হিমালয় কন্যা খ্যাত দেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার আকাশে উঁকি দিতে শুরু করেছে পৃথিবীর তৃতীয় উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘা। তেঁতুলিয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকা দিয়ে ছবির মতো ভেসে উঠছে উচ্চতম এই পর্বতশৃঙ্গটি। আর তা দেখতে পর্যটকদের ভিড় লেগে গেছে এ জেলায়। অনেকেই আবার পর্বতশৃঙ্গটির মোহনীয় সৌন্দর্য উপভোগ করতে কয়েকদিন আগে থেকে আসা শুরু করেছেন পর্যটকরা।
সরেজমিনে বুধবার (৬ নভেম্বর) সকাল ৭টা পর্যন্ত মেঘমুক্ত আকাশে পর্বতশৃঙ্গটি দেখা গেছে। ডাকবাংলো পিকনিক কর্নারসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পর্যটকদের কাঞ্চনজঙ্ঘার সৌন্দর্য উপভোগ করতে দেখা গেছে। হেমন্ত ও শীতের এ সময়ে দেশের শুধু পঞ্চগড় থেকে খালি চোখে দেখা যায় কাঞ্চনজঙ্ঘা।
জানা গেছে, মাউন্ট এভারেস্ট ও কে টু এর পরে এর স্থান। পর্বতের কিছু অংশ ভারতের সিকিম ও কিছু অংশ নেপালে অবস্থিত। পঞ্চগড়ের প্রায় সব জায়গা থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা খালি চোখে দেখা গেলেও সবচেয়ে ভালো দেখা যায় সীমান্ত নদী মহানন্দা তীরের ঐতিহাসিক তেঁতুলিয়া ডাকবাংলো পিকনিক কর্নার থেকে। সূর্যের আলোর সঙ্গে কখনও শুভ্র, কখনও গোলাপি আবার কখনও লাল রঙ নিয়ে হাজির হয় বরফ আচ্ছাদিত এ পর্বত চূড়াটি। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কিছুটা ঝাপসা হয়ে এলে রঙ হয় সাদা। আর এ সৌদর্য উপভোগ করার মোক্ষম সময় ভোর, সকাল ও বিকেল বলে জানান স্থানীয়রা।
বগুড়া থেকে আগত এনামুল হক বলেন, আমি গতকাল জানতে পারি কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যাচ্ছে। পরে বন্ধু-বান্ধবসহ তেঁতুলিয়ায় কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে এসেছি। তবে এখানে আসার সঙ্গে সঙ্গে ডাকবাংলো পিকনিক কর্নারে মহানন্দা নদীর তীর থেকে পর্বতটি দেখতে পেয়েছি। আমাদের এ যাত্রা সফল হয়েছে।
একই কথা জানান আবির হোসেন। তিনি বলেন, বছরের শুরু থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার জন্য তেঁতুলিয়া আসার পরিকল্পনা ছিল। তবে আজ দেখা না গেলে আমাদের রাতে থাকার পরিকল্পনা ছিল। যেহেতু দেখা হয়েছে, তাই অন্য স্থানগুলো ঘুরে আবার বাড়ি ফিরে যাব।
ঢাকা থেকে আসা বুলবুল আক্তার বলেন,আমাদের আজ (বুধবার) সকালে পৌঁছাতে একটু দেরি হওয়ায় দেখার সৌভাগ্য হয়নি। অন্য পর্যটক ও স্থানীয়রা জানালেন যে সকালে দেখা গেছে। যেহেতু আজ দেখা হয়নি, তাই আগামীকাল দেখার জন্য তেঁতুলিয়ায় থাকব।
চট্টগ্রাম থেকে ঘুরতে আসা ইমতিয়াজ এবং জয় বলেন, আজকে সকালে কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরূপ দৃশ্য দেখার সৌভাগ্য হয়েছে। আমরা কিছুক্ষণের জন্য দেখতে পেরেছি। তেঁতুলিয়ার নৈসর্গিক সৌন্দর্য ও প্রকৃতি বেশ ভালো লেগেছে। সঙ্গে তেঁতুলিয়ার মানুষ অনেক আন্তরিক হওয়ায় বিষয়টি আরও ভালো লেগেছে।
ঢাকা থেকে ঘুরতে আসা আতিয়ান নাহার বলেন, আমরা এর আগেও তেঁতুলিয়ায় বেড়াতে এসেছি। এবার তিনজন বান্ধবী মিলে আবারও এসেছি। আজকে সকালে কাঞ্চনজঙ্ঘা মায়াবী দৃশ্য দেখে আমরা বেশ আনন্দিত।
স্থানীয়রা জানান, মেঘমুক্ত ও কুয়াশামুক্ত গাঢ় নীল আকাশ থাকলেই দেখা যায় হিমালয়ের এ পর্বতশৃঙ্গ। গত কয়েকদিন অবয়ব দেখা দিলেও বুধবার সকালে পরিষ্কারভাবে আকাশে দেখা দিয়েছে। ভোরে সব থেকে ভালো দেখার কারণ হচ্ছে আলো ফুটতেই তা গিয়ে পড়ে ঠিক কাঞ্চনজঙ্ঘার চূড়ায়। তাই পর্যটকরা ফজরের আজানের পর পরই পৌঁছালে অনেক সময় ধরে পর্বতটি দেখতে পারেন। নভেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত মেঘমুক্ত আকাশে দেখা দেবে কাঞ্চনজঙ্ঘা।
তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফজলে রাব্বী কালবেলাকে বলেন, কাঞ্চনজঙ্ঘা আমাদের তেঁতুলিয়া থেকে দেখা যায়। আর এ সৌন্দর্য উপভোগ করতে এ মৌসুমে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটকরা এখানে আসেন। যেহেতু একদিকে তেতুলিয়া পর্যটন এলাকা অন্যদিকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার মৌসুম। তাই পর্যটকদের জন্য আবাসন ব্যবস্থা থেকে শুরু করে সব বিষয়ে আমরা নজর রেখেছি। তারা যাতে কোনো হয়রানির শিকার না হন, সে ব্যাপারে নজর রাখছি।
তিনি আরও বলেন, আবাসিক হোটেল থেকে শুরু করে পরিবহনের লোকজনের সঙ্গেও আমাদের কথা হয়েছে। পর্যটকদের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তারা দেখবেন। আর থানা পুলিশ, ট্যুরিস্ট পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসন মিলে আমরা তৎপর রয়েছি। পর্যটকরা কোনো সমস্যায় পড়লে আমাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।