হার-জিত খেলার অপরিহার্য অংশ। একদল জিতবে, অন্য দল হারবে সেটাই খেলার সহজাত ধর্ম; কিন্তু কিছুকিছু হার আছে যা মেনে নেয়া কঠিন। গত ৪৮ ঘণ্টা ভারত ও পাকিস্তানের সাথে ঠিক তেমন দুটি হারের তেতো স্বাদ পেয়েছে বাংলাদেশ।
২৫ সেপ্টেম্বর দুবাইতে অভিষেক শর্মা, শুভমান গিল, সুরিয়া কুমার যাদব, সাঞ্জু স্যামসন, তিলক ভার্মা, হার্দিক পান্ডিয়ার গড়া ভারতের সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপকে ১৬৮ রানে আটকে রেখেও জিততে পারেনি। সেই পরাজয়ের ধাক্কা সামলে উঠতে না উঠতে গতকাল ২৫ সেপ্টেম্বর রাতে একই শহরের একই মাঠে পাকিস্তানকে মাত্র ১৩৫ বেঁধে ফেলেও পারেনি বাংলাদেশ।
১১ রানের হার প্রতিটি বাংলাদেশ সমর্থকের মনোকষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। উইকেট বোলিং সহায়ক হলে একটা কথা ছিল। তা ছিল না মোটেই। এমন নয় শাহিন শাহ আফ্রিদি আর হারিস রউফের বল প্রচন্ড গতি, বাড়তি বাউন্স ও সুইং করেছে। খেলাই যাচ্ছিল না। রীতিমত আনপ্লেয়েবল ছিলেন ওই দুই জোরে বল করা বোলার। তার সাথে অফস্পিনার সাইম আইয়ুব আর বাঁ-হাতি স্পিনার মোহাম্মদ নওয়াজের বলেও আহামরি কিছু ছিল না; কিন্তু তারপরও বাংলাদেশের ইনিংস শেষ হয়েছে ১২৪ রানে। ১১ রানে পরাজয়ের চেয়ে বাংলাদেশের ব্যাটিং অ্যাপ্রোচ নিয়ে কথা হচ্ছে বেশি।
বোদ্ধা, বিশ্লেষক থেকে শুরু করে গলি ও পাড়ার অবুঝ কিশোরও মানছে বাংলাদেশের ব্যাটাররা অহেতুক তেড়েফুঁড়ে ব্যাট চালিয়েছে। ওভারপিছু লক্ষ্য ছিল ৬.৮ রান। চার-ছক্কায় না ঝুকে সিঙ্গেলস-ডাবলস আর একটি বাউন্ডারিই ছিল যথেষ্ঠ। তা করতে অযথা ও অপ্রয়োজনে ঝুঁকিপূর্ণ শটস খেলার মোটেই দরকার ছিল না। ঠান্ডা মাথায় হাতে উইকেট রেখে ক্রিকেটীয় শটস খেললেই ওভার পিছু লক্ষ্যমাত্রা ছোঁয়া সম্ভব ছিল।
কিন্তু তা না করে বাংলাদেশের ব্যাটাররা একদম প্রথম থেকে মেরে খেলতে গেলেন। হাত খুলে খেলা, চালিয়ে খেলা আর বেপরোয়া উইলোবাজি বলতে যা বোঝায় পারভেজ ইমন, তাওহিদ হৃদয়, শামীম পাটোয়ারী, জাকের আলী অনিক, নুরুল হাসান সোহান আর শেখ মেহেদীরা সেই কাজটিই করতে গেছেন। আর তার পরিণতি হলো করুন।
আর তাই ৬৩ রানে ইনিংসের অর্ধেক আর ৯৭ রানে ৮ উইকেট খোয়া যায়। এর মধ্যে পারভেজ ইমন, তাওহিদ হৃদয়, শেখ মেহেদী, নুরুল হাসান সোহান আর জাকের আলী অনিকের অস্থির, অস্থিতিশীল ব্যাট চালনা, অযথা তড়িঘড়ি করে ভাল বোলারের ভুল ডেলিভারি মারতে গিয়ে আউট হওয়াটা অনেক দৃষ্টিকটু ছিল।
যা দেখে তাদের ভক্ত ও সমর্থকরাও চরম হতাশ। বাংলাদেশের ব্যাটারদের বলগাহীন ও অনিয়ন্ত্রীত ব্যাট চালনায় যারপরনাই হতাশ মোহাম্মদ আশরাফুলও। দেশের ক্রিকেটের সব সময়ের অন্যতম সেরা উইলোবাজ আশরাফুল শনিবার বিকেলে জাগো নিউজের সাথে আলাপে বলেন, ‘আমরা খুব বাজে ব্যাটিং করেছি। টার্গেট মোটেই বড় ছিল না। জিততে করতে হতো ১৩৬। ওই সামান্য কটা রান করতে যেভাবে ব্যাটিং করা উচিৎ ছিল, যতটা নিয়ন্ত্রন রেখে ব্যাট চালানো উচিৎ ছিল, আমাদের ব্যাটসম্যানরা একদমই তা পারেনি। ওভার পিছু লক্ষ্যমাত্রা ছিল একদম নাগালের মধ্যে। অহেতুক ঝুঁকি নিয়ে তেড়েফুঁড়ে এদিক ওদিক তুলে না মেরে - প্রপার ক্রিকেট শট খেললেই হয়ে যেত। তাতে করে ব্যাটিংয়ের লাগামটা নিজেদের নিয়ন্ত্রনে থাকতো; কিন্তু তা না করে আমাদের ফ্রন্টলাইন ও মিডল অর্ডার ব্যাটারদের প্রায় সবাই চার্জে গিয়ে বিপদ ডেকে এনেছে।’
‘পারভেজ ইমন প্রথম আউট হলো চার্জ করতে গিয়ে। তাওহিদ হৃদয়ও তাই করেছে। সবার জানা শাহিন শাহ আফ্রিদিকে পাকিস্তানের এক নম্বর পেস বোলার। প্রতিপক্ষ শিবিরে থ্রেট জানানোর মতই বোলার। তাকে দেখে না খেলে প্রথম ওভার থেকেই কেন আমরা মারতে গেলাম, বোধোগম্য হয় না আমার। তাওহিদ হৃদয় ঐ শটটা প্রয়োজন ছিলনা। ক্রিকেটীয় শট খেলে আউট হলে তাও মানা যেত। সোজা মিড অফ মিড অনের ওপর দিয়ে মারতো। তাহলে কথা ছিল। কিন্তু হৃদয় মারতে গেল মিড উইকেটের ওপর দিয়ে। সব গুলি আউটই যদি দেখি কোন নিয়ন্ত্রন ছিলনা। সোহানের ব্যাটিং যদি দেখি কোন নিয়ন্ত্রন ছিলনা শটের ওপর।’
পারভেজ ইমনে ও হৃদয়ের পাশাপাশি নুরুল হাসান সোহান ও জাকের আলী অনিকের ব্যাট চালনাও আশরাফুলকে রিতিমত অবাক করেছে। তাদের ব্যাটিং দেখে রীতিমত লজ্জা পেয়েছে, এমন জানিয়ে আশরাফুল বলে ওঠেন, জাকের আলী আর সোহান যে বল গুলো খেলেছে, সোহান ২১ আর জাকের আলী অনিক ১০ বল, দুজন মিলে ৩০ বলে রান করেছে ২০। তারা কি খেলেছে? তা যদি লক্ষ্য করেন, তাহলে হতাশায় ডুববেন। তারা আসলে কি করতে চেয়েছে? তা বোঝা যায়নি। কখনো অন সাইডে আবার কোন সময় অফ সাইডে সরে গেছে। এক রকম হাঁটাহাটি করেছে। ক্রিকেটে এত হাঁটাহাটি করে ব্যাট চালনার দরকার পড়ে না। তাতে শরীরের ভারসাম্য থাকে না। বরং শরীরের ব্যালেন্স ঠিক রেখে খেললেই রান করা যায়। আর সবচেয়ে বড় কথা হলো টার্গেট এত ছোট ছিল যে এই ম্যাচে অত অ্যাগ্রেসিভ ব্যাটিং করার কোনই দরকার ছিল না।’
এআরবি/আইএইচএস