সিরিয়ার ক্ষমতাচ্যুত নেতা বাশার আল-আসাদের পতনের পর সেখানে তুরস্কের বড় ধরনের উপস্থিতি দেখা যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এমনকি মনে করা হচ্ছিল, তুরস্কের সীমান্তবর্তী সিরিয়ার একটি বড় অংশ ভূমি দখলে নিতে পারেন এরদোয়ান। তবে এবার তেমন কোনো সম্ভাবনার কথা নস্যাৎ করে দিয়েছে আঙ্কারা।
তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান বলেছেন, সিরিয়ার কোনো অংশ দখলের কোনো পরিকল্পনা তুরস্কের নেই। শুক্রবার ইস্তাম্বুলে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি। খবর এএফপির।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, সিরিয়ার ভূখণ্ডের কোনো অংশের প্রতি তুরস্কের লোভ নেই। তবে তুরস্ক তার সীমান্তের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর। সিরিয়ার নতুন সরকারের সঙ্গে সহযোগিতার সম্পর্ক চায় তুরস্ক। যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ায় কুর্দি বাহিনীর বিরুদ্ধে আঙ্কারার হুমকি নিয়ে উদ্বেগের পরিস্থিতিতে এমন মন্তব্য করলেন তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
এর আগে ইসরায়েলভিত্তিক সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েল এক প্রতিবেদনে বলেছিল, সিরিয়া ইস্যুতে এখন মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছেন এরদোয়ান ও নেতানিয়াহু। বাশার আল আসাদের পতনের পর দামেস্কের ক্ষমতা এখন বিদ্রোহীদের হাতে। তুরস্ক সেখানে নিজের একক উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চাচ্ছে, যাকে নিজ স্বার্থের জন্য বড় হুমকি মনে করছে তেল আবিব।
গেল মাসে বাশার আল আসাদের পতন ঘটে বিদ্রোহীদের হাতে। হায়াত তাহরির আল শামের নেতৃত্বাধীন বিদ্রোহীদের এই অভিযানে মদদ জুগিয়েছে তুরস্ক। এরদোয়ানের ছকে বাশার আসাদ যখন দৃষ্টিসীমার বাইরে তখনই আবির্ভাব ঘটে ইসরায়েলের। সুযোগ বুঝে সিরিয়ার গুরুত্বপূর্ণ ও কৌশলগত অঞ্চল কব্জায় নেয় নেতানিয়াহুর বাহিনী। এরপরই ঘটে আসল বিপত্তি।
একদিকে ইসরায়েল যখন সিরিয়াকে দুর্বল করতে চাইছে, ঠিক তখন এরদোয়ান চাইছেন সিরিয়াকে আরও শক্তিশালী এবং দামেস্কে নিজের আধিপত্য আরও জোরালো করতে। তবে এই খেলায় এরদোয়ানের সামনে বড় বাধা কুর্দিরা। এরদোয়ান যে কুর্দিদের দমাতে চাইছেন, সেই কুর্দিদের পক্ষেই আওয়াজ উঠছে তেল-আবিবে।
তুরস্কের সীমান্তবর্তী সিরিয়ার কুর্দিশাসিত অঞ্চলে নতুন একটি রাষ্ট্র গঠনের দাবি দীর্ঘদিনের। কুর্দি সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো এই দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে লড়াই করে আসছে। যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েলসহ পশ্চিমা দেশগুলোর সমর্থন এবং অস্ত্রও পায় তারা। তবে এরদোয়ান এটাকে তুরস্কের জন্য বড় হুমকি মনে করেন।
সিরিয়ায় আসাদের পতনের পর এরই মধ্যে মার্কিন বাহিনীর ছত্রছায়ায় থাকা কুর্দি সশস্ত্র গোষ্ঠী এসডিএফের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়েছে তুরস্ক। এসডিএফকে নিশ্চিহ্ন করতে এসএনএ ফ্রি লাইসেন্স দিয়েছে আঙ্কারা। আর এই প্রেক্ষিতে ইসরায়েল যখন এসডিএফকে সমর্থন দিতে যাচ্ছে তখন দুই দেশের সেনাদের মধ্যে সরাসরি সংঘাতের শঙ্কা তৈরি হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
ইসরায়েলি একজন অধ্যাপক এফ্রাত আভিভের মন্তব্য প্রকাশ করেছে জেরুজালেম পোস্ট। সেখানে তিনি বলেছেন, এক দশকের বেশি সময় ধরে তেলআবিব ও আঙ্কারার সম্পর্কে তিক্ততা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কয়েক দফা কূটনৈতিকভাবে পরিস্থিতি প্রশমন করেছে দুই দেশ। কিন্তু তুরস্ক এখন ইসরায়েলের দরজায় পৌঁছে যাওয়ায় আঙ্কারা-তেল আবিবের সম্পর্কে আবারও অবনতি ঘটতে পারে।