বিপিএলের গা‘ভর্তি সমালোচনার কাটা। বাংলাদেশের এ ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টকে ভাবা হচ্ছিল আইপিএল ও বিগ ব্যাশের পর বিশ্বের তিন নম্বর ফ্র্যাঞ্চাইজি আসর। সে সম্ভাবনা কিন্তু ছিলও। ক্রিকেটারদের পাওনা নিয়ে শুরু থেকে সমস্যা ও অনিয়ম থাকলেও মাঠের ক্রিকেটটা জমতো ভালই।
টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে যাদের ভাবা হয় বিশ্বসেরা, সেরাদের সেরা; সেই ক্রিস গেইল, ব্রেন্ডন ম্যাককালাম, এবি ডি ভিলিয়ার্স, মারলন স্যাময়েলস, আন্দ্রে রাসেল, সুনিল নারিন, ডেভিড ওয়ার্নার, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল আর স্টিভেন স্মিথের মত বড় মাপের ক্রিকেটারররা নিয়মিতই অংশ নিয়েছেন।
কিন্তু ধীরে ধীরে সেই সব বিশ্ব তারকাদের উপস্থিতি গেছে কমে। সেটা কমতে কমতে প্রায় শুন্যের কোটায় এসে ঠেকেছে।
সেই পারিশ্রমিক নিয়ে অনিয়ম, ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর নানা টালবাহানা দিনকে দিন বেড়ে চলেছে। সব মিলিয়ে বিপিএল রং হারিয়েছে আগেই। এ আসরটিকে নিয়ে ভালো কথার চেয়ে সমালোচনা, তীর্যক কথা-বার্তাই হয়েছে বেশি। সব মিলিয়ে বিপিএলের গায়ে কালো দাগ লেগে গেছে।
আশার কথা, এবার বিসিবি সে কালো দাগ মুছে, সমালোচনার কাটা তুলে আবার বিপিএলকে স্বচ্ছ এক আসরে পরিণত করতে উদ্যোগী হয়েছে। যার প্রথম পদপক্ষেপ ছিল বিসিবির অন্যতম চৌকশ পরিচালক মাহবুব আনামকে বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের চেয়ারম্যান করা।
দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে বিসিবির সাথে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত মাহবুব আনাম। ক্লাব ক্রিকেট ও বোর্ড ব্যবস্থাপক হিসেবে তার দক্ষতা প্রমাণিত। তাকে ‘সকল কাজের কাজী’ বলেই মনে করা হয়; কিন্তু এর আগে কখনোই মাহবুব আনামকে বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের প্রধান করা হয়নি। এমনকি সদস্য সচিব পদেও বসানো হয়নি।
আমিনুল ইসলাম বুলবুল বিসিবি সভাপতি হওয়ার পর বিপিএলের অনিয়ম, অব্যস্থাপনা, অপেশাদারিত্ব ও অস্বচ্ছতা বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পুরো বিপিএল ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা, পেশাদারিত্ব ও গতিশীলতা আনার লক্ষ্যে প্রথমবারের মত তুখোড় সংগঠক মাহবুব আনামকে বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের চেয়ারম্যান করা হয়েছে।
পাশাপাশি বিপিএলের আয়োজনটা সুন্দর সাজানো-গোছানো করতে দেশের বাইরে কোন আন্তর্জাতিক মানের ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের হাতে পুরো বিপিএল ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব ভার অর্পনেরও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে এবং সে আলোকে মাসখানেক আগে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞাপনও দেয়া হয়েছিল।
আগেই জানা বিসিবির সেই বিজ্ঞাপনে সাড়া দিয়ে ৪টি পুরোদস্তুর ভিনদেশিসহ মোট ৫টি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান আগ্রহ প্রকাশ করে বিসিবিতে দরপত্র জমা দেয়।
আগ্রহপত্র জমা দেয়া ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টগুলো ছিল অ্যাপেক্স স্পোর্টিং কনসাল্টিং, আইএমজি, রিয়াল ইমপ্যাক্ট অ্যান্ড অ্যাবসলিউট লিজেন্ডস স্পোর্টস, দ্য আইপিজি গ্রুপ ও মাইন্ড ট্রি।
গত শনিবার বিসিবির পরিচালক পর্ষদের সভা শেষে মিডিয়া কমিটির চেয়ারম্যান ইফতিখার রহমান মিঠু প্রচার মাধ্যমকে জানান, তাদের বাছাই প্রক্রিয়া প্রায় শেষ। খুব শিগগিরই তারা ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির নাম চূড়ান্ত করে ঘোষণা দেবেন।
এদিকে ভেতরের খবর, ওই ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি নিয়োগ মোটামুটি চূড়ান্ত। বিসিবির উচ্চ পর্যায়ের এক দায়িত্বশীল সূত্র জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেছে, যে একটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের সাথে তাদের কথা-বার্তা একরকম চূড়ান্ত। ৯০ ভাগ কথা-বার্তা হয়ে গেছে। কিছু শর্ত নিয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে।
কে সেই ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি? আইপিএল পরিচালনার অভিজ্ঞতা সম্পন্ন প্রতিষ্ঠান ‘আইএমজি‘র কাঁধেই বিপিএলের সমুদয় ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব দিতে আগ্রহী। সুতরাং, ধরেই নেয়া যায় যে, আইএমজিই আগামী তিন বছরের জন্য বিপিএলের আয়োজনের দায়িত্ব পেতে পাচ্ছে।
জানা গেছে, আইএমজির সাথে বিসিবি দীর্ঘ মেয়াদে চুক্তিতে যাবে। তবে প্রাথমিকভাবে তিন বছরের জন্য চুক্তি হবে।
একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, আইএমজি প্রথমে এক বছরের জন্য অর্থ জোগানের কথা বলেছিল। কিন্তু বিসিবি থেকে সেটা ৩ বছরের জন্য বরাদ্দের দাবি তোলা হয়েছে। সে দাবি পূরণ হয়ে গেলেই হয়ত বিসিবি আনুষ্ঠানিকভাবে ২০২৫ থেকে ৩ বছরের জন্য বিপিএলের ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট হিসেবে ভারতের সাড়া জাগানো আইপিএলের সাবেক ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের দায়িত্ব পালনকারি আইএমজির ওপরই বিপিএল আয়োজন ও ব্যবস্থপনার দায়িত্ব অর্পন করবে।
এআরবি/আইএইচএস/