয়েছে শয্যা সংকট। শয্যা না থাকায় হাসপাতালের মেঝেতে জায়গা করে নিয়েছেন রোগীরা। এমনকি ভেতরে জায়গা না থাকায় চলার পথে অবস্থান নিয়েছেন তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাসপাতালটি নিয়মিত রোগী ভর্তি থাকে তিনশোর ওপরে। মেঝে আর বারান্দায় বিছানা পেতে সেবা নিতে হয় তাদের। এছাড়া বহির্বিভাগে প্রতিদিন চিকিৎসা নিতে আসেন এক থেকে দেড় হাজার রোগী। এখানে আসা রোগীদের সেবা দেওয়ার জন্য বসার ব্যবস্থা নেই হাসপাতালটিতে। এদিকে নতুন ভবনে পর্যাপ্ত কেবিন, ১৫০ শয্যার ওয়ার্ড, বহির্বিভাগে রোগীদের সেবা দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা, আইসিইউ, ডায়ালাইসিসের ব্যবস্থা, আধুনিক অপারেশন থিয়েটারসহ আধুনিক সব চিকিৎসা সুবিধা রয়েছে। কিন্তু নতুন ভবন চালু না করায় নষ্ট হচ্ছে কোটি টাকার যন্ত্রপাতিসহ চিকিৎসা সরঞ্জাম।

ইয়াকুব আলী নামে চিকিৎসা নিতে আসা একজন রোগী জাগো নিউজকে বলেন, ‘হাসপাতালের বহির্বিভাগে বুকে সমস্যা নিয়ে ডাক্তার দেখাতে এসেছি। কিন্তু হাসপাতালে এসে আমি আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছি। আয়েশা নামে এক রোগী স্বজন বলেন, হাসপাতালে রোগীকে ভর্তি করে বিপদে পড়ছি। সরকারি হাসপাতালে টাকা বাঁচাতে এসে আরও খরচ বেশি পড়ছে। এখানকার ডাক্তার সকালের দিকে একবার দেখে যায়। রোগীর সমস্যা হলে ডাক্তারের প্রাইভেট চেম্বারে যাওয়া লাগে। সেখানকার ভিজিট, রিকশা ভাড়াসহ যাতায়াতের কষ্ট হিসাব করলে বাহিরে রোগী দেখানো ভালো।

পৌর শহরের গোবিন্দপুর থেকে আয়নাল হোসেন তার বৃদ্ধা মাকে নিয়ে এসেছেন হাসপাতালে। তিনি জরুরি বিভাগে ডাক্তার দেখান। ডাক্তার সেই রোগীকে রংপুরে রেফার্ড করেন। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে জাগো নিউজকে বলেন, ‘হাসপাতালের নাম রেফার্ড হাসপাতাল নাম হওয়া উচিত। এখানে রোগী আসলে বিভিন্ন জায়গায় রেফার্ড করা হয়। তাহলে এ হাসপাতাল থাকে লাভ কী?’

পেটের ব্যথা নিয়ে ভর্তি হয়েছেন পাঁচ বছরের হিমেল। সঙ্গে বাবা-মা। তার ভাগ্যে বেড জোটেনি। তাই বাবা-মা বারান্দায় শয্যা পেতে ছেলের পাশে বসে থেকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

তিন বছর ধরে তালাবন্ধ, নষ্ট হচ্ছে ৪০ কোটি টাকার ভবন

হিমেলের বাবা রেজাউল করিম আক্ষেপ করে বলেন, ‘গরীব মানুষের কোথাও শান্তি নেই। সরকারি হাসপাতালে ছেলেকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসছি। কোনো চিকিৎসাই পাচ্ছি না। মনে হয় জীবনে কোনো খারাপ কাজ করেছিলাম। সেটার শাস্তি হচ্ছে। সকালের দিকে একবার ডাক্তার এসে দেখে যায়। আর সারাদিনে কেউ উকিও দেয় না।’

মিনি বেওয়া নামে এক নারী বলেন, ‘হাসপাতালোত আনু ভালো হওয়া জন্য। মোর বুকোক আরও ধড়পড় বেশি হচ্ছে। সারাদিনোত ডাক্তার একবার আসে। যে ওষুধ কোনা দেয়। তাকই খাম। নার্সও আপা গুলোক ডাকলে, ভুককোত করে আসে যায়। মুর আর হাসপাতালোত থাকপানু। মরলে বাড়িত যাওয়ায়ই মরিম।’

তবে চিকিৎসকরা বলছেন, প্রতিদিন ২০০-২৫০ রোগী ভর্তি থাকে হাসপাতালে। শয্যা না থাকার কারণে ভর্তি রোগীদের হাসপাতালের মেঝে, বারান্দায় করিডোরে বিছানা করে চিকিৎসা দেওয়া হয়। হাসপাতালে বহুতল নতুন ভবন নির্মাণের তিন বছর বছরও সেখানে চিকিৎসা চালু হয়নি। এটা খুবই দুঃখজনক।

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. রফিকুজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, ‘হাসপাতালে পরিপূর্ণ চিকিৎসাসেবা চালুর জন্য দরকার ৫৫ জন চিকিৎসক, ১০১ জন নার্সসহ ২৩৩ জনের জনবল। এর মধ্যে আছে মাত্র ৪৩ জন। এ ব্যাপারে বার বার সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি দিয়েছি, তবুও কোনো কাজ হচ্ছে না। আমি নিজেও সিভিল সার্জনের পাশাপাশি এ হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্ব পালন করছি। একজনের পোস্টিং হয়েছিলে তিনি এখানে জয়েন করেননি। হাসপাতালের এমন অবস্থা হয়েছে, রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া মুশকিল হয়ে পড়ছে।’

এএনএইচএস/আরএইচ/জিকেএস

Read Entire Article