তিন মণের গরুর দাম হাঁকা হচ্ছে সোয়া লাখ টাকা

3 months ago 45

আগামী ১৭ জুন উদযাপিত হবে পবিত্র ঈদুল আজহা। ঈদের বাকি আর মাত্র সপ্তাহখানেক। এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ব্যাপারীরা রাজধানীর স্থায়ী ও অস্থায়ী হাটগুলোতে কোরবানির পশু নিয়ে আসতে শুরু করেছেন। এসব হাটে কেনাবেচাও শুরু হয়েছে, তবে খুব সীমিত পরিসরে। মূলত হাটে ক্রেতা আসছেন, পশু দেখছেন, দাম জিজ্ঞাসা করে ব্যাপারীর মন বোঝার চেষ্টা করছেন। অবশ্য অল্প পরিসরে পশু কেনা শুরু করেছেন কেউ কেউ।

রোববার (৯ জুন) রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী গাবতলী পশুর হাট ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

হাট ঘুরে দেখা যায়, আনুমানিক তিন মণ মাংস হবে এমন গরুর দাম হাঁকা হচ্ছে এক লাখ ২৫ হাজার টাকা। পাঁচ মণ মাংস হবে জানিয়ে একটি গরুর দাম চাইছেন এক লাখ ৭৫ হাজার টাকা। যদিও ক্রেতাদের ধারণা চার থেকে সাড়ে চার মণের বেশি মাংস হবে না গরুটির।

রাজধানীর স্থায়ী পশুর হাটগুলোর মধ্যে একটি গাবতলী। সারাবছরই এখানে গরু কেনাবেচা হয়। তবে কোরবানির ঈদে জমজমাট পশু কেনাবেচা হয় রাজধানীর প্রবেশমুখের এই হাটটিতে।

তিন মণের গরুর দাম হাঁকা হচ্ছে সোয়া লাখ টাকা

সরেজমিনে দেখা যায়, গাবতলী পশুর হাট এবার নতুনভাবে সাজছে। হাটের প্রবেশদ্বারেই গোল চত্বর তৈরি হচ্ছে। মূলত হাটে প্রবেশ নির্বিঘ্ন ও জটলামুক্ত করতেই এগিয়ে চলছে বিশাল অবকাঠামোগত কাজ। নির্মাণাধীন গোল চত্বরের পাশেই সম্প্রসারিতে হচ্ছে গাবতলী পশুর হাট।

তবে হাট এখনো জমেনি। ৩০ বা ৪০ মিনিট পরপর একটা গরু বিক্রি হচ্ছে। হাসিল ঘরের সামনে এমন চিত্র দেখা গেছে। সেখানে দেখা যায়, যাত্রাবাড়ীর আইয়ুব আলী দেশি মাঝারি আকারের একটি গরু কিনেছেন। হাসিল করার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। তার গরুটির মাংস হবে আনুমানিক সাড়ে তিন মণ। এক লাখ ২৮ হাজার টাকায় কলো রঙের গরুটি কিনেছেন তিনি।

আইয়ুব আলীর সঙ্গে কথা হলে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘ব্যাপারীরা উল্টাপাল্টা দাম চাচ্ছেন। অন্য বছরের চেয়ে এবার গরুর দাম একটু বেশি।’

হাটে ক্রেতারাও ঘুরে গরু দেখছেন আর দাম যাচাই করছেন। ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাসায় গরু রাখা সমস্যাসহ নানান কারণে এখন কিনতে চান না তারা। হয়তো ঈদের দু-একদিন আগে গরু কিনবেন তারা। এখন মূলত ব্যাপারীর মনের ভাষা বোঝার চেষ্টা করছেন। সাধ ও সাধ্য মিলে গেলেই গরু কিনবেন তারা।

তিন মণের গরুর দাম হাঁকা হচ্ছে সোয়া লাখ টাকা

রাজধানীর মিরপুর থেকে হাটে গরু দেখতে এসেছেন আকরাম হোসেন ভূঁইয়া। তিনি বলেন, ‘এখন গরু দেখছি। কিনবো আরও পড়ে।’ দাম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এবার দাম বাড়তি। দেখা যাক সামনে কী হয়।’

গরুর বাড়তি দাম ক্রেতাদের চিন্তিত করলেও আশাবাদী হচ্ছেন বিক্রেতারা। তাদের আশা, এবার গরুর দাম বাড়তি হবে। এ কারণেই তারা ঈদের দু-একদিন আগে গরু ছাড়তে চান। তবে এর মধ্যে যদি দামে মিলে যায় তবে ছেড়ে দেবেন।

দুদিন আগে ২০টি মাঝারি আকারের দেশি গরু হাটে তুলেছেন চুয়াডাঙ্গা সদরের সাইফুল ব্যাপারী। তিন মণ মাংস হবে এমন একটি গরুর দাম জানতে চাইলে তিনি এক লাখ ২৫ হাজার টাকা দাম হাঁকেন। তার দাবি, এবার গরুর দাম বেশি।

সাতটি ছোট গরু হাটে তুলছেন কুষ্টিয়ার মিরপুরের ব্যাপারী তেলাফত প্রামাণিক। শনিবার (৮ জুন) রাতে গরুগুলো হাঁটে তুলেছেন তিনি। তেলাফত প্রামাণিকেরও দাবি, এবার গরুর দাম বেশি। পাশাপাশি গো-খাদ্যের দাম বেশি বলেও জানান তিনি। এছাড়া গরু পরিচর্যার জন্য প্রত্যেক রাখালকে গড়ে দৈনিক এক হাজার টাকা পরিশোধ করতে হয়। এজন্যই মূলত গরুর দাম বাড়তি বলে জানান তিনি।

তেলাফত ব্যাপারী জাগো নিউজকে বলেন, ‘বিটা এবার গরুর আগুন দাম। খাদ্য-খাবার, আখালের (রাখাল) ট্যাকা বাদ দিলে কিছু থাকে না বিটা।’

একই এলাকার আরেক বিক্রেতা রোজন। শনিবার ১৮টি গরু নিয়ে হাটে এসেছেন। সাড়ে তিন মণ থেকে ছয় মণ ওজন পর্যন্ত গরু আছে তার কাছে।

ক্রেতা প্রসঙ্গে রোজন ব্যাপারী জানান, ঢাকার মানুষের গরু রাখার জায়গা নেই। সে কারণেই এখনো কেনাবেচা সেভাবে শুরু হয়নি।

শনিবার হাটে চারটি গরু এনেছেন কুষ্টিয়ার এনামুল ব্যাপারী। তিনি আশা করছেন, এবার দাম ভালো মিলবে।

তবে হাটে গরুর দাম চড়া হলেও কোরবানির ঈদ উপলক্ষে দেশে গরু-ছাগলের ঘাটতি নেই বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী আব্দুর রহমান।

তিনি জাগো নিউজকে বলেন, দেশে পশুর কোনো ঘাটতি না থাকায় ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা এবার কোরবানির ঈদ ভালোভাবে করতে পারবেন। গত বছর প্রায় পাঁচ লাখ গবাদিপশু অবিক্রীত ছিল। এ বছর তার সঙ্গে আরও সাড়ে চার লাখ পশু যোগ হয়েছে। আমাদের দেশে চাহিদা হলো এক কোটি ২৯ লাখ পশু, সেখানে আছে এক কোটি ৩০ লাখেরও বেশি।

ঈদুল আজহা উপলক্ষে রাজধানীতে ১৬টি অস্থায়ী পশুর হাটের ইজারা চূড়ান্ত করেছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। এবারের ঈদে মোট ২০টি হাট ইজারায় দরপত্র আহ্বান করেছিল ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। এর মধ্যে ডিএনসিসির গাবতলী স্থায়ী পশুর হাটসহ ৯টি এবং ডিএসসিসি সারুলিয়া স্থায়ী পশুর হাটসহ ১১টি পশুর হাট বসাতে চেয়েছিল। কিন্তু হাইকোর্টের নির্দেশনাসহ নানান কারণে অস্থায়ী হাটের সংখ্যা কিছুটা কমেছে। এর মধ্যে আফতাবনগরে হাট বসানো নিয়ে দুই সিটি করপোরেশন দরপত্র আহ্বান করলেও উচ্চ আদালতের নির্দেশনায় তা বন্ধ আছে।

এমওএস/ইএ/জেআইএম

Read Entire Article