তেল না পেয়ে পাম্পের কর্মচারীকে তুলে নিয়ে গেলেন এমপির ছেলে

3 months ago 37

ময়মনসিংহের ত্রিশালে হেলমেট ছাড়া তেল না পেয়ে ফিলিং স্টেশনের কর্মচারীকে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় সংসদ সদস্যের (এমপি) ছেলের বিরুদ্ধে। বুধবার (২৬ জুন) দুপুরে ত্রিশাল পৌর শহরের মেসার্স ইভা ফিলিং স্টেশনে এ ঘটনা ঘটে।

ইভা ফিলিং স্টেশনের কর্মচারীরা জানান, গত বুধবার দুপুরে ফিলিং স্টেশনে মোটরসাইকেলের তেল নিতে আসেন স্থানীয় সংসদ সদস্য (ময়মনসিংহ- ৭) ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এ বি এম আনিছুজ্জামানের ছোট ছেলে সাদমান সামিন (২২)। এ সময় তার মাথায় হেলমেট না থাকায় তেল দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন কর্মচারী আকাশ আহমেদ। এতে এমপির ছেলে তার ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে চলে যান। এর কিছুক্ষণ পর ১০-১২ জন এসে আকাশকে তুলে নিয়ে যান সাদমান সামিনের অফিসে। সেখানে ক্ষমা চেয়ে মুক্তি পান আকাশ।

ইভা ফিলিং স্টেশনের কর্মচারী আকাশ আহমেদ বলেন, ‘নো হেলমেট নো ফুয়েল’ নীতি বাস্তবায়নে মালিক আমাদের বলে দিয়েছেন কেউ হেলমেট ছাড়া এলে তেল যেন না দিই। কিন্তু ওইদিন হেলমেট ছাড়া এক যুবক এসে বলে তেল দিতে, আমি না করলে তিনি কিছুটা রাগান্বিত হয়ে যান। আমি তাকে চিনতে পারি নাই বলে আমারও খারাপ লেগেছে। এর কিছুক্ষণ পরে তিন-চারটি মোটরসাইকেলে ১০-১২ জন এসে আমাকে তুলে নিয়ে যায়। তাৎক্ষণিক আমার মালিকও সঙ্গে যান।

আকাশ আহমেদ আরও বলেন, আমাকে এমপির পৌর মার্কেটের একটি কক্ষে কিছুক্ষণ বসিয়ে রাখা হয়। এরপর এমপির ছেলে সাদমান এসে তেল না দেওয়ার ব্যাখ্যা চান। তখন আমি ভয়ে করজোড়ে বলি জীবনে আর কখনো এমন ভুল হবে না, মাফ করে দেন দয়া করে। পরে তিনি আমাকে বলেন, ‘দেখ, ভালো করে আমাকে চিনে রাখ, আর কোনো দিন এমন ভুল হলে ক্ষমা নেই তোর।’ পরে ছেড়ে দিলে চলে আসি।

উপজেলার রামপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইভা ফিলিং স্টেশনের স্বত্বাধিকারী ইদ্রিস আলী জাগো নিউজকে বলেন, এমপি সাহেবের ছেলে এসে হেলমেট ছাড়া তেল চাইলে কর্মচারী আকাশ আহমেদ তেল দিতে অস্বীকৃতি জানায়। এ সময় এমপির ছেলে সাদমান বলেন, ‘এমপির ছেলের জন্য কোনো আইন লাগে না।’ এসব নিয়ে বাগবিতণ্ডার পর সাদমান ক্ষিপ্ত হয়ে চলে যান। কিছুক্ষণ পর ১০-১২ জন এসে কর্মচারী আকাশকে উঠিয়ে নিতে চাইলে তখন আমারও মনে ভয় ঢুকে যায়। তাদের বলে আমার মোটরসাইকেলে করেই আকাশকে নিয়ে যাই। পরে আকাশকে তারা অন্য একটি কক্ষে নিয়ে যায়। সেখানে কী হয়েছে, আমার জানা নেই।

ইদ্রিস আলী আরও বলেন, ওই ঘটনার পর ত্রিশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমাদের ডেকে নিয়ে যান। এমপির ছেলে ছোট মানুষ বুঝতে পারে নাই বলে তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন।

তেল না পেয়ে পাম্পের কর্মচারীকে তুলে নিয়ে গেলেন এমপির ছেলে

তিনি আরও বলেন, বিষয়টি মীমাংসা হয়ে গেছে। তাই এ বিষয়ে আর কিছু বলতে চাই না।

এ বিষয়ে ত্রিশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামাল হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, এমপি সাহেবের ছেলে পাম্পে তেল নিতে গিয়ে না পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন। এই ঘটনায় কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। তবে ওই কর্মচারীকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল কি না বিষয়টি আমার জানা নেই।

কর্মচারীকে উঠিয়ে নেওয়ার বিষয়ে সাদমান সামিনের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

তবে সাদমান সামিনের বাবা সংসদ সদস্য এবিএম আনিছুজ্জামানের নম্বরে কল দিলে মেহেদি হাসান রবিন নামে একজন ফোন ধরে বলেন, এমপি সাহেব ওয়াশরুমে গেছেন। ১০ মিনিট পরে ফোন দেন বলে লাইন কেটে দেন। পরে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

এর আগে ১০ মার্চ কলেজছাত্র ফয়সাল আহমেদকে উঠিয়ে বাসায় নিয়ে নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে এমপি এ বি এম আনিছুজ্জামান ও তার ছেলে সাদমান সামিনের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন কলেজছাত্রের পরিবার।

মঞ্জুরুল ইসলাম/এফএ/এএসএম

Read Entire Article