তিন মাস ধরে ভুল কোর্স পড়াচ্ছিলেন, অতঃপর...
তিন মাস ধরে স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের ভুল কোর্স পড়ানোর অভিযোগ উঠেছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সাইদুল আল আমিনের বিরুদ্ধে। স্নাতকোত্তর ২০২২-২৩ সেশনের ‘এইচআরএম-৫২৪ : ইন্ডাস্ট্রিয়াল’ কোর্সের বিপরীতে ‘ইন্টারন্যাশনাল হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট’ পড়াচ্ছিলেন তিনি।
এমনকি ভুল কোর্সের অধীনে শিক্ষার্থীদের মিডটার্ম পরীক্ষাও নেন তিনি। গত ২৯ জানুয়ারি বিষয়টি বুঝতে পেরে আবার নতুন কোর্স পড়ানো শুরু করেন। তবে কোর্স শেষ না হওয়ায় নির্ধারিত সময়ে চূড়ান্ত পরীক্ষায় বসতে পারছেন না শিক্ষার্থীরা। কোর্সটিও তড়িঘড়ি করে শেষ করার চেষ্টা করছেন সংশ্লিষ্ট শিক্ষক।
শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, নতুন কোর্স শুরু করে দুদিনে তিনটি টপিক পড়ানোর পর ২ ফেব্রুয়ারি মিডটার্ম নেন তিনি। ফলে শিক্ষার্থীরা মৌলিক জ্ঞান অর্জন থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে দাবি করেছেন। একই সঙ্গে এসব বিষয় তাদের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করছে। গত ১ নভেম্বর থেকে এ সেমিস্টারের ক্লাস শুরু করেন তিনি। এর মধ্যে ১৮ নভেম্বর ভুল কোর্সের একটি মিডটার্ম নেন।
জানা গেছে, স্নাতকোত্তরের চূড়ান্ত পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল আগামীকাল ১৩ ফেব্রুয়ারি থেকে; কিন্তু ১৫ দিন আগে গত ২৯ জানুয়ারি শিক্ষক সাইদুল শিক্ষার্থীদের জানান যে, তিনি অসাবধানতাবশত ভুল কোর্স পড়িয়েছিলেন। সেদিনই তিনি নতুন করে নির্ধারিত কোর্স ‘ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিলেশন’-এর ক্লাস নেওয়া শুরু করেন। একই সঙ্গে ভুল কোর্সে নেওয়া মিডটার্ম পরীক্ষাটিও বাতিল করেন। গত ২৯ ও ৩০ জানুয়ারি দুদিন ক্লাস নিয়ে ২ ফেব্রুয়ারি নতুন কোর্সের একটি মিডটার্ম পরীক্ষা নেন তিনি। এতে একাডেমিক চাপে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থীদের মধ্যে। এমনকি পূর্বনির্ধারিত সময় ১৩ ফেব্রুয়ারি চূড়ান্ত পরীক্ষাও শুরু হচ্ছে না তাদের।
শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, কোর্স শেষ না হওয়ায় বিভাগ থেকে মৌখিকভাবে পরীক্ষা শুরু হওয়ার তারিখ পেছানো হয়েছে। যদিও বাকি কোর্সগুলোর ক্লাস ও চূড়ান্ত পরীক্ষা পূর্ববর্তী অন্যান্য কার্যক্রম প্রায় ৯৫ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। শুধু সাইদুল আল আমিনের নেওয়া কোর্স শেষ না হওয়ায় পরীক্ষা পিছিয়েছে।
ওই ব্যাচের এক শিক্ষার্থী বলেন, শিক্ষকের এমন উদাসীন আচরণে আমরা বিস্মিত। উনি এখন টানা ক্লাস নিয়ে কোর্স শেষ করার চেষ্টা করছেন। এটা আমাদের জন্য অনেক চাপ সৃষ্টি করছে। বিভাগীয় চেয়ারম্যান ও অন্য শিক্ষকদের আমরা বিষয়টি জানিয়েছি। তবে বিভাগের ‘মানহানি’ হওয়ার আশঙ্কায় তারা কেউ এ বিষয়ে কর্ণপাত করছেন না। দিনশেষে যা ক্ষতি হওয়ার শিক্ষার্থীদেরই হচ্ছে। সবচেয়ে বড় কথা, এ বিষয়ে জবাবদিহি করার কেউ নেই।
বিষয়টি ভুল হয়েছে দাবি করে শিক্ষক সাইদুল আল আমিন বলেন, প্রতি দুই বছর পরপর আমাদের সিলেবাস পরিবর্তন হয়। এ কারণে প্রথম দিকে এমন ভুলটা হয়েছে। এখানে আমার একক ভুলে এমন হয়েছে।
এতে শিক্ষার্থীদের একাডেমিক প্রেশারে পড়তে হচ্ছে কি না- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, তাদের কয়েকটা ক্লাস একটু কষ্ট করতে হয়েছে। শিক্ষার্থীদের তেমন কোনো প্রেশারে পড়তে হয়নি, হবেও না। যে ক্ষতি হয়েছে, তা পুষিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছি।
এ বিষয়ে বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. শেখ মকসেদুর রহমানের কাছে মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি খানিকটা বিরক্ত হয়ে বলেন, এ বিষয়ে কথা বলতে চাচ্ছি না। বিশ্ববিদ্যালয়ে এত উন্নয়ন হচ্ছে এগুলো তো তোমরা দেখছ না। মানুষ ভুল করতেই পারে।
ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন ও একই বিভাগের অধ্যাপক ড. আহসান উল্লাহ বলেন, বিষয়টি জানার পর খারাপ লেগেছে। ওই ব্যাচের শিক্ষার্থীরা ওবিই (অবজেকটিভ বেসড এডুকেশন) অন্তর্ভুক্ত ছিল (তিন সেমিস্টারের)। উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলে মাস্টার্স দুই সেমিস্টারে নিয়ে এসেছি, যাতে তারা অতিদ্রুত একাডেমিক কার্যক্রম শেষ করে চাকরিতে যোগদান করতে পারে।
এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. হায়দার আলী বলেন, বিষয়টি আপনার কাছ থেকেই প্রথম শুনলাম। এ ব্যাপারে আরও বিস্তারিত জানিয়ে আমাকে সহায়তা করতে পারেন। ঘটনার তদন্ত করব, শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলব, এরপর অভিযোগের সত্যতা মিললে ব্যবস্থা নেব।